নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৮
ছয় মাস আগেও আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা মনে করতেন শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে আসবে না। বিএনপি যদি নির্বাচনে আসেও, তাহলেও তারা খন্ডিত এবং বিভক্তভাবে নির্বাচনে আসবে। নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপির বিভক্তি অনিবার্য এটা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা ধরেই নিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি ধারণা ছিল যে, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যারাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবে, তাদের জয় অনিবার্য। ২০১৪ সালের যে অভিজ্ঞতা সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আওয়ামী লীগ এত উৎসাহী ছিল বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে। কিন্তু বিএনপির আকস্মিকভাবে নির্বাচনে আসা এবং নাটকীয়ভাবে ঘোষণা দেয়া কোনমতেই নির্বাচন থেকে সরে যাবে না। তাতে কি আওয়ামী লীগ কি একটু হলেও নার্ভাস?
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন যে, হ্যা আওয়ামী লীগের মধ্যে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়েছে যাতে মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ নির্বাচন নিয়ে কিছুটা হলেও মনস্তাত্বিক ভাবে পিছিয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের বেশ কিছু প্রার্থীর মধ্যে অস্বস্তি এবং নার্ভাসনেস দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগে যে অস্বস্তি এবং নার্ভাসনেস তার মূল কারণগুলো হল:
১. অতি আত্মবিশ্বাস: আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সেই সময় যারা এমপি হয়েছেন, তারা আশা করেননি এই সংসদ পাঁচ বছর মেয়াদে থাকবে। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ৫ বছর দেশ পরিচালনা করেছে। এরফলে আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি অতি আত্মবিশ্বাস তৈরী হয়েছিল। আওয়ামী লীগ মনে করেছিল, এবারও বিএনপি শেষ পর্যন্ত হয়তো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এই অতি আত্মবিশ্বাসের কারণে হঠাৎ করে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ আওয়ামী লীগকে কিছুটা হলেও নার্ভাস করেছে।
২. তৃণমূলের বিভক্তি: আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১০ বছর ক্ষমতায় আছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে যেটা হয় সেটা হলো, রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা বৃদ্ধি পায় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। আওয়ামী লীগের এখন প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় একাধিক ব্যক্তি রয়েছেন যারা নিজেদের মনে করেন তারা সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য। এবার শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বিদ্রোহ দমন করতে পারলেও, কর্মীদের যে বিদ্রোহ এবং অসন্তোষ, তা এখন পর্যন্ত প্রশমন করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। দলটি নির্বাচনের মাঠে যাবে একটি বিভক্ত দল নিয়েই। এই বিভক্ত দল নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে কতটা সুবিধা দিবে তা নিয়ে অস্বস্তিতে আছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
৩. দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার সমস্যা: তৃতীয় বিশ্বের যেকোন রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে সেই রাজনৈতিক দলটি জনপ্রিয়তা হারাতে বাধ্য হয়। কারণ জনগণের যে পর্বতসম চাহিদা এবং যে আকাঙ্খা, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা চলতে পারে না। সমস্ত কার্যক্রম সে মতো হয় না। তাছাড়া ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় তাদের বিভিন্ন কাজকর্ম জবাবদিহিতার আওতায় আসে না বলে জনমনে নানা রকম অসন্তোষ তৈরী হয়। বিগত ১০ বছরে দেখা গেছে যে আওয়ামী লীগের একাধিক এমপির বিরুদ্ধে স্থানীয় পর্যায়ে নানা দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসসহ নানা অভিযোগ উঠেছিল। এই সমস্ত অভিযোগগুলোর ব্যাপারে জনগণ সুস্পষ্ট সমাধান পায়নি বলেই অনেকে মনে করেন। যার ফলে নির্বাচনে মাঠে জনগণ এই সমস্ত অভিযোগগুলোর ব্যাপারে একটা পক্ষপাত আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নিবে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ধারণা করছে। সেটা আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা কিছুটা হলে জানেনও। সেজন্য আওয়ামী লীগ কিছুটা হলেও নার্ভাস।
৪. বেশি মাত্রায় প্রশাসন এবং আমলা নির্ভর: আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার কারণে প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আওয়ামী লীগ এ সময়ে সাংগঠনিক নির্ভরতার চেয়ে আমলা- আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসনের উপর বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কিন্তু এই প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা শেষ পর্যন্ত কতটা আওয়ামী লীগের পক্ষে থাকবে তা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যেই সংশয় রয়েছে। এটা নিয়েও আওয়ামী লীগ কিছুটা হলেও নার্ভাস।
৫. শেখ হাসিনার একক জনপ্রিয়তা: এটা লক্ষণীয় যে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বাধিক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। সর্বশেষ জরিপগুলোতে দেখা যায় যে, ৬৭ থেকে ৭০ ভাগ মানুষ শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে পছন্দ করছেন। কিন্তু সমস্যা হলো যে, আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা ছাড়া তৃতীয় কোন নেতা নেই। আওয়ামী লীগের এবার নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে হবে শেখ হাসিনার একক জনপ্রিয়তার উপর নির্ভর করে। কিন্তু শেখ হাসিনার একক জনপ্রিয়তা কি আওয়ামী লীগকে ৩০০ আসনে জেতাতে পারবে? এ নিয়ে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ ইমেজ সংকটে থাকা নেতার সংশয় রয়েছে। কারণ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে স্থানীয়দের একটি জনবিচ্ছিন্নতা তৈরী হয়েছে। শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তাই তাদের একমাত্র পুঁজি।
এই অস্বস্তি এবং নার্ভাসনেস নিয়েই নির্বাচনের মাঠে আওয়ামী লীগ যাচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা আশাবাদী তারা গত ১০ বছর ধরে যে উন্নয়ন করেছে, সে উন্নয়নের ধারবাহিকতা রক্ষার জন্য জনগণ তাদেরকে ভোট দিবেন। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, জনগণ এখন অনেক সচেতন হয়েছেন। গত এক দশকে যে উন্নয়ন হয়েছে। সে উন্নয়নের পক্ষেই রায় দিবে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।