নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
আজ দেশের অন্যতম প্রধান দুই রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছে। গতকাল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছে। সবার আগে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছে বামফ্রন্ট। আজ নির্বাচনী ইশতেহার দিলো বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী ইশতেহার পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অন্যান্য দলগুলোর চেয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনেক যৌক্তিক, বাস্তব সম্মত, প্রয়োগিক এবং জনআকাঙ্খার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। দেখা যায় যে, বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যে নির্বাচনী ইশতেহার। তা মোটামুটি একই। এই নির্বাচনী ইশতেহারে যতটা না বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা হয়েছে। যতটা না মানুষের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, অগ্রযাত্রার কথা বলা হয়েছে। তার চেয়ে বেশি করা হয়েছে সমলোচনা এবং নানা রকম শুদ্ধি অভিযানের গল্প। নির্বাচনী ইশতেহারে বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বেশি জোর দিয়েছে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, সংসদে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার মত বিষয়গুলোকে। কিন্তু সাধারণ মানুষের এইসব ব্যাপারে তেমন উৎসাহ নেই। সাধারণ মানুষ মনে করে, সংসদ দ্বি-কক্ষ হলো না এক-কক্ষ হলো সেটা মূল বিষয় না। মূল বিষয় হলো জনগনের কল্যান কতটুকু হলো। জনগনের অর্থনৈতিক অগ্রগতি কতটুকু হলো। সেই বিবেচনায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং বিএনপি যে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ঠ সংসদের প্রস্তাব করেছে এবং রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রস্তাব করেছে, তা তেমন ইতিবাচক হয়নি।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তার নির্বাচনী ইশতেহারে বয়সসীমা তুলে নেয়ার প্রস্তাব করেছে। একই প্রস্তাব করেছে বিএনপিও। যারা চাকরির প্রত্যাশি এবং এইসব নিয়ে গবেষণা করেন। তারা বলছেন, এটা মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। চাকরির বয়সসীমা যদি তুলে নেয়া হয়, তাহলে কোন বিবেচনায়? কোন মাপকাঠিতে চাকরিতে নিয়োগ হবে তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা হয়নি। এটাকে চাকরির প্রত্যাশিরাই অবাস্তব বলছে। বিশেষ করে তরুনরা এটাকে অসম প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র উন্মোচন বলে মনে করছে। কারণ একজনের চাকরির যদি কোন বয়সসীমা না থাকে। সেক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত প্রবীনরা তরুনদের চাকরির বাজারে কোনঠাসা করে ফেলবে। কাজেই বিএনপির এই নির্বাচনী ইশতেহারে চাকরির বয়সসীমা তুলে দেয়ার ব্যাপারটি বুমেরাং হয়েছে বলেই পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন।
বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে। এই ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠার কথা বিএনপি ১৯৯১ সালের নির্বাচনী ইশতেহারেও বলেছিল। ২০০১ এর নির্বাচনী ইশতেহারেও বলেছিল। কিন্তু বিএনপি বাস্তবে তা করেনি। কাজেই ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠার ফলে সেটার কি অগ্রগতি হবে। জনগনের কি কল্যান হবে, সে সম্বন্ধে কোন সুস্পষ্ট রুপরেখা নেই। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং বিএনপির নির্বাচনে অনেককিছুই করা হবে, অরেককিছু দেয়া হবে বলা হচ্ছে। কিন্তু এ সুনির্দিষ্ট রুপরেখা এবং রুপপরিকল্পনা বলা হয়নি। এগুলো তাই বাস্তবসম্মত নাকি শুধুমাত্র চটকদার শ্লোগান, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ কিছু সুনির্দিষ্ট কর্মসূচী প্রয়োগ করেছে। কতসালের মধ্যে তারা কি উন্নয়ন করবে। কত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করবে। কতটুকু কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে। কি ধরনের প্রশিক্ষন নিবে। ইত্যাদি বাস্তবসম্মত কর্মসূচী প্রধান করেছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতিহার অনেকে পর্যালোচনা করে বলছেন, যেহেতু আওয়ামী লীগ ১০ বছর ক্ষমতায় ছিল এবং একটি নির্দিষ্ট অবকাঠামোয় থেকে তারা একটি অগ্রগতির ধারায় এগিয়ে নিয়ে গেছে দেশকে। সেজন্য তারা সুনির্দিষ্টভাবে জানে কি করতে হবে। জনআকাঙ্খার সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মসূচী তারা দিতে পেরেছে।
বিশেষ করে তরুনদের আত্নকর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি। নতুন নতুন প্রশিক্ষনের মত বিষয়গুলো জনমনে আশার সঞ্চার করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং ইন্টারনেট সুবিধা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন তরুন বান্ধব কর্মসূচী এই নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ অন্যদের কে পিছিয়ে ফেলেছে। এছাড়াও এই নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রী যে ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছে ও দু:খ প্রকাশ করেছেন। সেটা জনমনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
অথচ বিএনপি তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত যে বিভৎস নারকীয়তা করেছিল এবং তাণ্ডব করেছিল। জনবিরোধী কর্মকাণ্ড করেছিল। সেটার জন্য জাতীর কাছে ক্ষমা চায়নি। বরং বিএনপি বলেছে, এই নির্বাচন খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়ার সম্মান রক্ষার নির্বাচন। তারেক জিয়ার মত এমন একজন বিতর্কিত ব্যাক্তিকে নির্বাচনী ইশতেহারে নিয়ে আসার ফলে জনমনে আশংকা তৈরী হয়েছে, বিএনপি এবং জামাত যদি নির্বাচনে আসে তাহলে কি ২০০১-০৬ এর মত পরিস্থিতি আবার তৈরী হবে?
সবগুলো দলের নির্বাচনী ইশতেহার পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় , নির্বাচনী লড়াইয়ের প্রথম পর্বে আওয়ামী লীগই জয়ী হলো। কারণ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারই বেশি জনবান্ধব, জনগ্রহনযোগ্য এবং বাস্তবসম্মত বলে বিভিন্নমহল মত দিয়েছে।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।