নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:২৬ পিএম, ১২ নভেম্বর, ২০১৮
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে খেলা জমে উঠেছে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরে। শুধু নির্বাচন নিয়েই দলের মধ্যে তিনটি ধারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। গতকাল রোববার থেকে জাপার মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু হলেও নির্বাচনে অংশ নিতে জাতীয় পার্টির ভূমিকা নিয়ে শুরু হয়েছে ইঁদুর-বেড়াল খেলা। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ. এম. এরশাদের ভূমিকা নিয়ে খোদ দলের ভিতরেই চলছে নানামুখী কানাঘুষা। আর এদিকে, ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণে কোনো জোটে গেলে জাপা লাভবান হবে তা নিয়ে ‘টাগ অব ওয়্যার’ শুরু হয়েছে দুই কো-চেয়ারম্যানের মধ্যে। সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ যেকোনো মূল্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ থাকতে চান। আর অন্যদিকে এরশাদের ভাই দলের অন্যতম কো-চেয়ারম্যান জি. এম. কাদের আওয়ামী লীগের ব্যর্থতার দায়ভার জাপার ঘাড়ে না নিয়ে শরিক হতে চান বিএনপির সঙ্গে। জি. এম. কাদের দীর্ঘদিন যাবত ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। গতকাল রোববার জি. এম. কাদের এবং মির্জা ফখরুলের বৈঠক নিয়েও বেশ আলোচনা হয়েছে। তবে এনিয়ে জাপা নেতাদের মধ্যে রয়েছে সরব আলোচনা। তাদের দাবি কৌশলী এরশাদ নাকি নিজ থেকেই ভাইকে একদিকে-বউকে আরেকদিকে রেখেছেন। আর জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ নিজের লাভ-ক্ষতির হিসেবটা করেই নির্বাচনী মাঠে থাকবেন। দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার দলীয় চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন হলেও আওয়ামী জোটের প্রতি তাঁর রয়েছে অনীহা। দলের একাধিক নেতা জানান, বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে একটি বড় অংশ আওয়ামী লীগের জোটের প্রতি আস্থাশীল রয়েছে। এদের মধ্যে পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এলজিইডি প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙা, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চুন্নু, সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদসহ বেশ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং কয়েকজন সংসদ সদস্য। আর এরশাদের এরশাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে আছেন জি. এম. কাদের, মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুসহ বেশ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্য।
জাতীয় পার্টির একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলা ইনসাইডারকে জানান, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এরশাদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের একটি লকমা তাঁর গলায় ঝুঁলিয়ে দেওয়া হলেও সরকার এরশাদের প্রতি চরম অবহেলা করেছে বলে তাঁদের ধারণা। এরশাদের জীবদ্দশায় তাঁর স্ত্রীকে বিরোধী দলীয় নেতা বানানো নাকি এরশাদকে চরম অপমান করা। আর এসব বাস্তবতার কারণেই নাকি কৌশলী এরশাদ এবার ভেবে-চিন্তে পা ফেলবেন।
একাধিক নেতা জানান, দলের অভিমানী জি. এম. কাদের দীর্ঘদিন যাবতই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন সরকারের পকেট থেকে জাতীয় পার্টিকে বের করে আনতে। দলের নেতাদের মন্ত্রিত্ব ছাড়ার ব্যাপারেও নাকি তিনি ছিলেন আপোষহীন। কিন্তু সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের কারণেই নাকি জি. এম. কাদের সফল হতে পারেনি। তবে এসব নিয়েও দলের মধ্যে চরম মতবিরোধ রয়েছে। নেতাদের দাবি, বার বার জাতীয় পার্টি ভাঙনের মুখে পড়ার জন্য নাকি পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদ এককভাবেই দায়ী।
জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, এক সময় কাজী জাফর আহমেদকে রাখা হয়েছিল বিএনপির সাথে সুসম্পর্ক বুঝায় রাখার জন্য। এরশাদের নির্দেশমতো সেসময় কাজী জাফর সফলও হয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে এরশাদ আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করলে কাজী জাফরের সঙ্গে সে সমর্পকে ছেদ পড়ে। দলের নেতাদের বিশ্লেষণে জাপা চেয়ারম্যান এইচ. এম. এরশাদকে শেষ পর্যন্তও বোঝা মুস্কিল। তাঁর মতে, হাওয়া বুঝে চলা এইচ. এম. এরশাদ শেষ পর্যন্ত কোনো দাবার গুটিতে চাল দেন তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।