নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বিএনপিতে এখন মীর জাফর বলে ডাকা হচ্ছে। বিএনপির একটি বড় অংশ মনে করছে, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য বিএনপিকে তিনি নির্বাচনের অসম যুদ্ধে নামিয়েছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, একের পর এক বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর হামলা হলেও মির্জা ফখরুল নীরব। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহু কবির রিজভীসহ বিএনপির তরুণ নেতৃত্বরা মনে করছেন এই নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপির কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হচ্ছে। মির্জা ফখরুল আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে জিয়া পরিবারকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র করছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের নেতা কর্মীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে। সম্প্রতি বিএনপি নেতৃবৃন্দ মির্জা ফখরুল আলমগীরের বিরুদ্ধে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র পাঁচ প্রমাণ তৈরি করেছে। এই পাঁচ প্রমাণ লন্ডনে তারেক জিয়াসহ দলের সিনিয়র নেতাদের দেওয়া হয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার যে পাঁচ অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, সেগুলো হলো-
১. নূন্যতম দাবি পূরণ ছাড়াই বিএনপিকে নির্বাচনে পাঠানো। যে নির্বাচনে পরাজয় ছাড়া কিছুই অর্জন করবে না বিএনপি। অথচ বিএনপি মহাসচিব সংলাপের পর নেতা কর্মীদের বলেছিলেন নির্বাচনে গেলে মামলা, হামলা, হয়রানি বন্ধ হবে। অভিযোগ হলো, মির্জা ফখরুল নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্তের পর মামলা, হামলা বেড়েছে, বন্ধ হয়নি। বিএনপির নেতারা বলছেন, ‘মীর জাফর’ ফখরুল জেনে বুঝেই ধ্বংসের জন্য এটা করেছেন।
২. বিএনপির কিছু নেতা অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির কর্মী এবং প্রার্থীদের উপর নির্বিচারে হামলা করছে। অধিকাংশ স্থানেই বিএনপির কর্মী এবং প্রার্থীরা মাঠেই নামতে পারছে না। অথচ মির্জা ফখরুল এবং তার অনুসারীরা দাপিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। মির্জা ফখরুলের গাড়ী বহরে একটাই ‘লোক দেখানো’ হামলা হয়েছিল। তারপর তিনি নির্বিঘ্নে প্রচারণায় আছেন। বাধাহীন প্রচারণা করছেন ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ বাছাই করা কিছু নেতা। রুহুল কবির রিজভীরা মনে করছেন, যেভাবে মির্জা ফখরুলের মামলা থেমে থাকে, সেভাবেই তার প্রচারণাও থাকে বাধাহীন।
৩. জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আজ যে নির্বাচনী ইশতেহোর দিয়েছে তার অনেকগুলো অংশ বিএনপির গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিএনপির গঠনতন্ত্রে সংসদে দুই কক্ষ সৃষ্টি, প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা নেই। কাউন্সিল ছাড়া গঠনতন্ত্র সংশোধনের এখতিয়ার কারো নেই। মির্জা ফখরুল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে সম্মতি দিয়ে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করেছেন।
৪. বিভিন্ন স্থানে সরকারের সাথে যোগসাজশে, সরকারের আকাঙ্খা অনুযায়ী দুর্বল প্রার্থী দেওয়া হয়েছে বলেও বিএনপিতে অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা-১২ তে বিএনপির প্রার্থী দুর্বল। ভালো প্রার্থী থাকার পরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে খুশি করতে এই আসনে দুর্বল প্রার্থী দেয়া হয়েছে। এরকম অন্তত ৩৭টি আসনে ফখরুল সরকারকে খুশি করতে দুর্বল প্রার্থী দিয়েছেন।
৫. নির্বাচনে প্রচারণা শুরু হবার পর, প্রার্থীদের কোনো খোঁজ খবরই নিচ্ছেন না মির্জা ফখরুল। তাঁর দুটি নির্বাচনী এলাকা ছাড়া আর কোথাও এখন পর্যন্ত প্রচারণা করেননি তিনি। এমনকি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ময়মনসিংহ সড়ক যাত্রাতেও অংশ নেননি মির্জা ফখরুল। বিএনপির নেতারা বলছেন, মির্জা ফখরুল এখন আওয়ামী লীগের পুতুল। আওয়ামী লীগ তাঁকে যেভাবে চালাচ্ছেন, সেভাবেই তিনি চলছেন।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন