নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৪০ পিএম, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮
প্রতিবার নির্বাচনের একেবারে শেষ মুহূর্তে কিছু জমজমাট নাটকীয়তার সৃষ্টি হয়। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও এর ব্যতিক্রম নয়। নির্বাচনী আসনগুলোতে চূড়ান্তভাবে কারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সেটা নিশ্চিত হয়েছে নানা সংশয় ও নাটকীয়তার পর। ঢাকা-১ আসনও এর ব্যতিক্রম নয়। ঢাকা জেলার দোহার ও নবাবগঞ্জ নিয়ে গঠিত এই আসনটিতে ধানের শীষ প্রতীকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাক। গত শুক্রবার ২০৬ জনের চূড়ান্ত মনোনয়নের যে তালিকা প্রকাশ করে বিএনপি সেখানে তাঁর নাম ছিল না। মামলার কারণে রিটার্নিং কর্মকর্তা তার মনোনয়ন বাতিল করায় ওই তালিকায় তিনি ছিলেন না বলে জানা যায়। ইসিতে আপিল করে প্রার্থিতা ফেরত পান আশফাক। এরপর গতকাল রোববার তাঁর মনোনয়ন নিশ্চিত করে বিএনপি। অন্যদিকে এই আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন সালমান এফ রহমান। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন সালমা ইসলাম।
ঢাকা-১ আসনে সালমা ইসলাম এবং সালমান এফ. রহমানের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করা হচ্ছিল। তবে বিএনপির প্রার্থী খন্দকার আবু আশফাকের শক্ত অবস্থান জমজমাট ভোটযুদ্ধকে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে পরিণত করছে। সালমা ইসলাম মহাজোটের অন্যতম অংশীদার জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্যও তিনি। তবে সালমা ইসলামের সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো তিনি দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশনের অন্যতম কর্ণধার। শিল্পপতি ও যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল তাঁর স্বামী।
জাতীয় পার্টি ও মহাজোটের নানা হিসাব নিকাশের কারণে সালমা ইসলাম নিজ দল থেকে মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন তিনি। বলাই বাহুল্য, দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচনের মাঠে সালমা ইসলাম দুর্বল হয়ে পড়বেন এমনটা নয়। প্রবল পরাক্রমেই তিনি নির্বাচনী যুদ্ধে নেমে পড়েছেন।
ঢাকা-১ আসনটি জাতীয় সংসদের ১৭৪ তম আসন। আসনটির মোট ভোটার ৪ লাখ ৪০ হাজার ৪০৭জন। স্বাধীনতার পর থেকে ৯০ এর আগে পর্যন্ত এই আসনে কোনো দলেরই একক আধিপত্য ছিল না। তবে ১৯৯১ সাল থেকে টানা তিনটি নির্বাচনে জিতে এই আসনটিকে নিজের রাজত্ব বানিয়ে ফেলেন বিএনপির সাবেক নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে সেই রাজত্বের অবসান ঘটে। ওই নির্বাচনে ঢাকা-১ আসন থেকে জয় পান আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল মান্নান খান। তিনি বিএনপির আবদুল মান্নানকে প্রায় ৩৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। দুই দশক পর আসনটির দখল পায় আওয়ামী লীগ। তবে ২০১৪ সালে তা আবারো হাতছাড়া হয় তাদের।
জনপ্রিয়তার দিক থেকে সালমান, সালমা এবং আশফাক তিনজনই প্রায় সমানে সমান। এর আগে সালমান এবং সালমা দুজনই ঢাকা-১ আসন থেকে একবার করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে সালমা আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান খানকে পরাজিত করেন। অন্যদিকে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির নাজমুল হুদার কাছে হেরে গিয়েছিলেন সালমান এফ রহমান। সেই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর দোহারে এক রকম অবাঞ্ছিতই হয়ে পড়েছিলেন সালমান এফ রহমান। এরপর পেরিয়ে গেছে অনেকগুলো বছর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও বদলে গেছে। বিএনপি থেকে বেরিয়ে নাজমুল হুদা আলাদা দল গঠন করেছেন। এই নির্বাচনে তিনি ঢাকা-১ আসনে সালমান এফ রহমানকে সমর্থন দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
ত্রিমুখী লড়াইয়ের কারণে ঢাকা-১ আসনের ভোটযুদ্ধ এবারের নির্বাচনে বাড়তি উত্তাপ ছড়াচ্ছে। জয় পেতে তিনজন প্রার্থীই তাদের সব শক্তি প্রয়োগ করবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই লড়াইয়ে শেষ হাসি কে হাসবেন সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।