নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৮
ছয় মাস আগে অনেকেই কল্পনা করতে পারেনি বিএনপি এবার নির্বাচনে যাবে। কার্যত গত পাঁচ বছর ধরে বিএনপি যে সকল দাবি-দাওয়া জানিয়ে আসছিল, তা মানা হয়নি একটিও। কোন দাবি অর্জন ছাড়াই এবারের নির্বাচনে যাচ্ছে দলটি। বিএনপি তার রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিনতম সময়ের মধ্য দিয়েই এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। একদিকে দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দশ মাস ধরে কারাবন্দি, অন্যদিকে দলের দ্বিতীয় নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন লন্ডনে পলাতক এবং দু’টি মামলায় যাবজ্জীবন ও সাত বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত। ২০১৪ তে নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। বিএনপির নির্বাচন বর্জনের মূল কারণ হিসেবে বিএনপির নীতি নির্ধারকরা বলেছিল, নির্দলীয় নিরেপক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না তারা। যদিও ঐ জাতীয় নির্বাচনের আগে পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রতিটিতেই বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিল বিএনপি।
বিএনপি এবার শেষপর্যন্ত নির্বাচনে কেন গেল এটাই এখন রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মোটা দাগের কয়েকটি কারণ পেয়েছেন। সেগুলো হলো:
১. অস্তিত্ব রক্ষা : ২০১৪ তে নির্বাচনে না যাওয়া যে বিএনপির ভুল ছিল তা বিএনপি নেতারা এখন প্রকাশ্যেই বলে বেড়াচ্ছেন। ঐ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার কারণেই আজ দলের এই সংকট বলে মনে করছেন তারা। এমন আর একটি ভুল করতে চান না তারা, বরং নির্বাচনের মাঠে থেকে শক্তি সঞ্চয় করে নিজেদের জনপ্রিয়তার প্রমাণ রাখতে চান। বিএনপির অনেক নেতাই জানেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করা অত্যন্ত কঠিন হবে তাদের জন্য। এমনকি ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে কারচুপিসহ প্রশাসনও সরকারের পক্ষে কাজ করবে। তবুও তারা এবার নির্বাচনে যাচ্ছেন। কেননা বিএনপির নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন, এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছাড়া অন্য কোন বিকল্প পথ নেই তাদের। কেননা এবারও নির্বাচন বর্জন করলে অস্তিত্ব বিপন্ন হবে তাদের।
২. নাটকীয় ফলাফলের আশা : বিএনপি মনে করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দীর্ঘ দশ বছর ধরে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আছে। এতো দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার কারণে অনেক জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রভাবের সৃষ্টি হয়েছে, পরিবর্তন চায় অনেকেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কোন সরকার পর পর দুই মেয়াদে দেশ পরিচালনার পর তৃতীয়বার আবার ক্ষমতায় আসার কোন পরিসংখ্যান নেই। তাই এবার জনমত পরিবর্তনের পক্ষেই বলে বিএনপি নেতারা মনে করছেন। এজন্য নির্বাচনে যাবার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে দলটি।
৩. আন্দোলনের অক্ষমতা : ২০১৩ সাল থেকে বিএনপি নির্দলীয় নিরেপক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিল। সেই দাবিতে টানা অবরোধ দিয়েছিল দলটি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ তে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অবরোধের ঘোষণা দিয়েছিল দলটি। এই অবরোধ পালনের ফলে দলটির অধিকাংশ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা হয়েছিল, সহিংসতার অভিযোগে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন অনেকেই। যে কারণে রাজপথের আন্দোলন জমাতে ব্যর্থ তারা। বিশেষ করে ২০১৪ তে ঢাকার বাইরে অল্প কিছু আন্দোলন হলেও ঢাকার মধ্যে কোন আন্দোলনেই দাঁড়াতে পারেনি বিএনপির নেতা-কর্মীরা। খোদ বিএনপির নীতি নির্ধারকরাই জানেন, এবারও যদি তারা নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনের ডাক দেন, তবে তা গতবারের মতো ব্যর্থই হবে। কাজেই আন্দোলনের ব্যর্থতাই তাদের নির্বাচনের দিকে প্ররোচিত করছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
৪. আন্তর্জাতিক চাপ : এবারের নির্বাচনে যেন বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তার জন্য আগে থেকেই আন্তর্জাতিক মহলের একটি চাপ ছিল দলটির উপর। বিশেষ করে প্রতিবেশী বন্ধুদেশ ভারত চাইছিল যে কোন পরিস্থিতিতে এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক বিএনপি। কেননা নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপক্ষ হবে না এমন বক্তব্য গ্রহণযোগ্য ছিল না তাদের কাছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতেই চাপেই এবার নির্বাচনে যাচ্ছে বিএনপি এমন গুঞ্জনই রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
৫. খালেদা জিয়ার মুক্তি : বিএনপির নীতি নির্ধারকরা মনে করছে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে যদি তারা জয়লাভে ব্যর্থও হয় তবে জাতীয় সংসদে বিরোধী দল হিসেবে তাদের আবির্ভাব নিশ্চিত। এক্ষেত্রে সকারের সঙ্গে দেন-দরবার, তাদের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলে সংগঠনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির পথও সুগম হবে।
মূলত এই পাঁচ কারণেই এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে বিএনপি। যদিও বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, নির্বাচনের মাঠ এবার বিএনপির পক্ষে থাকবে। কেননা দেশের জনগণ এখন পরিবর্তন চায়। এবারের নির্বাচনে নাটকীয় ফলাফল করবে বিএনপি। কিন্তু ভঙ্গুর শক্তি নিয়ে বিএনপি কতটুকু নাটকীয় ফলাফল করবে তা বুঝা যাবে ৩০ ডিসেম্বরের পর।
বাংলা ইনসাইডার/বিকে
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।