নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৮
নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের হারাতে দুই জোট গঠন করেছে বিএনপি। বৃহত্তর ত্যাগ স্বীকারের কথা বলে দুই জোটের শরিকদের জন্য অন্তত ৭০টি আসন ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের শীর্ষ নেতারা। কিন্তু তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এদের বলছেন ‘বহিরাগত’। শুধু শরিকদের নয় দলে যাঁরা নির্বাচনের জোয়ারে ভেসে এসেছেন সেই নবাগত এবং সংস্কারপন্থীদেরও প্রতিহতের ডাক দিয়েছে বিএনপি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভোট যুদ্ধ ছেড়ে, এখন নিজেরাই নিজেদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত বিএনপি।
মৌলভীবাজার-২ আসনে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুরকে মনোনয়ন দিয়েছে। সুলতান মোহাম্মদ মনসুরকে প্রতিহতের ডাক দিয়েছে স্থানীয় বিএনপি। দলের মহাসচিবের কাছে ঐ আসনের স্থানীয় বিএনপির নেতারা চিঠি লিখেছেন। ঐ চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সুলতান মোহাম্মদ মনসুর এই এলাকায় সারাজীবন বিএনপিকে খুনিদের দল বলেছেন। খালেদা জিয়াকে নোংরা ভাষায় আক্রমণ করেছেন। তারেক জিয়াকে শ্রেষ্ঠ দুর্নীতিবাজ বলেছেন। এখন তাঁকে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া মেনে নেওয়া যায় না।’ স্থানীয় বিএনপি কর্মীরা সভা করে সুলতান মোহাম্মদ মনসুরকে প্রতিহতের ডাক দিয়েছেন।
লক্ষ্মীপুরের সবকটি আসন ঐতিহাসিক ভাবেই বিএনপির। ২০০৮ এর নির্বাচনেও বিএনপি লক্ষ্মীপুরের সব আসনে জয়ী হয়। স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলেন,‘ এখানে কলাগাছকে ধানের শীষ দেওয়া হলে, সেও জিতবে। সেই লক্ষ্মীপুরের-৪ আসনে জেএসডির আ.স.ম আবদুর রবকে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়ায় এখন বিদ্রোহ চলছে। স্থানীয় বিএনপি বলছে, রবের কোনো দল নেই। কোনো সমর্থক নেই। ধানের শীষ প্রতীক না পেলে, তার জামানত থাকবে না। গত ১ ডিসেম্বর স্থানীয় বিএনপি এক কর্মীসভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, বহিরাগতদের প্রতিহত করা হবে। ঐ আসনে বিএনপির একটি অংশ আ স ম আবদুর রবকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে।
বগুড়া-২ আসনটি বিএনপি জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ছেড়ে দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাট্টা হয়ে বিএনপি স্থানীয় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানকে প্রার্থী করেছে।
পটুয়াখালী-৩ আসনে সদ্য বিএনপিতে যোগ দেওয়া গোলাম মাওলা রনিকে ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’ নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করছে স্থানীয় বিএনপি। তাঁকে এলাকায় ‘টাউট’ রাজনীতিবিদ হিসেবেই ডাকা হয়। স্থানীয় ছাত্রদল লিখিত চিঠি দিয়ে রনির সঙ্গে কাজ না করার ঘোষণা দিয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়া বহিষ্কার করেছিলেন জহির উদ্দিন খান স্বপনকে। ওয়ান ইলেভেনে স্বপন নিজে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারে মদদ দিয়েছেন। সেই স্বপনকে এবার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বরিশাল- ১ আসনে। কর্মীরা বিক্ষুব্ধ। জেলা বিএনপি ইতিমধ্যে স্বপনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে।
সব এলাকাতেই বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছে, গত ১২ বছর যাঁরা দলের জন্য কষ্ট স্বীকার করেছে, জেল জুলুম নির্যাতন স্বীকার করেছে, তাদের মধ্য থেকে যাঁকে ইচ্ছে মনোনয়ন দেয়া হোক আপত্তি নেই। কিন্তু বহিরাগত এবং সুবিধাবাদীদের মনোনয়ন দেওয়া হলে তা প্রতিহত করা হবে। বিএনপিতে এখন এমন নেতা নেই, যার নির্দেশে কর্মীরা সব মেনে নিয়ে শান্ত হবে।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়ার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তারেক জিয়া তার পছন্দের ব্যক্তিদেরকে দলে রাখছেন। অপছন্দের ব্যক্তিদেরকে দল থেকে বের করে দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে এবং এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা দলের ভিতরে চলছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং কোন্দল।
সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন নির্বাচিত হয়েছিলেন। দল তাকে আদেশ করেছিল দায়িত্ব গ্রহণ না করার জন্য। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির পদটি গ্রহণ করেন। আর তার এই পদ গ্রহণের কারণে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম তাকে অব্যাহতি দিয়েছিল। কিন্তু এই অব্যাহতি শেষ পর্যন্ত টেকেনি। এখন তাকে দলে রাখার সিদ্ধান্ত যেমন নেওয়া হয়েছে, তেমনই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তারেক জিয়ার এই সিদ্ধান্তে বিএনপির আইনজীবীদের একাংশ যারা মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিরুদ্ধে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে। বিশেষ করে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আলীসহ সিনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, তারেক জিয়ার নির্দেশেই তারা খোকনের ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আবার তারেক জিয়াই তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেন। মাঝখান থেকে তারেক জিয়া তাদেরকে অসম্মান করবেন বলেও এই সিনিয়র আইনজীবী মনে করেন।
তারেক জিয়ার পরামর্শেই তারা মাহবুব উদ্দিন খোকনকে দায়িত্ব না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারেক জিয়াই এখন মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঙ্গে কথা বলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব পদে যেমন আছেন, তেমনই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদেও বহাল থাকছেন।
বিএনপির মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে মাহবুব উদ্দিন খোকন যদি নির্বাচন করে এবং জিতে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে তাহলে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীরা কী দোষ করল? বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত হল বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। আর এই ধারাবাহিকতায় বিএনপির বিভিন্ন পেশাজীবীদের নির্বাচনও বর্জন করছে। এর আগে বিএনপি নিয়ন্ত্রিত ড্যাব চিকিৎসকদের বিএমএ নির্বাচনও বর্জন করেছিল।
প্রকৌশলীদের নির্বাচনেও বিএনপি সরে গিয়েছিল। আর এরকম একটি পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কেন বিএনপি অংশগ্রহণ করল? সেটি যেমন একটি বড় প্রশ্ন, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হল যে- একই সিদ্ধান্ত একেক জনের ব্যাপারে এক রকম হবে কেন? এ নিয়ে বিএনপির নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন?
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ দলের কিছু বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদেরকে বলেছেন, এই সমস্ত কীভাবে হচ্ছে আমি জানি না। আপনাদের যদি কোনও কিছু বলার থাকে আপনারা লন্ডনে যোগাযোগ করেন। এখন বিএনপিতে কেউ দায় নিতে চাচ্ছে না। কেউ জানছেও না যে কাকে কখন কীভাবে বহিষ্কার করা হচ্ছে। যার ফলে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে দলটির মধ্যে।
উপজেলা নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করেছেন সে রকম ৭৩ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, উপজেলা নির্বাচন বা স্থানীয় সরকার নির্বাচন একটি নির্দলীয় ধরনের নির্বাচন। এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক তারা ব্যবহার করবে না।
অনেক বিএনপি নেতা মনে করেন যে, দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তটাই সঠিক ছিল। কিন্তু কেউ যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে সেটি তার নিজস্ব ব্যাপার। এ জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা বাঞ্ছনীয় নয় বলেই বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা মনে করেন। আর একারণেই বিএনপির সব নেতারাই হাল ছেড়ে দিয়েছেন এবং তারা এখন তিক্ত-বিরক্তও বটে।
বিএনপি রাজনীতি মির্জা ফখরুল তারেক জিয়া ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির সভা উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়ার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তারেক জিয়া তার পছন্দের ব্যক্তিদেরকে দলে রাখছেন। অপছন্দের ব্যক্তিদেরকে দল থেকে বের করে দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে এবং এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা দলের ভিতরে চলছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং কোন্দল।