নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:০০ পিএম, ২৩ নভেম্বর, ২০১৮
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আসন পুনর্বিন্যাস করে রাজধানীর মতিঝিল-রমনা-পল্টন থানা নিয়ে ঢাকা-৮ সংসদীয় আসনটি গঠন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয়, উচ্চ আদালত এবং মন্ত্রিপাড়া এই নির্বাচনী এলাকায় পড়ায় ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে বিবেচনা করা হয় ঢাকা- ৮ আসনকে। এই আসনে এবার মুখোমুখি হবেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সাংসদ মির্জা আব্বাস। রাশেদ খান মেনন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের ব্যানারে নির্বাচন করবেন।
সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী, ২ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯৩ জন ভোটার রয়েছে জাতীয় সংসদের ১৮১ নং আসনটিতে। এরাই এবার নির্ধারণ করবেন ১৪ দলের রাশেদ খান মেনন নাকি বিএনপির মির্জা আব্বাস এই এলাকার এমপি হবেন।
রাশেদ খান মেনন একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। ১৯৭৯ সালে তিনি সর্বপ্রথম জাতীয় সংসদের এমপি নির্বাচিত হন। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১-এর পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রাশেদ খান মেনন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবং ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-৮ নির্বাচনী এলাকা থেকে এমপি নির্বাচিত হন। পরপর দুবার সাংসদ থাকায় এলাকায় অনেক উন্নয়নের সুযোগ পেয়েছেন মেনন যা তাঁর জন্য ইতিবাচক হিসেবে ধরা হচ্ছে। আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকও করছেন তিনি। স্বাধীনতার আগে থেকেই রাজনীতি অঙ্গনে নিজের আলাদা একটি জায়গা করে নেওয়া মেনন আবার ক্ষমতায় আসতে আওয়ামী লীগের অন্যতম ভরসা।
এই আসনের বিএনপি প্রার্থী মির্জা আব্বাসও পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ। ঢাকা-৮ এর একটি বড় অংশ শাহজাহানপুরের স্থায়ী এই বাসিন্দার সাবেক নির্বাচনী এলাকা। মির্জা আব্বাস ১৯৯১ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো এখান থেকে (তৎকালীন ঢাকা-৬ আসন) এমপি নির্বাচিত হন। তবে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে হেরে যান তিনি। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মির্জা আব্বাস। অবশ্য সর্বশেষ দুটি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার সুযোগ হয়নি তাঁর। ২০০৮ এ কারাগারে থাকায় এবং ২০১৪ এর নির্বাচন বিএনপি বর্জন করায় দীর্ঘদিন সংসদ থেকে দূরে আছেন মির্জা আব্বাস। কিন্তু আবার সংসদে ফিরে আসতে চান তিনি। তৃণমূল থেকে উঠে আসা বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের এলাকায় জনপ্রিয়তা রয়েছে। মন্ত্রী-এমপি ও মেয়র থাকাকালে এলাকার উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সাধারণ মানুষও তাঁকে পছন্দ করেন। যে সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক না কেন, মির্জা আব্বাসের জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না বলে তাঁর কর্মী-সমর্থকদের বিশ্বাস।
জাতীয় রাজনীতির দুই হেভিওয়েট নেতা ঢাকা- ৮ আসনে মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। যিনিই শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হন না কেন, এই আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ভবিষ্যৎ বাণী করছেন দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন