নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১০ নভেম্বর, ২০১৮
প্রতিনিয়ত সংবাদমাধ্যমের হেডলাইনে আসেন। তাঁদের কথা কোট করে হয় সংবাদ। জাতীয় পর্যায়ের প্রভাবশালী বড় নেতা। কিন্তু নির্বাচনে তাঁদের নিজেদের আসনের কোনো হদিস নাই। তাঁদের নির্বাচনী আসন কোনটা তাঁরা নিজেরাও জানেন না। অনেক বড় প্রতাপশালী নেতা হলেও ভোটের মাঠে তাঁদের কোনো দাম নেই। তাঁদের নেই তেমন জনসম্পৃক্ততা। অনেকের নির্বাচনের রেকর্ড জামানত বাজেয়াপ্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাই, নির্বাচন এলেই জনসম্পৃক্ততাহীন এসব বড় নেতাদের কপালে ভাঁজ ধীর্ঘায়িত হয়।
জনসম্পৃক্ততাহীন বড় নেতাদের মধ্যে সবার প্রথমেই নাম আসে, বর্তমান সময়ে বহুল আলোচিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের। ড. কামাল সর্বশেষ নির্বাচন করেছিলেন রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে। সেই নির্বাচনে মোট প্রাপ্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগও জোটেনি তাঁর। তাই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল ড. কামালের। অনেক বড় নেতা হলেও ড. কামাল হোসেনের এখন পর্যন্ত তাঁর নিজের আসন বলতে কিছু নাই।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন বড় নেতা, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির তিনি কো-চেয়ারম্যান। তিনি সাবেক আমলা এইচ টি ইমাম। নির্বাচনের সবচেয়ে বড় দলের দণ্ডমুণ্ডের অন্যতম কর্তা তিনি। কিন্তু তাঁর কোনো এলাকা নাই। তিনি সিরাজগঞ্জের মানুষ হলেও সেখানে তাঁর কোনো নির্বাচনী আসন নেই। অন্য এলাকাতেও তাঁর কোনো খবর নেই।
বাম মোর্চার অন্যতম নেতা সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমও একজন জাতীয় পর্যায়ের বড় নেতা। তিনি একটাই জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন সাভার থেকে। সেই নির্বাচনে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল তাঁর। ভোটের মাঠে তিনিও এক উদ্বাস্তু। তাঁরও নিজস্ব কোনো নির্বাচনী আসন নাই।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা, বর্তমান সময়ে নানা কারণে আলোচিত, কথার মারপ্যাঁচে চ্যাম্পিয়ন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ডা. জাফরুল্লাহ না আছে ভোট, না আছে কোনো এলাকা, না আছে কোনো সমর্থক।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আরেক বড় নেতা, নারী সাংবাদিককে টকশোতে কটূক্তির করে বর্তমানে কারাগারে থাকা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। তিনি সর্বশেষ ১৯৭৩ সালে নির্বাচন করেছিলেন। এরপর তিনি একবার খন্দকার মোশতাকের পার্টিতে যান, একবার এই দলে যান তো আবার অন্য দলে যান। তাকে দেখে ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধি রাম সর্দার কথাটির যথার্থতা খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি একাই পার্টি, একাই সদস্য, একারই ভোট সবকিছু। ১৯৭৩ তিনি যে আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন, সেই আসনটি এখন তাঁর ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর দখলে। তাই ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন এখন নির্বাচনী এলাকাহীন এক বড় নেতা।
নির্বাচনের ডামাডোলে অনেক সক্রিয় আওয়ামী লীগের আরেক নেতা, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য নূহ আলম লেনিন। তিনি আগে ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টিতে। কমিউনিস্ট পার্টিতে থাকাকালীন তাঁর যে জনবিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছিল, সেই জনবিচ্ছিন্নতা এখনো কাটেনি। ভোটের মাঠে তাঁর কোনো কদর নাই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিলেন এক মুসলিম দেশের রাষ্ট্রদূত। তিনি নজরুল ইসলাম খান। কখনোও নির্বাচনে যাননি তিনি। তারপরেও নজরুল ইসলাম খান বিএনপির অনেক বড় নেতা। ভোটের মাঠে তাঁর কোনো এলাকা নেই।
আরেকজন বিএনপি নেতা, যিনি সারাক্ষণ বকবক করতেই থাকেন, সারাক্ষণ তাঁর বকবকানির কারণে মানুষ বিরক্ত ও অস্থির। তিনি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তাঁরও কোনো ভোট নাই, নির্বাচনী এলাকাও নাই।
রাজনীতি হচ্ছে গণ মানুষের জন্যে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের কাছে যাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে ভোট। একজন রাজনীতিবিদ তাঁর চিন্তা-ভাবনা, আদর্শ, কর্মপরিকল্পনা নিয়ে জনগণের কাছে যান। জনগণ যদি তাঁকে ম্যান্ডেট দেয়, তাহলেই তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসেন। এরপর তিনি নেতা বা মন্ত্রী হন। এরপর তিনি জনগণের কাছে যে অভিপ্রায় নিয়ে ভোট চেয়েছিলেন, সেই অভিপ্রায় বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেন। ক্ষমতায় গিয়ে রাজনীতিবিদ হিসেবে তাঁর স্বপ্নের বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেন। একজন রাজনীতিবিদের মূল জীবনী শক্তি হচ্ছে জনগণ। মাছ যেমন পানি ছাড়া বাঁচে না, তেমনি জনগণ ছাড়া কি রাজনীতিবিদ হওয়া যায়।
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে সামরিক তন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র এবং অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকার ফলে নতুন একটা প্রজাতি গড়ে উঠেছে, যারা মুখে সবসময় জনগণের কথা বলেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষার কথা বলেন, সবকিছুই জনগণের বলেন, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তাঁদের সঙ্গে জনগণের কোনো যোগাযোগ নেই। জনসম্পৃক্ততাহীন এই উদ্বাস্তু রাজনীতিবিদরা ভোট আসলেই করুণার পাত্র হয়ে যান। তখন এইসব উদ্বাস্তু রাজনীতিবিদদের কারও ছেড়ে দেওয়া আসন বা অন্যের আসন দেওয়া হয়। এইবার নির্বাচনে জনগণের সঙ্গে সম্পর্কহীন এইসব রাজনীতিবিদদের ভবিষ্যৎ কি সেটারই দেখার বিষয়।
বাংলা ইনসাইডার/আরকে/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন