নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১২ জানুয়ারী, ২০১৯
নির্বাচনের পরে রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। এবার একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকল রাজনৈতিক দলই এবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বাম মোর্চা এবং আওয়ামী নেতৃত্বাধীন মহাজোট অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ছাড়া কেউই নির্বাচনের ফলাফলকে গ্রহণ করেনি। নির্বাচনকে নজিরবিহীন কারচুপি এবং জালিয়াতির নির্বাচন বলে অভিযোগ করেছে। এই প্রেক্ষাপটে রাজনীতিতে একটি নতুন মেরুকরণের সৃষ্টি হতে পারে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বিএনপি একাধারে ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। দুটি জোটই বিএনপি এখনও বহাল রেখেছে। বিএনপিকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে যে, তারা জামাত এবং ইসলামী দলগুলো থেকে আলাদা হয়ে একটি বৃহত্তর সরকারবিরোধী বৃহত্তর রাজনৈতিক মোর্চা গঠনের সুযোগ নিতে পারে। সেই মোর্চার রূপরেখা কেমন হতে পারে তা নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। জানা গেছে যে, ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপি যদি চলে আসে এবং সেখানে ২০ দলীয় জোটের ইসলামী দলগুলো ছাড়া যে শরীক দলগুলো আছে তারা যদি যুক্ত হয় সেক্ষেত্রে বাম মোর্চা এই ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে শামিল হতে পারে। ন্যূনতম ইস্যুতে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে একটি আন্দোলনের সূচনা করতে পারে। বাম মোর্চা ইতিমধ্যে গতকাল একটি গণশুনানি করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রত্যাখান করেছে। এটা নজিরবিহীন কারচুপি এবং ভোট জালিয়াতি হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
একই কথা বলছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও। একটি সূত্র বলছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কয়েকজন নেতা বাম মোর্চার সঙ্গে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বৃহত্তর ঐক্যের জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল। সেক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে থাকা বিএনপির ব্যাপারে বাম মোর্চা আপত্তি জানিয়েছে বলে জানা গেছে। বাম মোর্চা বলেছে যে, জামাত বা ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত থাকবে তাদেরকে সঙ্গে তারা ঐক্য করবে না।
এদিকে নির্বাচনের পর বিএনপিকে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। তারা সবাই বিএনপিকে অবিলম্বে জামাতের সঙ্গ ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছে। এই পরামর্শের প্রেক্ষিতেই বিএনপি এখন ২০ দলকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে। ২০ দলের মধ্য থেকে জামাত এবং ইসলামী দলগুলোকে আলাদা করে বাকি দল বিজেপি, কল্যাণ পার্টি, ন্যাপ, এলডিপিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে নিয়ে আসার জন্য বিএনপির একটি অংশ চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। আর সেটা হলে ২০ দল বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং সেখান থেকে ৪/৫টি দল ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেবে।
নির্বাচনের আগের দিনগুলোতে দেখা গেছে, ২০ দলের কর্মসূচিতে জামাত ও ইসলামী দলগুলো ছাড়া বাকি অনেক দলই অংশগ্রহণ করেছিল। সেই লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে বড় করার একটি আয়োজন চলছে। ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচনের পরই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কার্যক্রমের নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। আমরা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে একটি বৃহত্তর প্লাটফর্ম গড়ার চেষ্টা করছি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। আমরা জামাতের সঙ্গে কোন ঐক্য করতে পারি না। বিএনপি আমাদের সঙ্গে এককভাবে যুক্ত হয়েছে। তবে ২০ দলের যেসকল দল মৌলবাদী নয় এবং যারা সেক্যুলার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে তাদেরকে নিয়ে জোট গঠনে কোন সমস্যা নেই বলে অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী জানান।
একই ভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কয়েকজন নেতা বামমোর্চার সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে। তারা নির্বাচন বাতিলে এবং নতুন নির্বাচনের দাবিতে একটি বৃহত্তর মঞ্চ এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করা যায় কি না সে ব্যাপারে মতামত চেয়েছে। বামমোর্চা বলেছে যে, আদর্শিক ব্যাপারে তাদের সঙ্গে অনেক পার্থক্য রয়েছে। তবে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া সম্ভব নয়। তাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের জন্য বামমোর্চা নীতিগতভাবে রাজি হয়েছে বলে জানা গেছে।
যোগাযোগ করা হলে কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, কোন জোটে যাওয়ার কোন ইচ্ছা আমাদের নেই। তবে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর প্রমাণ হয়েছে যে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অসম্ভব ব্যাপার। এজন্যই আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে অভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে পারি। তবে সে আন্দোলনে অবশ্যই জামাত থাকা যাবে না। যেখানে জামাত থাকবে সেখানে বাম মোর্চা থাকবে না বলে সরাসরি জানিয়ে দেন তিনি। এর ফলে জামাত থেকে বিএনপিকে আলাদা করার চাপ আরও বেগবান হয়েছে। যদি শেষ পর্যন্ত ঐক্য নাও হয় তাহলে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে একটি বৃহত্তর মঞ্চ এবং অভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ন্যূনতম কর্মসূচিতে আন্দোলনের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একজন নেতা বলেছেন যে, এখনই বড় ধরনের কোন আন্দোলন নয়, বরং ধাপে ধাপে আন্দোলনের কথা আমরা চিন্তা করছি। প্রথমে জনসংযোগ, মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন এবং তারপর ধাপে ধাপে আন্দোলনের ব্যাপারে আমাদের নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছে। এই আন্দোলনে সকল বিরোধী দলকে আমরা সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছি।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৫ দফা দাবি নিয়ে জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠানের জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে ঐক্যফ্রন্টের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই দফাগুলো হলো:
১. ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে বাতিল করতে হবে।
২. ন্যূনতম সময়ের মধ্যে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠনের জন্য রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।
৩. বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ও অযোগ্য প্রমাণিত হয়েছে, তাই বর্তমান নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।
৪. নির্বাচনকালীন যে গ্রেপ্তার-হয়রানি হয়েছে সেগুলোর সমাধান করা। যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সেসব মামলা প্রত্যাহার করে সবাইকে মুক্তি দিতে হবে।
৫. অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সকলের মতামতে ভিত্তিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসনের ভূমিকার উপর একটি গ্রহণযোগ্য নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, ‘এই খসড়া কর্মসূচি নিয়ে আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করবো এবং ধাপে ধাপে আমরা এগুলো এগিয়ে নেবো’।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে
মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী
লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয়
নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত
অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে
এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক
বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও
এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
শুধু তাই নয়, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়া প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আগামী দিনেও কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মূলত মন্ত্রী-এমপিসহ স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে উপজেলা নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতেই আওয়ামী লীগ এমন কৌশল নিয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড তাপদাহে ১৪ দলে স্বস্তির বৃষ্টি
জানা গেছে, এবারের উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে শুরু থেকেই
সচেষ্ট ছিল আওয়ামী লীগ। এ কারণেই দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দিয়ে সবার জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত
করা হয়। তা সত্ত্বেও বিএনপি-জামায়াতসহ অনেক দল নির্বাচনের বাইরে থাকায় শেষ পর্যন্ত
এই নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হবে—তা নিয়ে সংশয় ছিল। বিশেষ করে সরকারের মন্ত্রী, সংসদ
সদস্য কিংবা স্থানীয়ভাব প্রভাবশালী নেতাদের হস্তক্ষেপে অনেক উপজেলায় তাদের পছন্দের
প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
বিশেষ করে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্য বা স্বজনরা অবাধে ভোটে দাঁড়াতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে আর কেউ প্রার্থী হতে চাইতেন না। এমন বিবেচনা থেকেই ভোটের মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন ও নিকটাত্মীয়দের নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তা সত্ত্বেও অনেক উপজেলায় ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন প্রভাবশালী প্রার্থীরা। তা সত্ত্বেও দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
আরও পড়ুন: নির্দেশ অমান্যকারী মন্ত্রী-এমপিদের সাধারণ ক্ষমা?
তাদের মতে, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের ভোট করার নির্দেশনা দিয়ে দল
সবার জন্য একটি বার্তা দিতে চেয়েছে। তা হলো, আওয়ামী লীগ অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক উপজেলা
নির্বাচন চায়। হাতেগোনা দু-চারটি বাদে মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্যরা নির্বাচনে অংশ
নিচ্ছেন না। তাদের যেসব আত্মীয়স্বজন প্রার্থী হয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই দীর্ঘদিন ধরে
দলীয় রাজনীতিতে অবদান রেখে আসছেন। তা ছাড়া দু-চারটি ব্যতিক্রম বাদে এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা কম। সব মিলিয়ে উপজেলা নির্বাচনে নিয়ে দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলেই
অনেক কেন্দ্রীয় নেতার ধারণা।
এ বিষয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘দলের বার্তা খুব পরিষ্কার, উপজেলা নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমন বার্তাই স্পষ্ট করেছেন। নির্বাচনকে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতেই এই কৌশল। এখন পর্যবেক্ষণ করতে হবে নির্বাচন কতটা প্রভাবমুক্ত হয়।’
আরও পড়ুন: মন্ত্রী-এমপিরা কেন দলের সিদ্ধান্ত মানছেন না
গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ৬২ টিতেই
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন করে জয়ী হন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্যে সিংহভাগই
আওয়ামী লীগ নেতা। ফলে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে যে দ্বৈরথ তৈরি হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনেও
তার প্রভাব পড়তে পারে বলে আওয়ামী লীগের আশঙ্কা। এ কারণেই দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না
দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নির্বাচনকে আরও গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত রাখতে আত্মীয়-স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতেও নির্দেশ
দেয় ক্ষমতাসীন দল। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়ে গেছেন এ ধরনের প্রার্থীরা।
নির্বাচন কমিশনের তপশিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায়, দ্বিতীয়
ধাপে ১৬১, তৃতীয় ধাপে ১১২ ও শেষ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার
তৃতীয় ধাপের মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনের হিসাব অনুযায়ী অন্তত অর্ধশতাধিক মন্ত্রী ও এমপির
স্বজন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে ৪৮০টি উপজেলার মধ্যে এই সংখ্যাকে খুব বেশি বলে মনে
করছে না আওয়ামী লীগ। এ কারণেই ঢালাওভাবে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে আপাতত বিরত থাকছে তারা।
গতকাল গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি
শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি
বলেন, ‘পারিবারিক ফর্মুলা কী? নিজের ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী, এই তো। তারপর হিসাব করে দেখেন,
কয়জন ছেলেমেয়ে, কয়জন স্ত্রী দাঁড়িয়েছে। এর বাইরে তো পরিবার ধরা হয় না। আমাদের
কথা হচ্ছে নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে।’
জানা গেছে, প্রতিটি সংসদীয় আসনে এক বা একাধিক উপজেলা রয়েছে। এলাকার
রাজনীতিতে এমপির পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যানের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। দ্বাদশ জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও অনেকে উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে হেরেছেন।
এ কারণে উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেন সংসদ সদস্যরা। নিজ পরিবার কিংবা বলয়ের
লোককে উপজেলা চেয়ারম্যান করতে সচেষ্ট তারা।
এ পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের নির্বাচনে
অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে
কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে তাদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও দলের
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ার করে দেন।
সূত্র জানায়, এরপরই মন্ত্রী এমপিদের স্বজনদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
জমা পড়ে দলের দপ্তরে। অনেকে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে
লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার আলোচ্যসূচিতেও
উপজেলা নির্বাচন ইস্যুটি অন্তর্ভুক্ত হয়। সাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রতিবেদনও চূড়ান্ত করেন।
তবে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাহী সংসদের সভায় এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।
বৃহস্পতিবার (০২ মে) সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নে অনেকটা নমনীয় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি বলেছিলাম (মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে)। কারণ হচ্ছে, আমরা চাইছি, নির্বাচনটা প্রভাবমুক্ত যেন হয়, মানুষ যেন স্বাভাবিকভাবে ভোটটা দিতে পারে। সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।’
আরও পড়ুন: ভোটের মাঠেই রয়েছেন মন্ত্রী-এমপির স্বজন ও বিএনপির প্রার্থীরা
এসব কারণে অনেকের ধারণা, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নেওয়ার হুমকি ও হুঁশিয়ারি রাজনৈতিক কৌশল।
আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মূলত বিএনপি নির্বাচনে
আসবে না জেনেই নির্বাচনকে জমজমাট ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়ার
সিদ্ধান্ত দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচনে যদি মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন
ঢালাওভাবে অংশ নেয়, তবে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে একপেশে হয়ে যাবে—এমন আশঙ্কায়
তিনি ওই কৌশল নিয়েছিলেন।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন কালবেলাকে বলেন,
‘আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো বার্তা দিয়েই দিয়েছেন। তার বার্তা
অনুযায়ী নির্বাচন যে-ই করুক, কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন
কঠোর ভূমিকা পালন করবে। উপজেলা নির্বাচনে কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না, যেহেতু
দল কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’
প্রভাবশালী নেতা আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের গত তিন সপ্তাহ ধরে লাগাতার ভাবে দলের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা যেন নির্বাচনে না দাঁড়ায় সে জন্য আহ্বান জানাচ্ছিলেন। এ জন্য তিনি কঠোর হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি বলছিলেন, যারা দলের নির্দেশনা লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু ব্যবস্থাগ্রহণ তো দূরের কথা তাদেরকে সতর্ক পর্যন্তও করা হয়নি। উল্টো ৩০ এপ্রিলে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এই বিষয় নিয়ে কোন আলোচনাই হয়নি।
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।