নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ৩০ নভেম্বর, ২০১৮
এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জঙ্গি সম্পৃক্ততা এবং অর্থায়নের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এবং আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল সন্দেহ করছে যে, এবারের নির্বাচনে বিএনপিতে জঙ্গি সম্পৃক্ততা বেড়েছে। জামাতের ২৫ জন প্রার্থীর বিএনপিতে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার প্রেক্ষিতে এই বিষয়ে প্রথম প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। তারপর এ নিয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন এবং যুক্তরাজ্য প্রশাসন। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শুধুমাত্র জামাত নয়, আরও অনেক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গেও বিএনপির সম্পৃক্ততার প্রমান পাওয়া গেছে। এই নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে জঙ্গি অর্থায়ন হতে পারে বলে আশঙ্কা হচ্ছে। ইন্টারপোল প্রাথমিক গবেষণায় দেখছে, বিএনপিতে যে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, সেখানে জামাত ছাড়াও জঙ্গি অর্থায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্তত ৯ জন রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনকে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি নারী আইনজীবি এবং দীর্ঘদিন কারাভোগের জন্য বেরিয়ে এসেছেন। এছাড়াও আরও ৮ জন পাওয়া গেছে যারা জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং মামলায় জামিন নিয়ে তারা এখন নির্বাচন করছেন।
এই বিষয়টি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা। তারা মনে করছে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা এবং জঙ্গিদের মনোনয়ন দেয়া গণতান্ত্রিক রীতিনীতির পরিপন্থী। তারা মনে করছেন, এরফলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূল ধারায় যদি জঙ্গিরা প্রবেশ করে তাহলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের জন্যও একটা অভয়ারন্যে পরিনত হতে পারে। জঙ্গিরা বাংলাদেশে একটা শক্ত ঘাটি গড়ার সুযোগ পাবে।
সংশ্লিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, শুধু জঙ্গিদেরকে যে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তাই নয়। এবারের নির্বাচনে বিপুল পরিমানে জঙ্গি অর্থায়নেরও আশঙ্কা রয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর। দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থা সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে দেয়া প্রতিবেদনে বলেছেন যে, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বিএনপিকে অর্থায়ন করেছিল। এই নির্বাচনের সময়ও সরাসরি আইএসআই বিএনপিতে অর্থায়ন করতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। একই সঙ্গে তারা মনে করছেন যে, বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনগুলো তাদের অস্তিত্বের প্রয়োজনে একটি শক্তিশালি বিএনপি দেখতে চায়। এই জন্যই নির্বাচনে যেন বিএনপি ভালো ফলাফল করে তাই বেছে বেছে কিছু প্রার্থীকে অর্থায়ন করবে বলে তাদের কাছে খবর আছে। তবে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নজরুল ইসলাম খান বিষয়টিকে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জঙ্গিদের অর্থায়ন এবং তাদের মদদ দেওয়ার বিষয়টি অবান্তর।’
জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে, এমন প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ার প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তো অনেককিছুই অভিযোগ করেছে। কেউ অভিযোগ করলেই সেটা সত্যি হবে এমন ধারণা ঠিক নয়।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন