নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ২৯ নভেম্বর, ২০১৮
খুব ছোট থেকে কষ্ট করে ব্যবসা দাঁড় করিয়েছেন। ডায়গনস্টিক ব্যবসা থেকে ফার্মাসিউটিক্যালস ব্যবসায় সবে পসার জমিয়েছেন। টাকা পয়সার পসার হলেও নিজে থাকছেন বেশ লো প্রোফাইলে। কোনো রাজনীতির সাতেপাঁচে নেই। এক সকালে তাঁর কাছেই এলো ফোন। নাম্বারটা চেনেন না এজন্য ধরলেন না। এরপর একটা ক্ষুদে বার্তা এলো তাঁর ফোনে। ভয় পেয়ে গেলেন ব্যবসায়ী। কাঁপা হাতে ফোন ব্যাক করলেন। ওপাশ থেকে পরিচয় দিয়ে বলা হলো, আজই দেখা করতে হবে। ব্যবসায়ী ভদ্রলোক কী আর করবেন, গেলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।
২০০২ সালের এপ্রিল মাস। কর্তার রুমে ঢুকতেই উঞ্চ অভ্যর্থনা। হাসতে হাসতে কর্তা জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাংলাদেশে ব্যবসা করতে চান?’ ব্যবসায়ী কাচুমাচু। বললেন, ‘কালকের মধ্যে ১০ কোটি টাকার ব্যবস্থা করবেন। ব্যবসায়ী বললেন, ‘দেখেন ভাই, আমি তো ব্যাংকের লোনে ব্যবসা করি। এতো টাকা দেবো কীভাবে?’ কর্তা হাসলেন বললেন, ‘দেবেন, ঠিকই দেবেন।’ ব্যবসায়ী এবার ক্ষেপে গিয়ে বললেন, ‘সম্ভব না।’ বিদায়টা হৃদত্যপূর্ণ হলো না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বেরুলেন। শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। অফিসে বসে পানি পান করলেন দু গ্লাস। এর মধ্যেই একাউন্টস ম্যানেজার এলো প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে। বললেন, ‘ট্যাক্স অফিস থেকে এখনই লোক আসছে’। ‘ট্যাক্সের লোকের কাজ কী?’ ব্যবসায়ী বিরক্ত হয়ে জানতে চাইলেন। কর্মচারী জানালেন, ‘আমাকে ফোন করে তাঁরা জানাল, আমরা নাকি ট্যাক্স ফাঁকি দিচ্ছি।’ ট্যাক্সের লোক এলো, খামোখা এটা ওটা দেখে বলল, ‘আপনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। তদন্ত শেষ না হওয় পর্যন্ত ডায়গনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।’
ব্যবসায়ী বুদ্ধিমান। বুঝলেন কেন এসব হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা তুলে নিলেন ফোন করলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্তাকে। অপর প্রান্তে ফোন ধরতেই ব্যবসায়ী বললেন, ‘হারিছ ভাই, কখন দেখা করব?’ অপরপ্রান্তে হাসি। ওই ব্যবসায়ীর ট্যাক্সের ঝামেলা মিটেছিল। হারিছ চৌধুরীও তার দাবি আদায় করেছিল।
এরকম ঘটনা ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে প্রতিদিনই ঘটেছে। হারিছ চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ছিলেন। তার চেয়েও বড় কথা তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আর হাওয়া ভবনের যোগসূত্র। ২০০১ সালে একেবারে আনকোরা, অজানা হারিছ চৌধুরীকে যখন রাজনৈতিক সচিব-১ করা হলো,তখন অনেকেই চোখ কপালে তুলেছিলেন। কিন্তু ক্রমশ: পরিস্কার হলো তিনি ছিলেন তারেক জিয়ার লোক। একমাত্র ব্যক্তি যাঁর সঙ্গে তারেক এবং বেগম জিয়ার উভয়ের সুসম্পর্ক ছিল। গিয়াসউদ্দিন আল মামুন দেখতেন বড় ব্যবসা, টেন্ডার। আর হারিছ তুলতেন টাকা। প্রশাসনের পদোন্নতি, লাভজনক পোস্টিং ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করতেন হারিছ চৌধুরী। ব্যবসায়ীদের নিয়মিত টাকা দিতে হতো হারিছ চৌধুরীকে। না হলেই ব্যাংকের ঝামেলা, এনবিআরের চাপ, পুলিশি হয়রানি শুরু হতো।
ব্যবসায়ীর গল্পে ফিরে আসা যাক। ওই দিন সন্ধ্যায় ১০ কোটি টাকার চেক নিয়ে ব্যবসায়ী রওনা দিলেন গুলশানের একটি বাসার দিকে। গাড়ি কিছু দূর যেতেই ফোন এলো, গুলশান নয়, তাকে যেতে হবে বনানী। বনানীতে ঠিকানা অনুযায়ী পৌছার পর ১০ কোটি টাকার একটা চেক দিলেন হারিছ চৌধুরীর হাতে। ক্যাশ চেক। হারিছ চৌধুরী জানালেন, ‘পরদিন সকালে আপনাকে যেয়েই টাকা তুলতে হবে। আর টাকা তোলার আগে আপনি আমার মেহমান। এক রকম আটক করেই রাখা হলো সারারাত ওই ব্যবসায়ীকে। পরদিন সকালে ব্যবসায়ী প্রথমে ব্যাংকে ফোন করলেন। টাকা রেডি হবার পর নিজে গেলেন, ব্যাংকের হেড অফিসে সঙ্গে হারিছের লোকজন। টাকা তোলার সঙ্গে সঙ্গেই তিন ভাগ হলো টাকা। তিন ভাগই জমা হলো তিন একাউন্টে। একজন ফোনে হারিছ চৌধুরীকে জানালো, কাজ শেষ। তখন ব্যবসায়ী মুক্তি পেলেন। ওই দিনই ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুর চলে গেলেন।
সব টাকাই এরকম তিন ভাগ হতো, এক ভাগ যেত হাওয়া ভবনে, এক ভাগ যেত বেগম জিয়ার কাছে, আর তৃতীয় ভাগ পেতেন হারিছ চৌধুরী নিজে। এসময় প্রতিদিন একজন করে ব্যবসায়ীকে টার্গেট করা হতো।
হারিছ চৌধুরীর সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল প্রধান বন সংরক্ষক নিয়োগ। প্রধানমন্ত্রী একটা নাম দিয়ে হারিছ চৌধুরীকে বললেন, একে প্রধান বন সংরক্ষক করতে। আরেকটা নাম দিলেন তারেক জিয়া। বনমন্ত্রী নিজে একটা নাম দিলেন। আরেক নাম দিলেন বিএনপির মহাসচিব এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া। হারিছ চৌধুরী ৫ জনকে ডাকলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। নিলাম ডাকলেন প্রধান বন সংরক্ষক পদের জন্য কে কত দেবে। নিলামে পঞ্চম ব্যক্তি সর্বোচ্চ দর হাকলেন ১৫০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী, তারেকের সুপারিশ বাদ দিয়ে সুপারিশহীন ওসমান গনিকে প্রধান বনরক্ষক করলেন। বেগম জিয়া, তারেক বনমন্ত্রী সবাই তাতেই সায় দিলেন। ওয়ান ইলেভেনে এই ওসমান গনির বেডরুমের বালিশে, বিছানায় কয়েক কোটি নগদ টাকা পাওয়া যায়।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে
মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী
লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয়
নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত
অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে
এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক
বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও
এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
শুধু তাই নয়, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়া প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আগামী দিনেও কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মূলত মন্ত্রী-এমপিসহ স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে উপজেলা নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতেই আওয়ামী লীগ এমন কৌশল নিয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড তাপদাহে ১৪ দলে স্বস্তির বৃষ্টি
জানা গেছে, এবারের উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে শুরু থেকেই
সচেষ্ট ছিল আওয়ামী লীগ। এ কারণেই দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দিয়ে সবার জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত
করা হয়। তা সত্ত্বেও বিএনপি-জামায়াতসহ অনেক দল নির্বাচনের বাইরে থাকায় শেষ পর্যন্ত
এই নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হবে—তা নিয়ে সংশয় ছিল। বিশেষ করে সরকারের মন্ত্রী, সংসদ
সদস্য কিংবা স্থানীয়ভাব প্রভাবশালী নেতাদের হস্তক্ষেপে অনেক উপজেলায় তাদের পছন্দের
প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
বিশেষ করে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্য বা স্বজনরা অবাধে ভোটে দাঁড়াতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে আর কেউ প্রার্থী হতে চাইতেন না। এমন বিবেচনা থেকেই ভোটের মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন ও নিকটাত্মীয়দের নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তা সত্ত্বেও অনেক উপজেলায় ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন প্রভাবশালী প্রার্থীরা। তা সত্ত্বেও দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
আরও পড়ুন: নির্দেশ অমান্যকারী মন্ত্রী-এমপিদের সাধারণ ক্ষমা?
তাদের মতে, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের ভোট করার নির্দেশনা দিয়ে দল
সবার জন্য একটি বার্তা দিতে চেয়েছে। তা হলো, আওয়ামী লীগ অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক উপজেলা
নির্বাচন চায়। হাতেগোনা দু-চারটি বাদে মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্যরা নির্বাচনে অংশ
নিচ্ছেন না। তাদের যেসব আত্মীয়স্বজন প্রার্থী হয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই দীর্ঘদিন ধরে
দলীয় রাজনীতিতে অবদান রেখে আসছেন। তা ছাড়া দু-চারটি ব্যতিক্রম বাদে এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা কম। সব মিলিয়ে উপজেলা নির্বাচনে নিয়ে দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলেই
অনেক কেন্দ্রীয় নেতার ধারণা।
এ বিষয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘দলের বার্তা খুব পরিষ্কার, উপজেলা নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমন বার্তাই স্পষ্ট করেছেন। নির্বাচনকে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতেই এই কৌশল। এখন পর্যবেক্ষণ করতে হবে নির্বাচন কতটা প্রভাবমুক্ত হয়।’
আরও পড়ুন: মন্ত্রী-এমপিরা কেন দলের সিদ্ধান্ত মানছেন না
গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ৬২ টিতেই
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন করে জয়ী হন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্যে সিংহভাগই
আওয়ামী লীগ নেতা। ফলে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে যে দ্বৈরথ তৈরি হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনেও
তার প্রভাব পড়তে পারে বলে আওয়ামী লীগের আশঙ্কা। এ কারণেই দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না
দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নির্বাচনকে আরও গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত রাখতে আত্মীয়-স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতেও নির্দেশ
দেয় ক্ষমতাসীন দল। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়ে গেছেন এ ধরনের প্রার্থীরা।
নির্বাচন কমিশনের তপশিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায়, দ্বিতীয়
ধাপে ১৬১, তৃতীয় ধাপে ১১২ ও শেষ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার
তৃতীয় ধাপের মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনের হিসাব অনুযায়ী অন্তত অর্ধশতাধিক মন্ত্রী ও এমপির
স্বজন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে ৪৮০টি উপজেলার মধ্যে এই সংখ্যাকে খুব বেশি বলে মনে
করছে না আওয়ামী লীগ। এ কারণেই ঢালাওভাবে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে আপাতত বিরত থাকছে তারা।
গতকাল গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি
শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি
বলেন, ‘পারিবারিক ফর্মুলা কী? নিজের ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী, এই তো। তারপর হিসাব করে দেখেন,
কয়জন ছেলেমেয়ে, কয়জন স্ত্রী দাঁড়িয়েছে। এর বাইরে তো পরিবার ধরা হয় না। আমাদের
কথা হচ্ছে নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে।’
জানা গেছে, প্রতিটি সংসদীয় আসনে এক বা একাধিক উপজেলা রয়েছে। এলাকার
রাজনীতিতে এমপির পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যানের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। দ্বাদশ জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও অনেকে উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে হেরেছেন।
এ কারণে উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেন সংসদ সদস্যরা। নিজ পরিবার কিংবা বলয়ের
লোককে উপজেলা চেয়ারম্যান করতে সচেষ্ট তারা।
এ পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের নির্বাচনে
অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে
কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে তাদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও দলের
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ার করে দেন।
সূত্র জানায়, এরপরই মন্ত্রী এমপিদের স্বজনদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
জমা পড়ে দলের দপ্তরে। অনেকে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে
লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার আলোচ্যসূচিতেও
উপজেলা নির্বাচন ইস্যুটি অন্তর্ভুক্ত হয়। সাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রতিবেদনও চূড়ান্ত করেন।
তবে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাহী সংসদের সভায় এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।
বৃহস্পতিবার (০২ মে) সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নে অনেকটা নমনীয় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি বলেছিলাম (মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে)। কারণ হচ্ছে, আমরা চাইছি, নির্বাচনটা প্রভাবমুক্ত যেন হয়, মানুষ যেন স্বাভাবিকভাবে ভোটটা দিতে পারে। সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।’
আরও পড়ুন: ভোটের মাঠেই রয়েছেন মন্ত্রী-এমপির স্বজন ও বিএনপির প্রার্থীরা
এসব কারণে অনেকের ধারণা, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নেওয়ার হুমকি ও হুঁশিয়ারি রাজনৈতিক কৌশল।
আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মূলত বিএনপি নির্বাচনে
আসবে না জেনেই নির্বাচনকে জমজমাট ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়ার
সিদ্ধান্ত দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচনে যদি মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন
ঢালাওভাবে অংশ নেয়, তবে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে একপেশে হয়ে যাবে—এমন আশঙ্কায়
তিনি ওই কৌশল নিয়েছিলেন।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন কালবেলাকে বলেন,
‘আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো বার্তা দিয়েই দিয়েছেন। তার বার্তা
অনুযায়ী নির্বাচন যে-ই করুক, কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন
কঠোর ভূমিকা পালন করবে। উপজেলা নির্বাচনে কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না, যেহেতু
দল কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’
প্রভাবশালী নেতা আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের গত তিন সপ্তাহ ধরে লাগাতার ভাবে দলের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা যেন নির্বাচনে না দাঁড়ায় সে জন্য আহ্বান জানাচ্ছিলেন। এ জন্য তিনি কঠোর হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি বলছিলেন, যারা দলের নির্দেশনা লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু ব্যবস্থাগ্রহণ তো দূরের কথা তাদেরকে সতর্ক পর্যন্তও করা হয়নি। উল্টো ৩০ এপ্রিলে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এই বিষয় নিয়ে কোন আলোচনাই হয়নি।
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।