নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৪৮ এএম, ০৩ নভেম্বর, ২০১৮
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল এবং বিকল্পধারা নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের মধ্যে গতকাল শুক্রবার গণভবনে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপের আগের দিন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সরকারের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয় যার মূল দল ছিল বিএনপি। এই দুই সংলাপের পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপিকে এক প্রকার চাপে ফেলে দিয়েছে বিকল্পধারা।
সংলাপের পর জানা গেছে, অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের দাবি থেকে সরে এসেছে। তারা মনে করছে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়াটাই বড় কথা।
নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থেকে সরে এসে যুক্তফ্রন্ট বিকল্প ব্যবস্থার প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে তাঁরা বর্তমান সরকারের অধীনেও নির্বাচন সম্ভব বলে মন্তব্য করেছে। এর ফলে তিনটি প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয়েছে যার কারণে বিএনপি চাপে পড়তে যাচ্ছে।
বিকল্পধারা ও যুক্তফ্রন্টের মতে, যদি নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন এবং স্বতন্ত্রভাবে কাজ করতে দেওয়া হয় তাহলে বর্তমান সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। যুক্তফ্রন্টের এই অবস্থানের প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এতে কার্যত বিএনপির ওপরই চাপ সৃষ্টি হবে।
পরপর দুইদিন সংলাপের পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা গত নির্বাচনের উদাহরণ টেনেছেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে একমাত্র আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ছাড়া প্রায় সব দলই নির্বাচন বর্জনের পথে হেঁটেছিল। ওই নির্বাচনে যে দলগুলো অংশগ্রহণ করেনি তার মধ্যে বিকল্পধারা ছিল অন্যতম। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বারবার অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। আর দুইটি সংলাপের দ্বিতীয় দিনেই বিকল্পধারার নেতৃতাধীন ৮টি দল নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। যেহেতু নির্বাচনের স্বাভাবিক রীতি হচ্ছে, একাধিক দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়, তাই এই নির্বাচন যে একতরফা হচ্ছে না সে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে। অর্থ্যাৎ যুক্তফ্রন্টের দলগুলো বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এখন যদি বিএনপি নির্বাচন থেকে সরেও দাঁড়ায় তাহলেও একাদশ নির্বাচন গত নির্বাচনের মতো একতরফা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই বিএনপিকে পরিস্থিতি বিবেচনায় বেশ ভেবেচিন্তেই নির্বাচনে আসা, না আসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
যুক্তফ্রন্ট ও সরকারের মধ্যকার সংলাপের পর আরেকটি বিষয়ে বিএনপি কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। বিএনপি সবসময় বলে এসেছে, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি বিএনপির একার দাবি না। তাদের ভাষ্যমতে, এই দাবি সকল রাজনৈতিক দলের দাবি যে ব্যাপারে জাতীয় ঐক্যমত হয়েছে। কিন্তু বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের ৮টি দল গতকালকের সংলাপে গিয়ে বলেছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে জাতীয় দাবি হিসেবে আখ্যায়িত করে দেওয়া বিএনপির বক্তব্য আর ধোপে টিকছে না। অর্থ্যাৎ যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে সরকারের সংলাপের পর বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটিও দুর্বল হয়ে পড়ল আর এই দাবি বিএনপির একক দাবি হিসেবেই স্পষ্টত প্রতীয়মান হলো।
যুক্তফ্রন্ট ও আওয়ামী লীগের মধ্যকার সংলাপ থেকে সিদ্ধান্তগুলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষেই গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন বিষয়ে বিএনপি কী সিদ্ধান্ত নেয় তা দেখার অপেক্ষায় রাজনৈতিক মহল।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন