নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৪ নভেম্বর, ২০১৮
এক যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে বিএনপি। দীর্ঘ ১২ বছর পরে দলটি নির্বাচনে এসেছে। স্বাভাবিকভাবেই বিএনপির নেতাকর্মীরা আশা করেছিলেন, যাঁরা এই ১২ বছর ধরে বিভিন্ন সময় নানাভাবে ত্যাগ স্বীকার করেছেন দলের জন্য, নির্যাতিত হয়েছে, হামলা-মামলার- হয়রানির শিকার করেছেন, তাদেরকেই মনোনয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার এবং প্রাধান্য দেওয়া হবে। কিন্তু বিএনপির বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, বিএনপির মনোনয়ন চূড়ান্ত ক্ষমতা কারোর হাতেই নেই। মনোনয়নের সব ক্ষমতা তারেক জিয়া কুক্ষিগত করেছেন। তারেক জিয়া যে তালিকা তৈরি করেছেন, বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে, সেই তালিকাতেই দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।
তারেক জিয়ার করা তালিকায় বিএনপির দীর্ঘ দিনের ত্যাগী নেতা কর্মীদের নাম নাই। বরং এই তালিকায় স্থান পেয়েছে বড় বড় ব্যবসায়ীর নাম। তারেক জিয়ার তালিকায় বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীদের কোনো মূল্যায়ন করা হয় নাই। বরং, যারা বিত্তবান তাদেরকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। তারেক যে তালিকা করেছে সেই তালিকায় বিএনপির অনেক হেভিওয়েট নেতাও এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন বলেই জানা গেছে।
আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় বিএনপি এখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলের সঙ্গে জোট গঠন করার পর মনোনয়নের ক্ষেত্রে জোট ও শরিকদেরকে অগ্রাধিকার প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া দুজনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, ঐক্যের স্বার্থে বিএনপি নূন্যতম আসনে নির্বাচন করে জোটের শরিকদেরকে বেশি আসনে মনোনয়ন প্রদান করবেন। বিশেষ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে বিএনপি তাদের দলের অনুপাতে প্রাপ্যের বাইরে সুযোগ সুবিধা দেবে বলে জানা গেছে। এর ফলে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সময় যারা বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন, দলের জন্য নানা ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাঁরাই মনোনয়নের তালিকা থেকে বাদ পরছেন। আবার বিএনপির মধ্যে যারা সংস্কারপন্থী এবং বিদ্রোহী বলে পরিচিত ছিল তাঁরাও বর্তমান বিএনপিতে ঢুকে পড়েছে। তাদেরকেও মনোনয়ন দিতে হবে। এর ফলে তৃতীয় দফা বিএনপিতে কোণঠাসা হবেন দলটির ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং দুর্দিনের নেতারা।
বিএনপির বিভিন্ন সূত্রের প্রাপ্ত খবর থেকে জানা গেছে, তারেক জিয়া যে তালিকা প্রস্তুত করেছে, সেই তালিকায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর নাম নেই। নাম নাই জানার কারণে তিনি দলের মনোনয়নপত্রই কেনেন নাই। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মনোনয়নপত্র কিনলেও, তিনি তাঁর কেরানীগঞ্জের আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন কিনা সেই বিষয়ে যথেষ্ট অনিশ্চয়তা আছে। কারণ কেরানীগঞ্জের এই আসনটা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে দিতে হবে।
আবার ২০০৭ সালের পর ওয়ান ইলেভেনের সময় বিএনপির যারা বিভিন্ন সময় নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়েছে এমন অনেক বিএনপি নেতাই এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নের তালিকায় নাই।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিএনপির অনেক নির্বাচন করতে পারবে না। তাঁরা নির্বাচনের অযোগ্য হয়ে পড়েছেন, এই জন্য তাদেরকে মনোনয়নের তালিকার বাইরে রাখা হয় হয়েছে।’ তবে বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা যায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও বিএনপির অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত করা হতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। তাকে ২০০১ সালেও বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এবারও তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
গাজীপুরের সিটি নির্বাচনের সময় হাসান উদ্দিন সরকারকে বলা হয়েছিল, তিনি যদি পরাজিত হন, তাহলে তাকে বিএনপি থেকে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হবে। কিন্তু হাসান উদ্দিন সরকারকেও মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না বলে বিএনপির একাধিক সূত্রে নিশ্চিত করেছে। তারেক জিরার যে তালিকা সেই তালিকায় গাজীপুরের হাসান উদ্দিন সরকারের নাম নেই।
অন্যদিকে খুলনায় বিএনপির রাজনীতিতে যারা দীর্ঘ দিন থেকে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছেন তাদের নামও নাই তারেক জিয়ার করা তালিকায়। গত সিটি নির্বাচনে বিএনপি`র মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে এবারের সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মনোনয়নের তালিকায় তাঁর নামও নেই বলে একাধিক বিএনপির সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে চট্টগ্রামে বিএনপির মনোনয়নের সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করছে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। আমির খসরুর হস্তক্ষেপের কারণে আব্দুল্লাহ আল নোমানের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
নব্বই সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের অগ্রনায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব। তিনি এখন বিএনপির রাজনীতি করেন। বিএনপির রাজনীতিতে অনেকটাই কোণঠাসা তিনি। পাবনার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান হাবিবও এবারের দলরে মনোনয়ন পাবেন না বলেই বিএনপি সূত্রে জানা গেছে। আবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর বিএনপির (দক্ষিণ) সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। তিনিও বিএনপির রাজনীতি করতে গিয়ে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। তিনিও বিএনপির মনোনয়নের তালিকায় নেই বলে বিএনপি সূত্রে জানা যায়।
এছাড়াও তারেক জিয়ার সর্বশেষ করা তালিকায় রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ আসনগুলোতে শরিকদের এবং শরীকদের পরিচিতদেরকে যেমন, মোস্তফা মহসীন মন্টু, ড. কামাল হোসেন, মাহমুদুর রহমান মান্না, আ.স.ম. আব্দুর রবকে মনোনয়ন দিতে চায়। সেই কারণে রাজধানীতে যারা বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে ছিল তাঁরা মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন বলে জানা গেছে।
আবার সারাদেশে বিএনপির পকেট আসন বলে পরিচিত, যেমন নোয়াখালী, বগুড়া, লক্ষীপুরসহ আরও বেশ কিছু আসন আছে, এই আসনগুলোতে বিএনপির আগের প্রার্থীদেরকেও মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এই আসনগুলোতে এবার মনোনয়নে ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিদের দিকে মনযোগী হচ্ছে। এইসব আসন থেকে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা মনোনয়ন পাবেন বলে জানা গেছে।
দীর্ঘ দিনের ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন করে তারেক জিয়ার এই তালিকা অনুযায়ী বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তাহলে দলটির নানা সময়ের পরীক্ষিত এবং দুর্দিনের কাণ্ডারি এইসব নেতারা হতাশা থেকে বিএনপির রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয়ও হয়ে যেতে পারেন বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা।
বাংলা ইনসাইডার/আরকে/জেডএ
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়ার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তারেক জিয়া তার পছন্দের ব্যক্তিদেরকে দলে রাখছেন। অপছন্দের ব্যক্তিদেরকে দল থেকে বের করে দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে এবং এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা দলের ভিতরে চলছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং কোন্দল।
সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন নির্বাচিত হয়েছিলেন। দল তাকে আদেশ করেছিল দায়িত্ব গ্রহণ না করার জন্য। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির পদটি গ্রহণ করেন। আর তার এই পদ গ্রহণের কারণে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম তাকে অব্যাহতি দিয়েছিল। কিন্তু এই অব্যাহতি শেষ পর্যন্ত টেকেনি। এখন তাকে দলে রাখার সিদ্ধান্ত যেমন নেওয়া হয়েছে, তেমনই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তারেক জিয়ার এই সিদ্ধান্তে বিএনপির আইনজীবীদের একাংশ যারা মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিরুদ্ধে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে। বিশেষ করে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আলীসহ সিনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, তারেক জিয়ার নির্দেশেই তারা খোকনের ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আবার তারেক জিয়াই তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেন। মাঝখান থেকে তারেক জিয়া তাদেরকে অসম্মান করবেন বলেও এই সিনিয়র আইনজীবী মনে করেন।
তারেক জিয়ার পরামর্শেই তারা মাহবুব উদ্দিন খোকনকে দায়িত্ব না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারেক জিয়াই এখন মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঙ্গে কথা বলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব পদে যেমন আছেন, তেমনই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদেও বহাল থাকছেন।
বিএনপির মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে মাহবুব উদ্দিন খোকন যদি নির্বাচন করে এবং জিতে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে তাহলে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীরা কী দোষ করল? বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত হল বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। আর এই ধারাবাহিকতায় বিএনপির বিভিন্ন পেশাজীবীদের নির্বাচনও বর্জন করছে। এর আগে বিএনপি নিয়ন্ত্রিত ড্যাব চিকিৎসকদের বিএমএ নির্বাচনও বর্জন করেছিল।
প্রকৌশলীদের নির্বাচনেও বিএনপি সরে গিয়েছিল। আর এরকম একটি পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কেন বিএনপি অংশগ্রহণ করল? সেটি যেমন একটি বড় প্রশ্ন, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হল যে- একই সিদ্ধান্ত একেক জনের ব্যাপারে এক রকম হবে কেন? এ নিয়ে বিএনপির নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন?
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ দলের কিছু বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদেরকে বলেছেন, এই সমস্ত কীভাবে হচ্ছে আমি জানি না। আপনাদের যদি কোনও কিছু বলার থাকে আপনারা লন্ডনে যোগাযোগ করেন। এখন বিএনপিতে কেউ দায় নিতে চাচ্ছে না। কেউ জানছেও না যে কাকে কখন কীভাবে বহিষ্কার করা হচ্ছে। যার ফলে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে দলটির মধ্যে।
উপজেলা নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করেছেন সে রকম ৭৩ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, উপজেলা নির্বাচন বা স্থানীয় সরকার নির্বাচন একটি নির্দলীয় ধরনের নির্বাচন। এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক তারা ব্যবহার করবে না।
অনেক বিএনপি নেতা মনে করেন যে, দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তটাই সঠিক ছিল। কিন্তু কেউ যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে সেটি তার নিজস্ব ব্যাপার। এ জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা বাঞ্ছনীয় নয় বলেই বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা মনে করেন। আর একারণেই বিএনপির সব নেতারাই হাল ছেড়ে দিয়েছেন এবং তারা এখন তিক্ত-বিরক্তও বটে।
বিএনপি রাজনীতি মির্জা ফখরুল তারেক জিয়া ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির সভা উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়ার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তারেক জিয়া তার পছন্দের ব্যক্তিদেরকে দলে রাখছেন। অপছন্দের ব্যক্তিদেরকে দল থেকে বের করে দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে এবং এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা দলের ভিতরে চলছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং কোন্দল।