নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ০৪ নভেম্বর, ২০১৮
আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রথম দফা সংলাপে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ ব্যক্তির নাম বলতে পারেনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল শনিবার বৈঠকে কে হতে পারেন নির্বাচনকালীন সরকার প্রধান তা নিয়ে আলোচনা হয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের মধ্যে। দ্বিতীয় দফা সংলাপে ঐক্য ফ্রন্ট, সহায়ক সরকার বা নির্বাচনকালীন সরকার প্রধানের নাম জানাতে চায়। কিন্তু এনিয়ে আলোচনায় প্রথম দিন একমত হতে পারেননি ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গতরাতে সহায়ক সরকারের নাম নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে ড. মুহম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু জেএসডির আ. স. ম. আবদুর রব বলেছেন, আওয়ামী লীগ তাঁর নাম কখনোই মানবে না। আওয়ামী লীগ তাঁর প্রকাশ্যেই সমালোচনা করে। তিনি ‘সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য’ কথাটির ওপর জোর দেন। ড. কামাল হোসেন সাবেক বিচারপতি ওয়াহাব মিয়ার নাম প্রস্তাব করেন। কিন্তু বিএনপি তাঁর ব্যাপারে আপত্তি তোলে। তাঁর নেতৃত্বে অনেকগুলো বিতর্কিত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও বিএনপি মন্তব্য করে। তাছাড়া সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে সরানোর ক্ষেত্রে সরকার তাঁকে ব্যবহার করেছে বলেও বিএনপির একজন অভিযোগ উত্থাপন করেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কেউ কেউ স্যার ফজলে হাসান আবেদের নাম প্রস্তাব করেন। কিন্তু ড. কামাল হোসেন নিজেই ঐ বৈঠকে জানান যে, ফজলে হাসান আবেদ কোনো ভাবেই এর সঙ্গে যুক্ত হবেন না। বৈঠকে সাবেক ক্যাবিনেট সচিব ড. আকবর আলী খানের নামও আলোচনা হয়। সেখানেও একজন জানান, তিনি এখন বেশ অসুস্থ। ড. কামাল হোসেন সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে কাউকে খুঁজে নেওয়ার পরামর্শ দেন। এক্ষেত্রে তিনি রাষ্ট্রপতি, স্পিকার অথবা বর্তমান অর্থমন্ত্রীকে বিবেচনায় নিতে বলেন। কিন্তু বিএনপি রাষ্ট্রপতির ব্যাপারে আপত্তি না করলেও অন্য দুজনের ব্যাপারে তীব্র আপত্তি জানায়। বিএনপি মহাসচিব অর্থমন্ত্রীকে একজন বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে মন্তব্য করেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সভায় প্রশ্ন ওঠে, রাষ্ট্রপতি যদি নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হন, সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা কি হবে? সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন এর জবাবে বলেন, তাঁকে ‘দপ্তরবিহীন’ করা হলে তিনি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবেন। কিন্তু বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ ঐ বৈঠকেই এ নিয়ে আপত্তি করে বলেন, দপ্তর না থাকলেও বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোতে প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া দুটি বিষয় ছাড়া কোনো বিষয়ই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি নিয়ে ফ্রন্টভুক্ত দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবে। সরকারের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠকের আগে এ নিয়ে তাঁরা বৈঠক করবে এবং একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করবে।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়া বহিষ্কার বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন