নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২৮ নভেম্বর, ২০১৮
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ার পর সব মহলের একটি প্রশ্ন ছিল যে, ঐক্যফ্রন্ট জয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? কূটনৈতিক মহল থেকে শুরু করে গণমাধ্যমকর্মী সবাই ফ্রন্টের সঙ্গে বৈঠকে প্রথমেই এই প্রশ্ন করেছেন। এই প্রশ্নের উত্তর সবসময়েই এড়িয়ে গেছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, সংসদ সদস্যরা যাকে ঠিক করবে তিনি হবেন ঐক্যফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী। আবার গণমাধ্যমের সঙ্গে বৈঠকে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলেছেন, ‘তখন বসে আমরা ঠিক করবো।’ তবে বিএনপি এবং তাঁর মহাসচিব মির্জা ফখরুল আকারে ইঙ্গিতে বোঝাতে চেয়েছেন ড. কামাল হোসেনই তাদের নেতা। যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনার তো ড. কামালকে প্রশ্নই করেছিলেন যে আপনি কি ভাবী প্রধানমন্ত্রী? ড. কামাল তখন তা নাকচ করে দেননি। কিন্তু আজ একই সঙ্গে দুটি ঘটনা ঘটল। আপিল বিভাগের এক আদেশের ফলে বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সব সম্ভাবনা বিলীন হয়ে গেলো। একই দিনে, ড. কামাল হোসেন মনোনয়ন জমা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। এ যেন এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতোই ঘটনা ঘটলো। আর এই দুই ঘটনায় সবচেয়ে লাভবান হলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এখন যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত যদি নির্বাচনে জেতে তাহলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই যে প্রধানমন্ত্রী হবেন তা নিয়ে আর কোনো সংশয় নেই। কারণ সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতি অনুযায়ী অনির্বাচিত কারও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ নেই। তাই নির্বাচনে না দাঁড়িয়ে ড. কামাল হোসেন নিজেই নিজেকে অযোগ্য ঘোষণা করলেন। অন্যদিকে, নির্বাচনের উত্তাপ ছড়ানোর আগেই বেগম জিয়াকে অযোগ্য ঘোষণা করল হাইকোর্ট।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, এই দুই ঘটনায় ভোটের মাঠে সরকার বিরোধীদের প্রধান নেতা হিসেবে আবির্ভূত হলেন মির্জা ফখরুল। এটা কি রাজনৈতিক কূটচালের ফসল নাকি কাকতালীয় সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। দলের হেভিওয়েট নেতাদের পিছনে ফেলে ফখরুলের বিএনপি মহাসচিব হওয়াটাই ছিল এক বিস্ময়। এরপর সরকার তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেয়। জেলে থাকতে হয়। জনপ্রিয়তা বাড়ে মির্জা ফখরুলের। সরকার কি মির্জা ফখরুলকে নেতা বানাতেই এই প্রকল্প নিয়েছিল? নেতা হবার পরই দেখা গেল, মির্জা ফখরুল গ্রেপ্তার হন না। তাঁর মামলার বিচার এগোয় না। কিন্তু তারপরও তিনি জাতীয় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেননি। তবে দলের মূল নেতায় পরিণত হন। কিন্তু বিএনপিকে তো শুধু মির্জা ফখরুল দিয়ে ভোটের সাগর পাড়ি দেওয়ানো যাবে না। আবার ২০ দলে এমন কোনো ক্যারিশমাটিক নেতা নেই যিনি ২০ দলকে নেতৃত্ব দিতে পারে। এজন্য মির্জা ফখরুল দ্বারস্থ হন অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর। কিন্তু তাঁর সাথে দেন দরবার ঠিকঠাক না হওয়ায় ফখরুল ছুটে যান ড. কামালের কাছে। ড. কামাল হোসেনকে সামনে রেখে তিনি বিএনপিকে নির্বাচনের মাঠে আনতে সক্ষম হন। কারণ ফখরুল একা ২০ দলে বা বিএনপিতে নির্বাচনে যাবার কথা বললে, দলেই তোপের মুখে পড়তেন। নির্বাচনে যাবার সিদ্ধান্ত তাই ড. কামাল হোসেনকে দিয়েই নেন। এরপর ড. কামাল বাদ, বেগম জিয়া বাদ। নির্বাচনের মাঠে ফখরুলই নেতা। এই প্রক্রিয়ায় তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যে সাহায্য নিয়েছেন, তা বোঝার জন্য কোন পণ্ডিত হবার দরকার নেই। এখন কি ফখরুল প্রধানমন্ত্রী হবার স্বপ্ন দেখছেন।
একে একে তাঁর সব বাঁধা কেটে গেছে। কিন্তু সামনে আছে আসল বাঁধা। নির্বাচনী মাঠে ফখরুল কি দলকে জেতাতে পারবেন? সেটা বোঝা যাবে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন