নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৮
এরশাদকে নিয়ে টাগ অব ওয়ারে শেষ পর্যন্ত জিতল বিএনপি। আজ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মোট ১৬১টি আসনে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই আসনগুলোতে জাতীয় পার্টি তাঁদের প্রার্থীদের প্রত্যাহার করেনি। মহাজোটের পক্ষ থেকে জাতীয় পার্টিকে ২৯টি আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট না হয়ে জাপা আরও ১৩২টি আসনে প্রার্থিতা বহাল রেখেছে। জাতীয় পার্টির কাছে এটুকুই চেয়েছিল বিএনপি। বিএনপি নয় তারেক জিয়া এরশাদকে এটুকু করার জন্যেই বড় অংকের অফার দিয়েছিলেন। তারেক জানতেন, এরশাদ এই লোভ সংবরণ করতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত তারেকের অনুমানই সঠিক হলো। দেখা যাচ্ছে যে, ১৩২টি আসনে জাতীয় পার্টি তাঁদের প্রার্থীদের বহাল রেখেছেন, তার ৭২টি আওয়ামী লীগের জন্য সম্ভাবনাময় ছিল। এর ফলে, এই আসনগুলোতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের এক জটিল সমীকরণে পড়তে হবে। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছে, যেহেতু গত দশ বছর আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি গাঁটছড়া বেধে আছে। ফলে ত্রিমুখী লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকে ভাগ বসাবে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিটি নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াইয়ে অর্থাৎ আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আওয়ামী লীগ। বৃহত্তর রংপুর, বৃহত্তর সিলেটে জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকা মানেই আওয়ামী লীগের ঝুঁকি। ২০০১ সালে নৌকা প্রতীকে ভোট বাড়লেও ত্রিমুখী লড়াইয়ের কারণে, আওয়ামী লীগ মাত্র ৬২ আসন পেয়েছিল। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি বিএনপির ইঙ্গিতে একা নির্বাচন করেছিল। বিএনপি এরশাদকে গ্রেপ্তার থেকে দূরে রেখেছিল। মঞ্জুর হত্যা মামলাও চালু করেনি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টি মহাজোটের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন করেছিল। মহাজোটের বাইরে জাপা কোনো একক প্রার্থী দেয়নি।
এবার নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরুর অনেক আগে থেকেই তারেক জিয়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। ঢাকায় এরশাদের ছোট ভাই এবং জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি এবং তারেকের উদ্দেশ্য ছিল জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ থেকে আলাদা করা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে বিএনপি উদারপন্থী এবং প্রগতিবাদী ভোটের একটি ভাগ নেয়। অন্যদিকে জামাতকে আগলে রেখে ইসলামপন্থীদের ভোটও ধরে রাখে। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি জামাত আলাদা হলে লাভ হয় আওয়ামী লীগের। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টি আলাদা হলে, লাভ হয় বিএনপির। তাই নির্বাচনের কৌশলের খেলায় আওয়ামী লীগকে হারিয়ে দিল বিএনপি। এর ফলে আওয়ামী লীগের ঝুঁকিপূর্ণ আসন বাড়ল। মহাজোটগত ভাবে নির্বাচন করলেও আওয়ামী লীগের ৫৪ টি আসন ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। এখন ১৩২ টি আসনে জাতীয় নির্বাচন করায় সেই আসনগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেল। ১৮৬ টি ঝুঁকিপূর্ণ অনিশ্চিত আসন নিয়ে নির্বাচনের মাঠে আওয়ামী লীগ কি শুরুতেই হোঁচট খেল?
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়ার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তারেক জিয়া তার পছন্দের ব্যক্তিদেরকে দলে রাখছেন। অপছন্দের ব্যক্তিদেরকে দল থেকে বের করে দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে এবং এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা দলের ভিতরে চলছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং কোন্দল।
সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন নির্বাচিত হয়েছিলেন। দল তাকে আদেশ করেছিল দায়িত্ব গ্রহণ না করার জন্য। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির পদটি গ্রহণ করেন। আর তার এই পদ গ্রহণের কারণে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম তাকে অব্যাহতি দিয়েছিল। কিন্তু এই অব্যাহতি শেষ পর্যন্ত টেকেনি। এখন তাকে দলে রাখার সিদ্ধান্ত যেমন নেওয়া হয়েছে, তেমনই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তারেক জিয়ার এই সিদ্ধান্তে বিএনপির আইনজীবীদের একাংশ যারা মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিরুদ্ধে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে। বিশেষ করে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আলীসহ সিনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, তারেক জিয়ার নির্দেশেই তারা খোকনের ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আবার তারেক জিয়াই তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেন। মাঝখান থেকে তারেক জিয়া তাদেরকে অসম্মান করবেন বলেও এই সিনিয়র আইনজীবী মনে করেন।
তারেক জিয়ার পরামর্শেই তারা মাহবুব উদ্দিন খোকনকে দায়িত্ব না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারেক জিয়াই এখন মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঙ্গে কথা বলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব পদে যেমন আছেন, তেমনই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদেও বহাল থাকছেন।
বিএনপির মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে মাহবুব উদ্দিন খোকন যদি নির্বাচন করে এবং জিতে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে তাহলে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীরা কী দোষ করল? বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত হল বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। আর এই ধারাবাহিকতায় বিএনপির বিভিন্ন পেশাজীবীদের নির্বাচনও বর্জন করছে। এর আগে বিএনপি নিয়ন্ত্রিত ড্যাব চিকিৎসকদের বিএমএ নির্বাচনও বর্জন করেছিল।
প্রকৌশলীদের নির্বাচনেও বিএনপি সরে গিয়েছিল। আর এরকম একটি পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কেন বিএনপি অংশগ্রহণ করল? সেটি যেমন একটি বড় প্রশ্ন, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হল যে- একই সিদ্ধান্ত একেক জনের ব্যাপারে এক রকম হবে কেন? এ নিয়ে বিএনপির নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন?
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ দলের কিছু বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদেরকে বলেছেন, এই সমস্ত কীভাবে হচ্ছে আমি জানি না। আপনাদের যদি কোনও কিছু বলার থাকে আপনারা লন্ডনে যোগাযোগ করেন। এখন বিএনপিতে কেউ দায় নিতে চাচ্ছে না। কেউ জানছেও না যে কাকে কখন কীভাবে বহিষ্কার করা হচ্ছে। যার ফলে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে দলটির মধ্যে।
উপজেলা নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করেছেন সে রকম ৭৩ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, উপজেলা নির্বাচন বা স্থানীয় সরকার নির্বাচন একটি নির্দলীয় ধরনের নির্বাচন। এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক তারা ব্যবহার করবে না।
অনেক বিএনপি নেতা মনে করেন যে, দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তটাই সঠিক ছিল। কিন্তু কেউ যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে সেটি তার নিজস্ব ব্যাপার। এ জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা বাঞ্ছনীয় নয় বলেই বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা মনে করেন। আর একারণেই বিএনপির সব নেতারাই হাল ছেড়ে দিয়েছেন এবং তারা এখন তিক্ত-বিরক্তও বটে।
বিএনপি রাজনীতি মির্জা ফখরুল তারেক জিয়া ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির সভা উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়ার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তারেক জিয়া তার পছন্দের ব্যক্তিদেরকে দলে রাখছেন। অপছন্দের ব্যক্তিদেরকে দল থেকে বের করে দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে এবং এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা দলের ভিতরে চলছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং কোন্দল।