নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ০৭ জানুয়ারী, ২০১৯
আওয়ামী লীগ যখন চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করলো, সেদিনই রাজপথে গার্মেন্টস শ্রমিকরা। বেতন ভাতার দাবীতে তারা রাজপথ অবরোধ করেছিল উত্তরায়। সমাজ বিজ্ঞানে বলে, চেনা শত্রুর মৃত্যু হলে অচেনা শত্রু তৈরী হয়, এরা চেনা শত্রুর চেয়েও ক্ষতিকর। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বলে, যখন বিরোধী শক্তি লুপ্ত হয় তখন রাষ্ট্রে নানা রকম ভয়ংকর বিরোধী পক্ষ তৈরী হয়। নানা পেশাজীবি গোষ্ঠী, বিভিন্ন শ্রেনী অরাজনৈতিক দাবী নিয়ে মাঠে নামে। নতুন আওয়ামী লীগ সরকারকে এরকম অচেনা শত্রুর সঙ্গে লড়াই করতে হবে।
আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলো। এখন দেশ বিরোধি দল শূন্য। ২৮৮ আসন পেয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। ২০১৪-এর চেয়ে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ২০১৪-তে বিএনপি নির্বাচন করেনি। তাই সহজেই তারা বলতে পেরেছে, আমরাও কম জনপ্রিয় নই। তাছাড়া সে সময় তাদের সামনে ছিলো পাঁচ পাঁচটা সিটি নির্বাচনের টাটকা স্মৃতি। আন্দোলনে ব্যার্থ হলেও, তাদের যে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা আছে এটা সবাই বিশ্বাস করতো। কিন্তু এবার বিএনপি রিক্ত, জীর্ন। ভোটের লড়াইয়ে তারা ভিখারিতে পরিণত হয়েছে। তারা এতোই হতাশ যে, আন্দোলন তো দূরের কথা, একটা ভালো প্রতিবাদের শক্তিও নেই তাদের। এরকম একটি রাজনৈতিক পরিবেশ আপাতঃ শান্তির এবং নিরুপুদ্রব মনে হলেও বাস্তবে অনিশ্চিত এবং ভয়ংকর। এ সময়ই নানা অপরাজনীতি এবং অন্তর্ঘাতি শক্তি তৎপর হয়। নানারকম অন্তর্ঘাতমূলক কাজে ব্যবহৃত হয় শ্রেণী পেশার মানুষ।
ইন্দিরা গান্ধী যখন বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতার ফিরে আসেন, তখন তাঁর ঘাতক হয় তাঁরই বিশ্বস্ত দেহরক্ষী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয় তাঁর পর্বত প্রমাণ জনপ্রিয়তার মধ্যে। যখন রাজনৈতিকভাবে তাঁকে পরাজিত করা সম্ভব নয় বুঝে ফেলে শত্রু পক্ষ তখনই তারা নৃশংস ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নেয়। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করা অসম্ভব। তাই ষড়যন্ত্র বাড়বে। এই ষড়যন্ত্রই হলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় ‘অচেনা শত্রু’। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই হয় আদর্শ দিয়ে, কর্মসূচি নিয়ে। কিন্তু অচেনা শত্রুর সঙ্গে লড়াইয়ের কৌশল এখনও অনাবিস্কৃত। এবার আওয়ামী লীগকে লড়তে হবে অচেনা শত্রুর সঙ্গে। লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের সন্তান কিংবা অজানা কেউ এই অচেনা শত্রুর চালিকাশক্তি হবে।
আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মন্ত্রীত্ব বঞ্চিত হয়েছেন। অনেক ত্যাগী পরীক্ষিত নেতা মনোনয়ন পাননি। দশবছর ক্ষমতায় থাকা দলটির তৃণমূলের মধ্যে হতাশার দীর্ঘশ্বাস। পাওয়া না পাওয়ার হিসাবের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। এসময় দলের ত্যাগীরা আড়ালে চলে যায়। সংগঠন গুরুত্ব হারায়। এরকম পরিস্থিতিতে অচেনা শত্রুরা ডালপালা মেলার সুযোগ পায়। মতলববাজ, অনুপ্রবেশকারীরা দলে ভিড় করবে। এটাকে রাজনীতির পরিভাষায় বলা হয় ঘুণে ধরা। দলে যখন ঘুণ ধরে তখন অচেনা শত্রুরা পাখা মেলে। ৭৫ এ আওয়ামী লীগেও ঘুণে ধরেছিল।
যেহেতু রাজনৈতিক শক্তি মাঠে নেই। তাই দুর্বৃত্ত্বরা শ্রেনী পেশার সংগঠন গুলোকে ব্যবহার করতে উদ্যোগী হবে। গার্মেন্টস শ্রমিক, শিক্ষার্থী, শিক্ষক বা অন্য কোন পেশা ভিত্তিক সংগঠন গুলোকে উস্কে দেয়ার চেষ্টা হবে। কথায় কথায় সড়ক অবরোধ, রাস্তা দখলের মতো কর্মসূচী নিতে প্ররোচিত করা হবে। এসব দাবী দাওয়ার আন্দোলন যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, সে ব্যপারেও ব্যবহার করা হবে অচেনা শত্রুকে।
রাজনৈতিক বিরোধী দল নয়, অচেনা শত্রুকে মোকাবেলাই হবে নতুন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।