নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২২ নভেম্বর, ২০১৮
বিএনপির পরীক্ষিত, পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদেরা নির্বাচন ঘিরে হঠাৎ করেই রাজনীতিতে তারেক জিয়ার সরব উপস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। এই নেতাদের মতে, এবারের নির্বাচনে বিএনপির যে জোর সম্ভাবনা ছিল, তা নষ্ট করে ফেলার জন্য তারেকই যথেষ্ট। নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণার পরপরই অনেক রাজনীতিবিদকে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু তারেক জিয়ার সরব উপস্থিতির কারণে তা ভেস্তে যেতে বসেছে বসেছে।
বিএনপির একীভূত প্রক্রিয়ায় শুরুতেই ছিলেন ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি, অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের শেষ মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে যোগাযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় তারেক জিয়া থাকবেন না। আমরা সবাই মিলেই পুরো বিষয়টি দেখব। তখন সাদেক হোসেন খোকা বলেছিলেন, আগে দেখি, আপনারা কতদূর কী করতে পারেন। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) সাদেক হোসেন খোকা ফোন করেছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। ফোনে খোকা বলেন, সেই তারেকের হাত থেকে তো আপনারা মুক্তি পেলেন না।
বিএনপির এই প্রভাবশালী নেতার মতে, শুধু দেশকেই জিম্মি করেনি তারেক, জিম্মি করেছে বিএনপিকেও। নির্বাচনে বিএনপির যে সম্ভাবনা ছিল, তারেক জিয়ার কারণে নষ্ট হয়ে গেল।
সাদেক হোসেন খোকা মনে করেন, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় থাকার কারণে মূলত তিনটি সমস্যা হবে। প্রথমত, নির্বাচনে অর্থ লেনদেন হবে। মনোনয়ন বাণিজ্য হবে। যে কারণে, যথাযথ ব্যক্তিরা নির্বাচনে মনোনয়ন পাবে না। দ্বিতীয়ত, তারেক জিয়ার উপস্থিতির কারণে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যাকফুটে চলে যাবে বিএনপি। আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলগুলো তারেক জিয়াকে আক্রমণ করেই বক্তব্য দেবে। স্বভাবতই বিএনপিকে চলে যেতে হবে রক্ষণাত্মক ভূমিকায়। তারেক জিয়ার সাফাই গাইতে গিয়েই প্রচারণায় পিছিয়ে পড়বে বিএনপি। তৃতীয় ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নির্বাচনে তারেক জিয়া থাকার কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিএনপির প্রতি কোনো সহানুভূতি দেখাবে না।
নির্বাচনের সময় বিএনপিতে তারেক জিয়ার উপস্থিতি নিয়ে সাদেক হোসেন খোকা যেমন নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন তেমনি মনোভাব পোষণ করেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মূখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী। বিএনপির একাধিক নেতা ও থিংক ট্যাংকের সঙ্গে আলাপকালে কামাল সিদ্দিকী এই সময় বিএনপিতে তারেক জিয়ার হঠাৎ অনুপ্রবেশে বিস্ময় প্রকাশ করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খানসহ কয়েকজন নেতাকে কামাল সিদ্দিকী বলেছেন, আপনাদের যতটুকু সম্ভাবনা ছিল, তারেকের কারণে তা নষ্ট হয়ে গেল। তিনি মনে করেন, তারেক জিয়া থাকলে আর যাই হোক ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র চাইবে না বিএনপি ক্ষমতায় আসুক। বরং বিএনপির ক্ষমতায় আসার ক্ষেত্রে যতরকম বাধা দেওয়া সম্ভব সেটাই করবে তারা।
শুধু সাদেক হোসেন খোকা ও ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকীই নন, বিএনপিতে যাঁরা তারেক বিরোধী হিসেবে পরিচিত, যাঁরা তারেক জিয়ার বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপকর্মের সাক্ষী, তাঁরা মনে করেন, বিএনপির সামনে সুবর্ণ সুযোগ দেখা দিলেও, তা হাতছাড়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তারেক জিয়া সাক্ষাৎকার নেওয়ায়, একমাত্র মাহমুদুর রহমান মান্না ছাড়া ঐক্যফ্রন্টের সব নেতাই হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মাধ্যমে বিএনপি যে সুন্দর সুযোগ তৈরি করেছিল, সেই সুযোগটা অকালেই ঝরে গেল।
বেগম খালেদা জিয়ার হাতেই সেনাপ্রধান নিযুক্ত হয়েছিলেন জেনারেল (অব.) মঈন ইউ. আহমেদ। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশে এসেছিল ওয়ান-ইলেভেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মঈন ইউ. আহমেদ মনে করেন, সংলাপের মধ্যে দিয়ে এবার রাজনীতি সুষ্ঠু ধারা সূচনা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে বিএনপিতে তারেকের অন্তর্ভুক্তির সঙ্গে সঙ্গেই সেই সুস্থ ধারার মৃত্যু ঘটল। তারেক কখনোই সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি করবে না। বরং, এই নির্বাচনকে একটি গোলযোগপূর্ণ সহিংসতার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে তারেক। ভোটকেন্দ্র দখলের নির্দেশের মধ্যে দিয়ে এই ধারার সূচনা হয়ে গেছে এরই মধ্যে। জেনারেল (অব.) মঈন ইউ. আহমেদের মতে, দেশের নির্বাচনে এমন অবস্থার মধ্যে দিয়ে সর্বোপরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিএনপি। তিনি মনে করেন, যদি তারেকের হাত থেকে মুক্ত না হতে পারে, তাহলে বিএনপি কখনোই ক্ষমতার যোগ্য একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেকে দাঁড় করাতে পারবে না।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।