নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ২৪ নভেম্বর, ২০১৮
গণভবন এখন যেন আওয়ামী লীগ তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বিচরণক্ষেত্র। হঠাৎ করেই যে কেউই গণভবন পা রাখলেই সেখানে জনসভা কিংবা কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে কিনা তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যাবেন। কিন্তু কোনো জনসভা কিংবা অনুষ্ঠান নয়, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যারা এবার মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন কিন্তু মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন, এমন অনেকেই ভিড় করেছেন গণভবনে। তাদের পদচারণায় মুখরিত এখন গণভবন। মনোনয়ন না পেয়ে অনেকেই আশাহত হলেও তাদের চাওয়া এখন একটাই, তাদের প্রাণের নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করা। এদিকে, শেখ হাসিনাও নিরাশ করছেন না তাদেরকে। বরং শত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি সময় দিচ্ছেন সকল মনোনয়ন বঞ্চিতদের। একটু পর পরই নেমে আসছেন তিনি, সেই সঙ্গে কুশলাদি বিনিময়সহ তাদের সকল বক্তব্য শুনছেন। মনোনয়ন বঞ্চিতদের সব কথা শোনার পর, আওয়ামী লীগ সভাপতি তাদের বলেন, ‘তোমাদের যদি এতই নির্বাচন করার শখ থাকে, তবে আমার আসনটিই ছেড়ে দিচ্ছি। আমার আসনেই নির্বাচন করো তোমরা।’
কথাটা শোনার পর পরই আওয়ামী লীগ তৃণমূলের যেসব নেতা-কর্মীরা অভিমান ও অভিযোগ নিয়ে গণভবনে এসেছিলেন মুহূর্তের মধ্যেই তাদের সব মান-অভিমান ভুলে যান। গিয়েছিলেন অভিমান নিয়ে কিন্তু ফেরেন প্রশান্তি নিয়ে।
মনোনয়ন বঞ্চিতদের মধ্যে দু’ধরনের নেতা-কর্মীরা ভিড় করছেন গণভবনে। একপক্ষ হচ্ছে আওয়ামী লীগের অনেক ত্যাগী, পরিশ্রমী ও পরীক্ষিত নেতা, যারা আশা করেছিলেন মনোনয়ন পাবেন এবার। এদের মধ্যে অনেকেই বর্তমান এমপি’র বিরুদ্ধে অভিযোগের ডালা নিয়ে এসেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত নিষ্ঠা ও ধৈর্য্যের সঙ্গে তাদের সকল অভিযোগ শোনেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে বলেন, এখন অভিযোগের সময় না। সময় এখন ঐক্যবদ্ধ ভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার। যদি আমরা এখন ঐক্যবদ্ধ না থাকি, তবে তা দলের জন্যই বিপজ্জনক হবে। আওয়ামী লীগের অনেকেই এবার মনোনয়নের প্রত্যাশা করেছিলেন। বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন। ২০০১ এর নির্বাচনে যারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সেই সঙ্গে নির্বাচনের পর যারা নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। এছাড়াও ১/১১ এর সময়ে যারা দলের জন্য কাজ করেছেন, আওয়ামী সভাপতির পক্ষে অবস্থান করেছিলেন কিন্তু গত ২০০৮ ও ২০১৪-এ মনোনয়ন পাননি, তারাই এবার মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী ছিলেন। এরাই মনোনয়ন পাবেন না এমন ধারণা থেকেই গণভবনে ভিড় করেছেন। গণভবনে ভিড় করা আরেকটি পক্ষ হচ্ছেন, যারা ২০০৮ কিংবা ২০১৪-তে এমপি ছিলেন কিন্তু কোনো কারণে এবার মনোনয়ন শঙ্কায় আছেন তারা। হয়তো জনমতের জরিপে পিছিয়ে থাকা কিংবা কিংবা শরিকদের আসন ছেড়ে দেওয়ার জন্যই মনোনয়ন পাচ্ছেন না তারা। বিগত সময়ের এসব এমপি’রাও ধরনা দিচ্ছেন গণভবনে। গত ৫ বছরে কিংবা ১০ বছরে এমপি থাকাকালীন নিজ নিজ এলাকাতে জনসাধারণের জন্য তারা কি কি কাজ করেছেন তার ফিরিস্তি তুলে ধরছেন প্রধানমন্ত্রীর সামনে। কিন্তু, মজার বিষয় হচ্ছে, তারা যখন তাদের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ২/৩ টির বর্ণনা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলছেন, সেটির সঙ্গে আরও ৩/৪ টির উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিষয়টি নিজেই যোগ করে দিচ্ছেন আওয়ামী সভাপতি। কোনো এমপি যখন বলছেন, আমি এমপি থাকাকালীন ঐ রাস্তা কিংবা ব্রিজটা করেছি, একথা শুনার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, তুমি তো ওখানে একটি স্কুলও করেছো, তোমার সময় ঐ মাদ্রাসাটা হয়েছে। বিষয়টা এমন যেন, ঐ এমপির এলাকার সকল বিষয়াদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার থেকে বেশিই জানেন। সবচেয়ে অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে, একটুও বিরক্তি নেই যেন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যেও। কারও প্রতি রুষ্ট কিংবা ক্ষুব্ধ হচ্ছেন না তিনি। বরং এতো কাজের চাপ ও ব্যস্ততার মাঝেও সময় নিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে তিনি তাদের কথা শুনছেন। শেষমেশ সকলকেই তিনি শুধু একটিই পরামর্শ দিচ্ছেন, ‘এখন কোন অভিমান, অভিযোগ কিংবা পাল্টা অভিযোগের সময় নয়। কোন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি এবার। প্রতীক একটাই, আর তা হচ্ছে নৌকা। তোমারা যদি আওয়ামী লীগের সত্যিকারের সমর্থক হও, যদি মন থেকেই দলকে ভালোবাসো, তবে সবাই নিজ নিজ এলাকাতে ফিরে যাও। ফিরে নৌকার জন্য কাজ করো। এরপরও যদি তোমাদের নির্বাচন করার খুব শখ থাকে, তাহলে আমি আমার আসনটি, গোপালগঞ্জ-৩ আসনটি ছেড়ে দিচ্ছি। তোমারা ওখানে যেয়ে নির্বাচন করো।’
এই সহানুভূতি ও ভালোবাসাকে একজন মা যেমন তার সন্তানকে লালন করে, ভালোবাসে; বড় বোন যেমন তার ছোট ভাইকে স্নেহ-আদর দিয়ে সান্ত্বনা দেয় তার সঙ্গেই তুলনা করা যেতে পারে। তবে প্রধানমন্ত্রী একটা ব্যাপার স্পষ্ট করে বলেছেন, শেষপর্যন্ত কেউ যদি দলের অবাধ্য হয়, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে কিংবা কেউ যদি দল থেকে মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করে তবে তিনি কঠোর হতে বাধ্য হবেন। এখনই কঠোর হচ্ছেন না তিনি, শুধুমাত্র সান্ত্বনা দিয়েই তাদেরকে বুঝাচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী সকল নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য এ বার্তাও পৌঁছে দেন যে, যদি কেউ দলের সিদ্ধান্ত মেনে না নেয়, তবে তার অত্যন্ত কঠিন শাস্তিই হবে। আবার যদি আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায়, তাহলে সবার ত্যাগ ও কষ্টের মূল্যায়ন করা হবে বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী সভাপতি।
বাংলা ইনসাইডার/বিকে/জেডএ
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।