নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২৬ নভেম্বর, ২০১৮
বিএনপি এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে নির্বাচন বানচালের নাশকতা এবং ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করছে বলে একাধিক গোয়েন্দা সূত্র পূর্বাভাস দিয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেষ মুহূর্তে বিএনপি নানা অজুহাতে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে যেতে পারে বা সর্বাত্মক চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা দিতে পারে।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, যাদেরকে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে তাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে যে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। দলের নির্দেশ পেলে সঙ্গে সঙ্গে মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষে সবচেয়ে বড় যুক্তি হচ্ছে যে যাদের মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে, তাদের সেই সঙ্গে মনোনয়ন প্রত্যাহারের ফরমে স্বাক্ষরও নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তার মানে দাঁড়ায়, বিএনপি যে কোনো সময়ে নির্বাচন থেকে সরে গেলেও যেন ঐ সমস্ত প্রার্থীরা স্বতন্ত্র বা অন্য কোনোভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারবে না।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই বিরামহীনভাবে নির্বাচনের যাবতীয় কার্যক্রমের ত্রুটিবিচ্যুতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট। অতিসম্প্রতি বিএনপির দ্বারা প্ররোচিত একজন আইনজীবী নির্বাচন নির্বাচন কমিশনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একটা রিট পিটিশনও দাখিল করেছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল বলছে যে, একটা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার জন্য যে প্রস্তুতি এবং যে ধরনের কর্মসূচি দরকার সেরকম কোনো কর্মসূচি বা প্রস্তুতি বিএনপির এখন পর্যন্ত নেই। বিএনপি শুধু দেখাতে চাচ্ছে যে, তারা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু তারা একটা পর্যায়ে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না হওয়া, তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এবং খালেদা জিয়াকে মনোনয়ন না দেওয়া ইত্যাদি ইস্যুতে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে গিয়ে সর্বাত্মক আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে।
গোয়েন্দা সংস্থা আরও বলছে, বিএনপি নির্বাচনে না গেলে নির্বাচনের মাত্র সপ্তাহখানেক আগে ২২ ডিসেম্বর থেকে একটি বড় ধরনের সহিংসতা এবং নাশকতার মাধ্যমে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করবে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে বিএনপি প্রথম থেকেই নির্বাচন বর্জন করেছিল এবং নির্বাচন প্রতিহত করার ডাক দিয়েছিল। সেই সময়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেছিলেন যে আন্দোলনটা দীর্ঘমেয়াদী করার কারণে বিএনপি সেখানে সফল হতে পারেনি। তাই এবার আগেভাগেই নির্বাচন বর্জন বা আন্দোলনের ডাক না দিয়ে কৌশলে এগোচ্ছে দলটি।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন