নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৩০ পিএম, ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
বিএনপি আছে খালেদা নাই। যে রাজনীতিবিদ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে কখনোই পরাজিত হননি,তার মনোনয়নপত্র বৈধ হয়নি এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। আর রিটার্নিং অফিসার মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা যে আপিল করেছিল নির্বাচন কমিশনে ,সেই আপিলও খারিজ করেছেন চার নির্বাচন কমিশনার। আর দুর্ভাগ্য এই যে যখন টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে ব্রেকিং যাচ্ছিল বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের, তখন বিক্ষোভ ভাংচুর হচ্ছিল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ের সামনে। কর্মীরা কিন্তু ক্ষোভ জানায়নি দলীয় চেয়ারপারসনের মনোনয়নের চূড়ান্ত বাতিল নিয়ে । বরং চাঁদপুরের কচুয়ায় সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলনের সমর্থকরা ভাঙচুর করেছিল তাদের নেতাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় ।
তবে এটা ঠিক বিচারিক ও উচ্চ আদালতে দণ্ডিত হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যে এবারের নির্বাচনে অযোগ্য হবে , সে সম্পর্কে আগেভাগেই নিশ্চিত হয়েছিল বিএনপির হাইকমান্ড । তারপরও খালেদা জিয়ার মনোনয়ন দাখিল করা হয়েছিল বগুড়া -৬ ও ৭ এবং ফেনী-১ আসনে । যেসব আসন থেকে খালেদা জিয়া একাধিকবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়া এই প্রথমবার প্রার্থী হতে পারলেন না দলের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব নেওয়ার পর। খালেদা জিয়া ১৯৮১ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নিহতের পর দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন । কিন্তু তারপর ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। দলটি ১৯৮৮ এবং ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনেও অংশ নেয়নি। কিন্তু এ ছাড়া ১৯৯১ ,১৯৯৬, ১৯৯৬ ( ১৫ ফেব্রুয়ারি ) ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনের প্রতিটিতেই খালেদা জিয়া একাধিক আসনে জয়ী হয়েছিলেন। জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিলের বিরুদ্ধে যে আপিল হয়েছিল নির্বাচন কমিশনে সেই আপিলে শুধু নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ইতিবাচক মত দিয়েছিলেন। তিনজন কমিশনার বিপক্ষে মত দিয়েছিলেন। ফলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তিন কমিশনারের মতের সঙ্গে একমত পোষণ করে রিটার্নিং অফিসারের মনোনয়ন পত্র বাতিলের সিদ্ধান্তের পক্ষে রায় দিয়ে আপিল খারিজ করেছেন। ফলে চূড়ান্তভাবে বাতিল হয়েছে খালেদা জিয়ার তিনটি আসনের মনোনয়ন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেই তার দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তাই এখনই বলা যাচ্ছে না ,বিএনপি জয়ী হলে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী আর হেরে গেলে কে হবেন বিরোধী দলীয় নেতা। শুধু কারাগারে থাকাই নয় ,এবারের আদালতে দণ্ডিত হওয়ার কারণে যে খালেদা জিয়া যে প্রার্থী হতে পারলেন না , তা নিয়ে জোরালো কোনো প্রতিবাদও করল না বিএনপি। যদিও দলের শীর্ষ নেতারা বলছিলেন তারা নির্বাচনে অংশ নেয়ার পাশাপাশি রাজপথের আন্দোলনও অব্যাহত রাখবেন। নির্বাচন কমিশন যে খালেদা জিয়ার মনোনয়ন অবৈধ বলে চূড়ান্ত রায় দিলেন সে সম্পর্কে বিএনপি নেতারা তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়াও দেখাতে পারলেন না, কারণ তখন দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ভাংচুর চালাচ্ছিলেন দলের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে। এবার ৩০০ আসনের জন্য বিএনপি ছয় শতাধিক নেতাকে সম্ভাব্য প্রার্থী বলে মনোনয়নের চিঠি দিয়েছিল। এ নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে শনিবার। কার্যালয় ভাংচুর ও তালা লাগানোর মত ঘটনাও ঘটে। তাহলে কি এটাই ঠিক যে খালেদা জিয়া ছাড়া এলোমেলো বিএনপি। আর এটা চরমে দাঁড়ায় যখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনও একাধিক মামলায় দণ্ডিত হওয়ার কারণে দেশে আসতে পারে না।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়ার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তারেক জিয়া তার পছন্দের ব্যক্তিদেরকে দলে রাখছেন। অপছন্দের ব্যক্তিদেরকে দল থেকে বের করে দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে এবং এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা দলের ভিতরে চলছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং কোন্দল।
সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন নির্বাচিত হয়েছিলেন। দল তাকে আদেশ করেছিল দায়িত্ব গ্রহণ না করার জন্য। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির পদটি গ্রহণ করেন। আর তার এই পদ গ্রহণের কারণে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম তাকে অব্যাহতি দিয়েছিল। কিন্তু এই অব্যাহতি শেষ পর্যন্ত টেকেনি। এখন তাকে দলে রাখার সিদ্ধান্ত যেমন নেওয়া হয়েছে, তেমনই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তারেক জিয়ার এই সিদ্ধান্তে বিএনপির আইনজীবীদের একাংশ যারা মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিরুদ্ধে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে। বিশেষ করে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আলীসহ সিনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, তারেক জিয়ার নির্দেশেই তারা খোকনের ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আবার তারেক জিয়াই তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেন। মাঝখান থেকে তারেক জিয়া তাদেরকে অসম্মান করবেন বলেও এই সিনিয়র আইনজীবী মনে করেন।
তারেক জিয়ার পরামর্শেই তারা মাহবুব উদ্দিন খোকনকে দায়িত্ব না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারেক জিয়াই এখন মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঙ্গে কথা বলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব পদে যেমন আছেন, তেমনই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদেও বহাল থাকছেন।
বিএনপির মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে মাহবুব উদ্দিন খোকন যদি নির্বাচন করে এবং জিতে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে তাহলে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীরা কী দোষ করল? বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত হল বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। আর এই ধারাবাহিকতায় বিএনপির বিভিন্ন পেশাজীবীদের নির্বাচনও বর্জন করছে। এর আগে বিএনপি নিয়ন্ত্রিত ড্যাব চিকিৎসকদের বিএমএ নির্বাচনও বর্জন করেছিল।
প্রকৌশলীদের নির্বাচনেও বিএনপি সরে গিয়েছিল। আর এরকম একটি পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কেন বিএনপি অংশগ্রহণ করল? সেটি যেমন একটি বড় প্রশ্ন, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হল যে- একই সিদ্ধান্ত একেক জনের ব্যাপারে এক রকম হবে কেন? এ নিয়ে বিএনপির নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন?
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ দলের কিছু বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদেরকে বলেছেন, এই সমস্ত কীভাবে হচ্ছে আমি জানি না। আপনাদের যদি কোনও কিছু বলার থাকে আপনারা লন্ডনে যোগাযোগ করেন। এখন বিএনপিতে কেউ দায় নিতে চাচ্ছে না। কেউ জানছেও না যে কাকে কখন কীভাবে বহিষ্কার করা হচ্ছে। যার ফলে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে দলটির মধ্যে।
উপজেলা নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করেছেন সে রকম ৭৩ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, উপজেলা নির্বাচন বা স্থানীয় সরকার নির্বাচন একটি নির্দলীয় ধরনের নির্বাচন। এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক তারা ব্যবহার করবে না।
অনেক বিএনপি নেতা মনে করেন যে, দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তটাই সঠিক ছিল। কিন্তু কেউ যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে সেটি তার নিজস্ব ব্যাপার। এ জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা বাঞ্ছনীয় নয় বলেই বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা মনে করেন। আর একারণেই বিএনপির সব নেতারাই হাল ছেড়ে দিয়েছেন এবং তারা এখন তিক্ত-বিরক্তও বটে।
বিএনপি রাজনীতি মির্জা ফখরুল তারেক জিয়া ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির সভা উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়ার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তারেক জিয়া তার পছন্দের ব্যক্তিদেরকে দলে রাখছেন। অপছন্দের ব্যক্তিদেরকে দল থেকে বের করে দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে এবং এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা দলের ভিতরে চলছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং কোন্দল।