নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২৭ নভেম্বর, ২০১৮
কথা ছিল, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দল একসঙ্গে প্রার্থিতা দেবে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, ১৪ দল, জাতীয় পার্টি ও যুক্তফ্রন্ট মিলে একত্রে প্রার্থিতা দেবে। নির্বাচনের মাঠ যেন এ সিদ্ধান্তের উপরেই দু’টি শিবিরে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু নাটকীয় ভাবে নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিলের ঠিক আগের দিন থেকেই নানারকম মেরুকরণ দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট আলাদা প্রার্থিতা দিচ্ছে, গতকাল সোমবার থেকে ২০০ আসনের মনোনয়ন প্রাপ্তদের চিঠি দেওয়া শুরু করেছে জাতীয় পার্টি। এদিকে, আজ মঙ্গলবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তাদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে পৃথক পৃথকভাবে মনোনয়ন জমা দেবে তারা। রাজনৈতিক দলগুলোর এমন সিদ্ধান্ত আপাতদৃষ্টিতে কাকতালীয় মনে হলেও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, সবগুলো ঘটনাগুলো একই সূত্রে গাঁথা। কেননা যেদিনই এমন ঘটনা ঘটেছে সেদিনই বিএনপির ৫ নেতা-আমানউল্লাহ আমান, ওয়াদুদ ভুঁইয়া, মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব, মশিউর রহমান, ড. জাহিদ হোসেনের মনোনয়ন অযোগ্য করা হয়েছে। এরচেয়েও বিএনপির জন্য বড় ধাক্কা হচ্ছে, দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না এ বিষয়ে মোটামুটি নিশ্চিত দলটি। এ প্রেক্ষাপটেই রাজনীতির নতুন মেরুকরণ হয়েছে বলে জানা গেছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলরা মনে করছেন, এটা আওয়ামী লীগের একটি রাজনৈতিক কৌশল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো কোনো নির্বাচন যেন না হয় সে লক্ষ্যেই ভোটের মাঠ ফাঁকা রাখতে চায়না দলটি। এজন্য জাতীয় পার্টি আলাদা প্রার্থিতা দিচ্ছে, ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় প্রধান দল গণফোরাম আলাদা প্রার্থিতা দিচ্ছে, সেইসঙ্গে যুক্তফ্রন্টও আলাদা প্রার্থিতা দিচ্ছে।
এদিকে, আওয়ামী লীগের একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, তাদের কাছে এমন তথ্য আছে, বিএনপির অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতা নির্বাচনের মাঠ থেকে ছিটকে পড়ার কারণে, পাশাপাশি দলীয় চেয়ারপারসন বেগম জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতে পারায় এবারের নির্বাচন থেকেও সরে আসতে বিএনপির তৃণমূলের থেকে একটি বড় চাপ রয়েছে। বিএনপির শারীরিক ভাষাতেও নির্বাচনে তাদের আগ্রহ প্রকাশ পাচ্ছে না। শেষ মুহূর্ততেও নির্বাচনের তেমন কোন প্রস্তুতিই নেয়নি দলটি। এখনো বিএনপি থেকে নির্বাচনের মনোনীত প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকাতে ফিরে যাননি। এমনকি দলের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সংগঠিত করা, নির্বাচনী ইশতেহার তৈরিসহ নির্বাচনের যাবতীয় সকল খুঁটিনাটি প্রস্তুতিতে তেমন কোনো আগ্রহই নেই যেন দলটির মনোনীত প্রার্থীদের। সেইসঙ্গে, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও এমন প্রতিবেদন দিয়েছে যে, বিএনপি হয়তো এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন বর্জন করবে যার ফলে আবারও ২০১৪-এর মতো পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটবে। কিন্তু একথা সকলেই জানে ২০১৪ এর ৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছিল, তা শুধুমাত্র একবারই করা সম্ভব। এবার আর ঐ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না, কেননা এতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে চাপ আসবে। আওয়ামী লীগ এই বিষয়টা মাথায় রেখেই ঐক্যফ্রন্ট, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় পার্টির একটা সমঝোতা করেছে বলে একাধিক রাজনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই সমঝোতার অংশ হিসেবে শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে যায় তাহলে জাতীয় পার্টি, যুক্তফ্রন্ট এবং ঐক্যফ্রন্টের বাকি দলগুলো (মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ অন্যান্যরা) নির্বাচনের মাঠে থাকবে। নিজেদের মতো করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তারা। এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে নির্বাচন যে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে, সেই সঙ্গে ৫ জানুয়ারির আর পুনরাবৃত্তি হবে না তা স্পষ্টই।
গত কয়েকদিন ধরে কূটনৈতিক মহলেও যে তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তার একটি বড় কারণই হচ্ছে এই মেরুকরণ। গতকাল সোমবার অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাসায় একাধিক কূটনৈতিকরা বৈঠকে বসেছিলেন। বৈঠকে ঐসব কূটনীতিকরা তাদের আশঙ্কার কথা জানান যে, শেষ মুহূর্তে বিএনপি নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে যেতে পারে। তাহলে যুক্তফ্রন্ট, জাতীয় পার্টি ও ঐক্যফ্রন্টের বাকি দলগুলো ভোটের মাঠে উত্তাপ ছড়াবে, এরফলে নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। আন্তর্জাতিক মহল থেকে বারবারই সব দলের অংশগ্রহণমূলক ও একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ ভারত স্পষ্ট করেই বলেছে, কে অংশগ্রহণ করল, কে করল না তা বড় কথা না, নির্বাচনটা যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়।
তাহলে একথা বলাই যায়, শেষ মুহূর্তে বিএনপি যদি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়, কিন্তু বাকি দলগুলো যদি নির্বাচনের মাঠে থাকে শেষ পর্যন্ত তবে নির্বাচন আর যাই হোক, অন্তত নিষ্প্রাণ হবে না। দেশের বর্তমান রাজনীতির পরিস্থিতি সেই পথেই হাঁটছে কিনা, তা নিশ্চিত হতে আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
বাংলা ইনসাইডার/বিকে/জেডএ
মন্তব্য করুন
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে
মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী
লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয়
নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত
অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে
এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক
বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও
এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
শুধু তাই নয়, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়া প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আগামী দিনেও কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মূলত মন্ত্রী-এমপিসহ স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে উপজেলা নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতেই আওয়ামী লীগ এমন কৌশল নিয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড তাপদাহে ১৪ দলে স্বস্তির বৃষ্টি
জানা গেছে, এবারের উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে শুরু থেকেই
সচেষ্ট ছিল আওয়ামী লীগ। এ কারণেই দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দিয়ে সবার জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত
করা হয়। তা সত্ত্বেও বিএনপি-জামায়াতসহ অনেক দল নির্বাচনের বাইরে থাকায় শেষ পর্যন্ত
এই নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হবে—তা নিয়ে সংশয় ছিল। বিশেষ করে সরকারের মন্ত্রী, সংসদ
সদস্য কিংবা স্থানীয়ভাব প্রভাবশালী নেতাদের হস্তক্ষেপে অনেক উপজেলায় তাদের পছন্দের
প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
বিশেষ করে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্য বা স্বজনরা অবাধে ভোটে দাঁড়াতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে আর কেউ প্রার্থী হতে চাইতেন না। এমন বিবেচনা থেকেই ভোটের মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন ও নিকটাত্মীয়দের নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তা সত্ত্বেও অনেক উপজেলায় ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন প্রভাবশালী প্রার্থীরা। তা সত্ত্বেও দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
আরও পড়ুন: নির্দেশ অমান্যকারী মন্ত্রী-এমপিদের সাধারণ ক্ষমা?
তাদের মতে, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের ভোট করার নির্দেশনা দিয়ে দল
সবার জন্য একটি বার্তা দিতে চেয়েছে। তা হলো, আওয়ামী লীগ অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক উপজেলা
নির্বাচন চায়। হাতেগোনা দু-চারটি বাদে মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্যরা নির্বাচনে অংশ
নিচ্ছেন না। তাদের যেসব আত্মীয়স্বজন প্রার্থী হয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই দীর্ঘদিন ধরে
দলীয় রাজনীতিতে অবদান রেখে আসছেন। তা ছাড়া দু-চারটি ব্যতিক্রম বাদে এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা কম। সব মিলিয়ে উপজেলা নির্বাচনে নিয়ে দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলেই
অনেক কেন্দ্রীয় নেতার ধারণা।
এ বিষয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘দলের বার্তা খুব পরিষ্কার, উপজেলা নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমন বার্তাই স্পষ্ট করেছেন। নির্বাচনকে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতেই এই কৌশল। এখন পর্যবেক্ষণ করতে হবে নির্বাচন কতটা প্রভাবমুক্ত হয়।’
আরও পড়ুন: মন্ত্রী-এমপিরা কেন দলের সিদ্ধান্ত মানছেন না
গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ৬২ টিতেই
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন করে জয়ী হন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্যে সিংহভাগই
আওয়ামী লীগ নেতা। ফলে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে যে দ্বৈরথ তৈরি হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনেও
তার প্রভাব পড়তে পারে বলে আওয়ামী লীগের আশঙ্কা। এ কারণেই দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না
দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নির্বাচনকে আরও গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত রাখতে আত্মীয়-স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতেও নির্দেশ
দেয় ক্ষমতাসীন দল। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়ে গেছেন এ ধরনের প্রার্থীরা।
নির্বাচন কমিশনের তপশিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায়, দ্বিতীয়
ধাপে ১৬১, তৃতীয় ধাপে ১১২ ও শেষ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার
তৃতীয় ধাপের মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনের হিসাব অনুযায়ী অন্তত অর্ধশতাধিক মন্ত্রী ও এমপির
স্বজন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে ৪৮০টি উপজেলার মধ্যে এই সংখ্যাকে খুব বেশি বলে মনে
করছে না আওয়ামী লীগ। এ কারণেই ঢালাওভাবে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে আপাতত বিরত থাকছে তারা।
গতকাল গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি
শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি
বলেন, ‘পারিবারিক ফর্মুলা কী? নিজের ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী, এই তো। তারপর হিসাব করে দেখেন,
কয়জন ছেলেমেয়ে, কয়জন স্ত্রী দাঁড়িয়েছে। এর বাইরে তো পরিবার ধরা হয় না। আমাদের
কথা হচ্ছে নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে।’
জানা গেছে, প্রতিটি সংসদীয় আসনে এক বা একাধিক উপজেলা রয়েছে। এলাকার
রাজনীতিতে এমপির পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যানের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। দ্বাদশ জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও অনেকে উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে হেরেছেন।
এ কারণে উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেন সংসদ সদস্যরা। নিজ পরিবার কিংবা বলয়ের
লোককে উপজেলা চেয়ারম্যান করতে সচেষ্ট তারা।
এ পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের নির্বাচনে
অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে
কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে তাদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও দলের
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ার করে দেন।
সূত্র জানায়, এরপরই মন্ত্রী এমপিদের স্বজনদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
জমা পড়ে দলের দপ্তরে। অনেকে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে
লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার আলোচ্যসূচিতেও
উপজেলা নির্বাচন ইস্যুটি অন্তর্ভুক্ত হয়। সাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রতিবেদনও চূড়ান্ত করেন।
তবে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাহী সংসদের সভায় এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।
বৃহস্পতিবার (০২ মে) সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নে অনেকটা নমনীয় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি বলেছিলাম (মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে)। কারণ হচ্ছে, আমরা চাইছি, নির্বাচনটা প্রভাবমুক্ত যেন হয়, মানুষ যেন স্বাভাবিকভাবে ভোটটা দিতে পারে। সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।’
আরও পড়ুন: ভোটের মাঠেই রয়েছেন মন্ত্রী-এমপির স্বজন ও বিএনপির প্রার্থীরা
এসব কারণে অনেকের ধারণা, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নেওয়ার হুমকি ও হুঁশিয়ারি রাজনৈতিক কৌশল।
আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মূলত বিএনপি নির্বাচনে
আসবে না জেনেই নির্বাচনকে জমজমাট ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়ার
সিদ্ধান্ত দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচনে যদি মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন
ঢালাওভাবে অংশ নেয়, তবে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে একপেশে হয়ে যাবে—এমন আশঙ্কায়
তিনি ওই কৌশল নিয়েছিলেন।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন কালবেলাকে বলেন,
‘আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো বার্তা দিয়েই দিয়েছেন। তার বার্তা
অনুযায়ী নির্বাচন যে-ই করুক, কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন
কঠোর ভূমিকা পালন করবে। উপজেলা নির্বাচনে কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না, যেহেতু
দল কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’
প্রভাবশালী নেতা আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।