নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৮
বিএনপি-জামাত জোট ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশ পরিচালনা করে। সেসময় এই জোটের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ লালন, প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের জন্য সন্ত্রাসের প্রয়োগ ইত্যাদি নানা অভিযোগ উঠেছিল। বিএনপি-জামাতের ওই অপশাসনের কারণেই ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত অনির্বাচিত একটি সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল। দুই বছর ওই অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকার পর একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ড. ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিএনপির অনেক দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিয়েছিল। অনেককে গ্রেপ্তারও করেছিল। গ্রেপ্তারকৃতদের অনেকেই সাজা ভোগ করেছেন। এদের মধ্যে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দাপটের সঙ্গে থাকা বেশ কিছু ব্যক্তিত্ব এখনো জেলে আছেন। এই ব্যক্তিরা শুধু বিএনপিকেই বিপদগ্রস্ত করেনি বরং বাংলাদেশকেও জঙ্গিবাদের রাজত্বে পরিণত করতে চেয়েছিল। বর্তমানে জেলে বন্দি এমন অনেকেই বিএনপি-জামাত নেতা ক্ষমতায় আসার প্রতীক্ষায় আছেন। কারণ বিএনপি ক্ষমতায় এলেই তাঁদের মুক্তি মিলবে। এই তালিকার শীর্ষে যাঁরা আছেন তারা হলেন:
১. বেগম খালেদা জিয়া: স্বৈরাচারের পতনের পর নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে গণতান্ত্রিক চর্চা শুরু হয়েছিল তাকে দূষিত করেছিলেন তারেক জিয়া। কিন্তু তারেক জিয়াকে যিনি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন এবং যার অন্ধ মাতৃস্নেহে তারেক বেড়ে উঠতে পেরেছিলেন তিনি হলেন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপির নেতারাও একান্ত আলাপচারিতায় স্বীকার করেন যে, বেগম জিয়ার প্রশ্রয়েই তারেক জিয়া অপকর্মের পাহাড় গড়ার সাহস পেয়েছিল। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ে খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন তারেক জিয়া একটি সমান্তরাল সরকার গঠন করেন। ওই সরকারটি হাওয়া ভবন থেকে পরিচালিত হতো। বেগম জিয়া হাওয়া ভবনকে শুধু পৃষ্ঠপোষকতাই দেন নি, বরং ওই ভবনের সমস্ত কর্তৃত্ব তিনি মেনে নিয়েছিলেন। এ কারণে অনেকেই বেগম জিয়াকে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাড় করান। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুটি মামলায় তিনি দণ্ডিত হয়েছেন। এর একটি হলো জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলা। অন্যটি জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলা। দুটি মামলার বিবরণী পড়লে দেখা যায় যে, শুধুমাত্র পুত্র তারেক জিয়ার কারণেই বেগম জিয়া মামলাগুলোতে ফেঁসেছেন। তারেক জিয়ার অবৈধ কর্মকাণ্ডগুলোকে জায়েজ করার জন্য বা বৈধতা দেওয়ার জন্যই খালেদা জিয়া বিভিন্ন সময় বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। বিভিন্ন মামলা থেকে এটা স্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান হয়। খালেদা জিয়া ১৭ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে বর্তমানে নাজিমুদ্দিন রোডের একটি বিশেষ কারাগারে বন্দী আছেন। বিএনপি-জামাত যদি আবার ক্ষমতায় আসে তবে বেগম খালেদা জিয়া যে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসবেন তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বিএনপি প্রকাশ্যেই বলছে, তারা এবার নির্বাচন করছে বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য।
২. গিয়াস উদ্দিন আল মামুন: গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ছিলেন তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারেক জিয়ার যত অপকর্ম ও দুর্বৃত্তায়ন সবকিছুর অংশীদার ছিলেন তিনি। তারেকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং মদদেই তিনি ব্যবসায় জগতে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। সেসময় মামুনই সমস্ত টেন্ডার এবং সমস্ত ব্যবসায়ের কমিশন বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। বিএনপি- জামাতের পাঁচ বছরের শাসনামলে তিনি তারেক জিয়াকে সামনে রেখে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হন। সেসময় অবৈধ সম্পদের মাধ্যমে ওয়ান স্পিনিং, ওয়ান কম্পোজিট টেক্সটাইল, চ্যানেল ওয়ানসহ রাতারাতি নানা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। বিভিন্ন মামলায় গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের ৮৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পরই তাঁকে গ্রেপ্তার করে। অবৈধ সম্পদ অর্জন, দুর্নীতি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মামলায় এখনো তিনি কারাগারেই আছেন। বিএনপির মনোনয়ন তালিকা পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায় দলটি পুরোনোদের আঁকড়ে রাখার নীতি গ্রহণ করেছে। কাজেই দলটি যদি কোনোভাবে ক্ষমতায় আসে তবে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের মতো দুর্নীতিবাজরা আর বেশিদিন জেলে থাকবেন না, এটা অনুমান করাই যাচ্ছে।
৩. লুৎফুজ্জামান বাবর: ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শাসনামলে লুৎফুজ্জামান বাবর ছিলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি তারেক জিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ অনুচরদের একজন ছিলেন। তার মাধ্যমেই তারেক জিয়া বাংলাদেশে জঙ্গি নেটওয়ার্ক, অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের অনুপ্রবেশ, এগুলোর ব্যবসা এবং যাবতীয় অপকর্মগুলো নিয়ন্ত্রণ করতেন। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় লুৎফুজ্জামান বাবর অপরাধী প্রমাণিত হয়েছেন এবং তাঁকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। শুধু ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলাই নয়, ১০ ট্রাক অবৈধ অস্ত্র মামলাতেও তার ভূমিকা রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন অপরাধ, অন্যায় এবং বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের লালনের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে বিতর্কিত ভূমিকা রেখেছিল তাতে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। এবার বিএনপি নেত্রকোনা থেকে বাবরের স্ত্রীকে মনোনয়ন দিয়েছে। এ থেকে সহজেই বোঝা যায় যে, অতীত অপকর্মের জন্য বিএনপি নূন্যতম প্রায়শ্চিত্ত করেনি। বরং বিএনপি এবার যদি নির্বাচনে জয়লাভ করে তাহলে লুৎফুজ্জামান বাবর বেশিদিন জেলে থাকবেন না। তাঁকে বের করে আনা হবে।
৪. আবদুস সালাম পিন্টু: আবদুস সালাম পিন্টু ছিলেন বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। তা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। ওই রায়ে বলা হয়েছে যে, আফগান জঙ্গিদের সঙ্গে তার ভাই যোগাযোগ করেছিল। আফগান জঙ্গিরা বাংলাদেশে এসে তার বাসায় বৈঠক করেছিল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় আবদুস সালাম পিন্টু দণ্ডিত হয়েছেন। তাঁকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিএনপি যদি আবার ক্ষমতায় আসে তাহলে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগে অভিযুক্ত আবদুস সালাম পিন্টুও যে জেল থেকে মুক্তি পাবেন, এটা সহজেই অনুমান করা যায়।
৫. দেলওয়ার হোসেন সাইদী: ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়। সেই বিচার প্রক্রিয়ায় অনেক শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধী দণ্ডিত হয়েছেন। বেশ কয়েকজনকেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পিরোজপুরের যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাইদীকেও যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আপিল বিভাগে এসে সেই দণ্ড হ্রাস করে আমরণ কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ কারণে তিনি এখন কারাগারেই রয়েছেন। কিন্তু বিএনপি জামাত জোট যে যুদ্ধাপরাধীদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি এবারের মনোনয়নেই তা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। কারণ পিরোজপুরের একটি আসন থেকে সাইদীর ছেলেকে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায়, বিএনপি দেলোয়ার হোসেন সাইদীকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। সাইদীর যত অপকর্ম আছে তার দায় বিএনপি নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে। কাজেই আসন্ন নির্বাচনে যদি বিএনপি জয়ী হয় তবে যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাইদীর জেল থেকে বেরোনো হবে সময়ের ব্যাপার মাত্র।
বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি/জেডএ
মন্তব্য করুন
ভারতের জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি ও প্রচারণা দেখতে বাংলাদেশ
থেকে আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। বুধবার (০১ মে)
আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে সাতটি ধাপে জাতীয়
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ক্ষমতাসীন বিজেপি এই নির্বাচনে তাদের সার্বিক প্রস্তুতি ও
প্রচারণা দেখানোর জন্য বিদেশি কিছু রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে
একমাত্র আওয়ামী লীগকে তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, ভারতে বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায়। অন্যদিকে,
বাংলাদেশে পরপর চারটি জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশভাবে
জয়লাভ করে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। এই সময়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে
যুগান্তকারী উন্নয়ন হয়েছে। এই উন্নয়ন পুরো পৃথিবীকে অবাক করেছে।
ভারতের ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে
শুধুমাত্র আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ
গণতন্ত্র ভারত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি যে আস্থাশীল এবং
আওয়ামী লীগকে যে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও তাদের প্রকৃত বন্ধু
মনে করে, এই আমন্ত্রণ সেই ইঙ্গিতই বহন করে।
বিজেপির নির্বাচনী প্রস্তুতি ও প্রচারণা পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশ
আওয়ামী লীগকে পাঠানো আমন্ত্রণপত্রে তারা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি পাঠাতে
অনুরোধ করেছে।
এই আমন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে দলের
তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং সংসদ সদস্য ড. সেলিম মাহমুদকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ভারত সফরে
মনোনীত করেছেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, এই সফরটি মূলত পাঁচ দিনের। ১
মে থেকে ৫ মে পর্যন্ত। সফরে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধির সঙ্গে বিজেপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের
বৈঠক রয়েছে। দিল্লির বাইরে বিজেপির নির্বাচনী প্রচারণা সরেজমিনে দেখানোর জন্য বিজেপি
আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিকে ছত্রিশগড়ে নিয়ে যাবে।
ভারতের নির্বাচন ১৯ এপ্রিল শুরু হয়েছে যা ১ জুন পর্যন্ত চলবে।
৪ জুন ভোটের ফলাফল ঘোষিত হবে।
ভারত নির্বাচন বিজেপি আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন