নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২১ নভেম্বর, ২০১৮
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ধানের শীষের পক্ষে জোয়ার উঠেছে।’ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই বিএনপির নেতাদের বক্তব্য অনেকটা এমনই। নেতৃবৃন্দরা বলছেন, ‘এবারের নির্বাচন বিএনপির জন্যে একটা সুবর্ণ সুযোগ। দেশের জনগণ ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্যে মুখিয়ে হয়ে আছে।’ কিন্তু জনগণ যতই মুখিয়ে থাকুক ভোট চাওয়ার জন্যে জনগণের কাছে যেতে হবে এবং জনগণের কাছে সুনির্দিষ্ট কিছু বক্তব্য তুলে ধরে ভোট চাইতে হবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জনগণের কাছে কি বক্তব্য নিয়ে যাবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল এবং সাধারণ মানুষের ব্যাপক কৌতূহল আছে। তিন বছর আগে বিএনপি বলেছিল তারা সহায়ক সরকারের রূপরেখা প্রদান করবে। তবে সেই রূপরেখা আলোর মুখ দেখেনি। সে রূপরেখা ছাড়াই বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহার সম্পর্কে এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক সচেতন মহল জানে না। তারপরও অনুমান করা যাচ্ছে যে, বিএনপি কিছু মুখরোচক বক্তব্য এবং সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে ভোটারদের কাছে যাবে।
বিএনপি আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ৫টি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে ভোটের মাঠে নির্বাচনী প্রচারণা চালাবে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। বিষয়গুলো হলো:
১. খালেদা জিয়ার মুক্তি: বিএনপির নির্বাচনী মাঠে যে কথাগুলো তুলে ধরবে জনগণের কাছে তার মধ্যে অন্যতম প্রধান এবং প্রথম ইস্যু হলো বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। বিএনপি কোনো রাখঢাক ছাড়াই বলেছে, তারা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে। আপনার একটি ভোটই, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারে, এই শ্লোগানকেই বিএনপি ভোটের মাঠে জনপ্রিয় করতে চায়। এই নির্বাচনে কোন আসনে কে প্রার্থী, সেদিকে গুরুত্ব দেওয়ার থেকে বিএনপি এই নির্বাচনকে গণভোটে রূপান্তরিত করতে চায়। যে গণভোটে বিএনপি জয়যুক্ত হবে।
২. বর্তমান সরকারের দুর্নীতি: বিএনপির এবারের নির্বাচনের মাঠে দ্বিতীয় ইস্যু হচ্ছে ক্ষমতাসীন সরকারের দুর্নীতি এবং অনিয়ম। ভোটের মাঠে প্রচারণায় এবং ভোট চাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করাই হবে বিএনপির অন্যতম একটি কৌশল। প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করতে গিয়ে বিএনপি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ, সন্ত্রাস এবং অনিয়মের অভিযোগগুলো তুলে ধরবে। বিএনপির একটি নির্বাচনী সেল এ বিষয়ে কাজ করছে বলে জানা গেছে। বিগত ১০ বছরে প্রধান প্রধান দুর্নীতি, বিশেষ করে ব্যাংক খাতে যে দুর্নীতিগুলো হয়েছে এবং গণমাধ্যমে ব্যাংকের দুর্নীতির যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, তার তথ্য এবং উপাত্ত সংগ্রহ করছে বিএনপি। ব্যাংকের দুর্নীতিগুলো বিষয়ে ভোটের মাঠে জনগণের কাছে তুলে ধরে সরকারকে নাজেহাল করার চেষ্টা করবে তারা।
৩. গুম, খুনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন: গত পাঁচ বছর ধরেই বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, এই সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, গুম খুনের মাধ্যমে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর দমন পীড়ন চালিয়েছে। শুধু দেশেই নয় তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিভিন্ন লবিষ্ট ফার্ম নিয়োগ দিয়েছিল এবং তাদের দিয়ে দেশে-বিদেশে সরকার বিরোধী নানা প্রচারণায় নেমেছিল। ভোটের মাঠে বিএনপি গুম, খুনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টিকে অন্যতম ইস্যু করে প্রচারণা চালাবে। বিশেষ করে যে সমস্ত অঞ্চলে বিএনপির নেতাকর্মীরা নিখোঁজ হয়েছেন, সেই সমস্ত এলাকায় গুম এবং নিখোঁজের বিষয়টাকে সামনে নিয়ে আসবে। যেমন সিলেট অঞ্চলে ইলিয়াস আলীর ইস্যুই হবে তাদের মূল ইস্যু। এভাবে যেসব এলাকায় গুম, নিখোঁজ বা আটকের অভিযোগ রয়েছে, সেসব এলাকায় গুম, নিখোঁজ বা আটকের ইস্যুকে তুলে ধরে, জনগণের মাঝে আবেগ সৃষ্টি করে ভোটের মাঠ দখলের চেষ্টা করবে বিএনপি।
৪. প্রতিহিংসা নয়, নতুন প্রত্যয়: ভোটের মাঠে প্রতিহিংসা নয়, নতুন প্রত্যয় এই স্লোগানটি বিএনপি ইতিমধ্যে তৈরি করেছে। বিএনপি ভোটের মাঠে নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল হিসেবে এই স্লোগানটি ঠিক করেছে। কারণ নির্বাচন এলেই মানুষের মধ্যে একটা অজানা আতঙ্ক কাজ করে যে, নির্বাচনে যদি সরকার পরিবর্তন হয় তাহলে, একটি পক্ষের উপর আক্রমণ হবে। ২০০১ সালের অভিজ্ঞতা জনগণের কাছে প্রকট হয়ে ধরা পড়েছে। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন, দলীয় নেতাকর্মীদের উপর হত্যা-সন্ত্রাস এবং নির্বিচারে নির্যাতন ভুক্তভোগীদের কাছে বিভীষিকাময় স্মৃতি হয়ে জ্বলজ্বল করছে এখনো। বিএনপি তার নির্বাচনী প্রচারণায় এই বিষয়ে গুরুত্ব প্রধান করতে চায়। বিএনপি তার নির্বাচনী প্রচারণার বক্তব্যে বলবে, বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। বিএনপি যদি জয়যুক্ত হয় তাহলে তারা কোনো ধরনের প্রতিহিংসা করবে না। প্রতিহিংসা রাজনীতি করবে না বলতে তাঁরা প্রতিপক্ষ এবং সংখ্যালঘুদের বোঝাবে।
৫. সংখ্যালঘুদের দৃষ্টি আকর্ষণ: এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপি সংখ্যালঘুদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালাবে। বিএনপি মনে করে তাঁরা প্রতিবার নির্বাচনী প্রচারণায় সংখ্যালঘুদের কারণে পিছিয়ে পড়ে এবং আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হচ্ছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট। নির্বাচনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিএনপি নানা রকম প্রচারণার কৌশল গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সবচেয়ে নিরাপদে থাকবে বিএনপি ক্ষমতায় এলে। সংখ্যালঘুদের দেখভাল করা হবে এবং তাদের উপর কোনো ধরনের নিপীড়ন করা যাবে না।’ কারণ তথ্য ও উপাত্ত থেকে দেখা যাচ্ছে ৯১ সালের পর থেকে বিএনপি দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালে সংখ্যালঘুদের উপর সবচেয়ে বেশি নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না এই অঙ্গীকার করে তাঁরা ভোটের মাঠে জনগণের কাছে ভোট চাইবে বলে একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বাংলা ইনসাইডার/আরকে/জেডএ
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।