নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৮
বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারতের ভূমিকা এখন আর গোপন কোনো বিষয় নয়। এদেশের প্রতিটি নির্বাচনেই ভারত প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং কূটনৈতিক মহল মনে করে যে, ভারত যা চায় সেটিই বাংলাদেশের নির্বাচনে ঘটে। জনগণের মত বা জনগণের ভোট অবশ্যই একটা বড় বিষয়। তবে ভারত এমন কিছু কাজ করে যার ফলে জনমত সেদিকেই প্রবাহিত হয়, ভারত যেদিকে চায়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক বক্তৃতায় বলেছেন যে, ২০০১ সালে ‘র’ এর কাছে মুচলেকা দিয়ে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় এসেছিল। প্রধানমন্ত্রী এটাও বলেছেন যে, তিনি ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রি করতে চাননি বলেই তাকে নির্বাচনে হারিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে দৃশ্যমান ভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে যে, ভারত চেয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসুক। বিশেষ করে ২০১৪’র নির্বাচনের আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের আসা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করার ফলে গোপন থাকেনি যে, ভারত স্পষ্টভাবেই চেয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকুক।
২০০৮ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় ছিল। কংগ্রেস সরকারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটি ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব ছিল। সেই বন্ধুত্বের ভিত্তি ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। ভারতের রাজনীতিতে দলমত নির্বিশেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে বিবেচিত হন। কাজেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের একটা সখ্যতা আছে। কিন্তু বর্তমানে যে বিজেপি সরকার তাদের বাংলাদেশ নীতি কংগ্রেসের মতো নয়। বাংলাদেশের ব্যাপারে কংগ্রেস যেমন অন্ধ আওয়ামী লীগ ভক্ত, বিজেপি তেমনটা নয়। বিজেপি বারবার করে একটা কথা বলছে যে, তারা একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। জনগণের মতামতের প্রতিফলন তারা দেখতে চায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, ভারতের কারণেই এবার নির্বাচনের আগে নাটকীয়ভাবে সংলাপ হলো। সংলাপের পরই বিএনপি নির্বাচনে রাজি হয়। কূটনৈতিক মহল এটাও মনে করে যে, বিজেপি সরকার এ নির্বাচনে অন্ধভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেবে না। বরং তারা একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায়। ভারত সেই দলটির পক্ষেই অবস্থান নেবে যারা তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো দেখবে। শুধু বাংলাদেশের নির্বাচন নয়, নেপাল, মালদ্বীপ এবং শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতিও ভারতের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়। সেক্ষেত্রে এবারের নির্বাচনে ভারত বাংলাদেশে কি চায় সেটা একটা বড় প্রশ্ন। ভারতের কূটনৈতিক সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, এবারের নির্বাচনে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন ভারতের চাওয়া পাওয়াগুলো সুনির্দিষ্ট। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন ভারতের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো যেন সংরক্ষিত থাকে। চলমান বাণিজ্য ও ট্রানজিট সুবিধা যেন অব্যাহত থাকে এটা ভারত নিশ্চিত হতে চায়। এক্ষেত্রে দেখা গেছে যে বিএনপির একাধিক নেতা ভারত সফর করেছেন এবং তারা অঙ্গীকার করে এসেছেন যে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কগুলো তৈরি হয়েছে সেগুলো তারা অব্যাহত রাখবে। তারা ভারত বিরোধী নয়, এটা বারবার তারা বক্তৃতা ও বিবৃতিতেও বলেছে।
২. ভারত চায়, চীনের প্রভাববলয় থেকে বাংলাদেশ যেন মুক্ত হতে পারে। গত দুই যুগে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে বড় বড় যে মেগা প্রজেক্টগুলো হচ্ছে, সেগুলোর অধিকাংশই হচ্ছে চীনের অর্থায়নে এবং সহযোগিতায়। এ বিষয়টি নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন। দেশটি এমন একটি সরকারকে বাংলাদেশে দেখতে চায় যারা চীনের থেকে আস্তে আস্তে মুখ ফিরিয়ে নেবে।
৩. বাংলাদেশের মাটি যেন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটিতে পরিণত না হয় এটা হলো ভারতের তৃতীয় চাওয়া। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত উলফাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ঘাঁটি ছিল বাংলাদেশ। এটা ভারতের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিপদজনক বলেই মনে করত দেশটি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আর কোনোভাবেই আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়া হয়নি বা তাদের লালন করা হয়নি। ভারত এমন একটা সরকারকে দেখতে চায় যারা দায়িত্ব গ্রহণ করে এই ধারা অব্যাহত রাখবে।
৪. ভারত বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিমুক্ত একটি পরিবেশ দেখতে চায়। বিশেষ করে জামাত, খেলাফতে ইসলামের মতো উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ দলগুলোর যেন উত্থান না ঘটে সেটা নিশ্চিত হতে চায় ভারত।
৫. ভারত চায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নিপীড়িত হয়ে দেশত্যাগ করেছে বলে ভারতের অভিযোগ। যদিও তারা এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য উপাত্ত দেয় না। সাম্প্রতিক সময়ে দুটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকেই ভারত সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার বিষয়টি তুলে ধরেছে। এবার নির্বাচনেও তারা দেখবে যে, কোন দলটি সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেবে।
এই পাঁচটি মৌলিক আকাঙ্ক্ষার বাইরেও ভারতের কিছু চাওয়া আছে। যার অন্যতম একটি হলো, বাংলাদেশে যেন একটা দুর্বল সরকার থাকে। যেন সেই সরকারটি ভারতের ওপর নির্ভর করে।
দ্বিতীয়ত, ভারত চায় না যে, বাংলাদেশে এমন একজন প্রধানমন্ত্রী থাকুক যিনি সার্বজনীন নেতা হিসেবে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত হয়। সেজন্য ভারত এমন একটা দলকে ক্ষমতায় আনতে চায় যারা ভারতের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে এবং অপেক্ষাকৃত নতজানু হয়ে থাকবে।
তৃতীয়ত ভারত চায়, এমন একটি সরকার বাংলাদেশে থাকুক যারা বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন দেবে। যেমন: ভারতের পাকিস্তান বিরোধিতা এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদসহ ভারতের যত অভিযোগ সেগুলোতে সমর্থন দেওয়ার জন্য ভারত একটি বিশ্বস্ত ও সহযোগী রাষ্ট্র চায়। যে রাষ্ট্রটি এসব ক্ষেত্রে ভারতকে সমর্থন দেবে।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তাতে এই বৈশিষ্ট্যের সবগুলো যারা পূরণ করে ভারতের মন জয় করতে পারবে নিশ্চিতভাবে তারাই ভারতের সমর্থন পাবে।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া মাহমুদুর রহমান মান্না
মন্তব্য করুন
বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতাল বিএনপি শামীম ইস্কান্দার ডা. জাহিদ
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা শনিবার (৪ মে) সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট সায়েম খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।
সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ মনোনয়ন বোর্ড সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনের দুই ধাপের প্রস্তুতি এবং প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই দুই ধাপে আওয়ামী লীগের প্রায় ৫০ জন মন্ত্রী এমপির স্বজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর মন্ত্রী-এমপিদের নিজস্ব ব্যক্তি বা মাইম্যান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে একশরও বেশি। উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে যখন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছেন তখন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
বেগম খালেদা জিয়া একদিনের জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে তাকে আবার বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে গতকাল সন্ধ্যায়। বাড়িতে ফেরার পর বিএনপি পন্থী চিকিৎসক এবং ড্যাব নেতা ডা. জাহিদ দাবি করেছেন যে, খালেদা জিয়াকে এখন লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে এবং এর জন্য তাকে বিদেশ নেওয়ার কোন বিকল্প নেই।