নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ০৯ নভেম্বর, ২০১৮
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আজ সকাল ১০টা থেকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন ফর্ম বিক্রি শুরু করেছে। গতকাল নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই আওয়ামী লীগের কাছে স্পষ্ট বার্তা এসেছে, বিএনপি এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। সেই বিবেচনা থেকে আওয়ামী লীগ এবার মহাজোটগত হয়েই নির্বাচনে অংশ নেয়ার মহাপরিকল্পনা করছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনে অংশগ্রহনের জন্য আওয়ামী লীগ তিনটি পৃথক তালিকা তৈরি করেছিলো। প্রথম তালিকা সাজানো হয়েছিলো বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহন না করলে তাঁর ওপর ভিত্তি করে, দ্বিতীয়টি সাজানো হয়েছিলো, যদি বিএনপি খন্ডিতভাবে অংশগ্রহন করে সেক্ষেত্রে আর তৃতীয় তালিকাটি সাজানো হয়েছিলো, যদি বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহন করে সেক্ষেত্রে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, তৃতীয় তালিকার ভিত্তিতেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন, ‘আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। মনোনয়ন ফর্ম বিক্রি শুরু হয়েছে। মনোনয়ন বোর্ডের সভার তারিখ আগামি কয়েকদিনের মধ্যেই নির্ধারণ করা হবে। মনোনয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমরা সর্বশেষ জরিপগুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছি। আমরা জানি যে, বিএনপি এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। আশা করছি যে, একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য যা যা করা দরকার সেটিই আমরা করবো।’
আওয়ামী লীগের বিশেষ সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ যে তৃতীয় তালিকা তৈরি করেছে, সে অনুযায়ীই মনোনয়ন গৃহীত হবে। বর্তমানে যেসব এমপি রয়েছেন, তাদের মধ্যে ১০৭ জন এমপি মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন। বিরোধী দলের জন্য ৭০টি আসন ছেড়ে দিয়ে ২৩০টি আসনে আওয়ামী লীগ একক প্রার্থী দেবে। ৭০টি আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টিকে ৪০টি এবং ১৪ দলসহ অন্যান্য শরিক দল গুলোকে বাকি ৩০টি আসন ছেড়ে দেওয়ার বিবেচনা করা হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘শরীক দলগুলোকে যে আসন ছেড়ে দেওয়া হবে, সে আসনে তাদের জেতার সম্ভাবনা বেশি। আমরা শুধুমাত্র দল বিবেচনা করে আসন ভাগাভাগি নীতিতে বিশ্বাস করি না। আমরা মনে করি, যেখানে যে যোগ্য, যার জেতার সম্ভাবনা যেখানে বেশি, সেখানে সেই প্রার্থীকেই আমরা মনোনয়ন দেব।’
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ৪টি কৌশল অবলম্বন করবে।
১. আওয়ামী লীগ প্রথমেই প্রার্থী মনোনয়ন করে ফেলবে। সেখানে যদি বিদ্রোহী প্রার্থীরা প্রতিযোগিতা করার জন্য মনোনয়ন ফর্ম জমা দেয় তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে বহিস্কারের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে আওয়ামী লীগ।
২. আওয়ামী লীগ শরীকদের জন্য যে আসনগুলো ছেড়ে দেবে, সে আসনে আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থীই মনোনয়ন ফর্ম নেওয়া বা জমা দিতে পারবে না। ঐ সব আসনে মনোনয়ন ফর্ম নেওয়া বা জমা দেওয়া হলে দলের কেন্দ্রীয় হাই কমান্ড কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৩. মনোনয়ন পত্রের ক্ষেত্রে দলের চূড়ান্ত নীতি নির্ধারনের ক্ষমতা থাকবে দলনেত্রী শেখ হাসিনার ওপর।
৪. সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের ওপর ১২টি জরিপ পরিচালনা করেছেন। ১২টি জরিপের ভিত্তিতে যে সব ব্যক্তিরা অধিক জনপ্রিয়, তাদেরকে মনোনয়নের কথাই বিবেচনা করেছেন।
তবে একাধিক সূত্র বলছে, এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু চমক থাকবে। খেলোয়ার, অভিনয় শিল্পীসহ সমাজের গুণীজন, জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বকে মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ। দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এবারের নির্বাচনে নড়াইলের একটি আসন থেকে ক্রিকেট তারকা মাশরাফি বিন মর্তুজার মনোনয়ন মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছে। এক সময়ের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শাবানা নির্বাচন করবেন বলে একটি সূত্র আভাস দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, শাকিব খানের নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সেটি এখনো চূড়ান্ত নয়। এছাড়াও তারকা জগতের অনেকেই নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে পারেন। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে সাবেক পুলিশের আইজিপি নুর মোহাম্মদের মনোনয়ন প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত মনোনয়ন পেতে পারেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ঢাকার একাধিক আসনে বিশিষ্ট শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের মনোনয়নের সম্ভাবনা রয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে সব কিছু চূড়ান্ত হবে মনোনয়ন বোর্ডের সভায়। আগামী ৪/৫ দিনের মধ্যেই মনোনয়ন বোর্ডের সভা শুরু হবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বাংলা ইনসাইডার/জেডআই
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।