নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৯
গতকাল শনিবার সংলাপের আহ্বান করে ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু তাদের সেই আহ্বানকে হাস্যরসে পরিণত করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-নেতারা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন যে, এখন সংলাপের দাবি হাস্যকর। সারাবিশ্ব যখন এই নির্বাচনকে গ্রহণ করেছে তখন এই সংলাপ অর্থহীন। একই দিনে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, যিনি আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকও বটে, তিনিও এই সংলাপকে নিয়ে রসিকতা করেন এবং হাস্যরসে মাতেন। তিনি এটাকে অবাস্তব প্রস্তাব বলে নাকচ করে দেন।
কিন্তু ওইদিন রাতেই আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্যদের নিয়ে আয়োজিত বৈঠকে সংলাপের ব্যাপারে নিজের আগ্রহের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বলেন যে, নির্বাচনের আগে যে ৭৫টি দলের সঙ্গে তিনি সংলাপ করেছিলেন, সেই দলগুলোর সঙ্গে তিনি পুনরায় বসতে চান। তাদেরকে আপ্যায়ন করতে চান। নির্বাচনে যে বিজয় আওয়ামী লীগ পেয়েছে, এটা জনগণের বিজয় বলেই তিনি মনে করেন। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর সম্পূর্ণ ইউটার্ন নেন দলের সাধারণ সম্পাদক। আজ রোববার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের যৌথসভায় সংলাপের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর এই আগ্রহের কথা ওবায়দুল কাদের ব্যক্ত করেন। যা ওবায়দুল কাদের আগের বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত।
তাহলে ওবায়দুল কাদের আগের দিন কী বললেন? কিসের ভিত্তিতে তিনি বললেন সংলাপের দাবি হাস্যকর? প্রধানমন্ত্রী তার ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি, প্রজ্ঞায় অনেক আগেই অন্যান্য নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রীর মনে ভাষাই যদি দলের সিনিয়র নেতারা বুঝতে না পারেন তাহলে এটা দলের জন্য ভালো সংকেত নয়। অনেক রাজনীতিক মহল বলছেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেকে এখন বিশ্বনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, দলের চেয়ে তাঁর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। তাই প্রধানমন্ত্রীকে যখন কেউ কোনো বিষয়ে প্রস্তাব দেয়, তখন প্রধানমন্ত্রীর মতামত না নিয়ে আগ বাড়িয়ে মন্তব্য করা ঠিক না। চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর শপথ নিয়ে শেখ হাসিনা ‘রাষ্ট্রনায়ক’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যারা মন্ত্রী এবং নেতা, তাদের প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণতা, তার দূরদর্শিতা, তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা অনুধাবন করতে হবে। এটা না করে ইচ্ছেমতো নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করলে দল যেমন বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে তার চেয়ে তারাও নিজেরাই আরও বেশি হাস্যকর বস্তুতে পরিণত হন। এর আগেও আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী এবং নেতার বিরুদ্ধে অতিকথনের অভিযোগ এসেছিল। তাই নেতারা যদি সব বিষয়ে বুঝেশুনে কথা বলেন তাহলে দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। তারা নিজেরাও হালকা হন না।
যখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয় এবং সংলাপের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল, তখনও একই ধরনের পরিস্থিতি হয়েছিল। আগ বাড়িয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন নেতা সংলাপের প্রস্তাবকে নাকচ করেছিলো। কিন্তু নাটকীয়ভাবে প্রধানমন্ত্রী সংলাপে রাজি হন এবং ৭৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তিনি সংলাপ করেন। কাজেই প্রধানমন্ত্রীকে কোন রাজনৈতিক দল কোন প্রস্তাব দেয়, কোন দাবি-দাওয়া উত্থাপন করে, তখন সেটা প্রধানমন্ত্রী কীভাবে গ্রহণ করছেন সেটা বোঝার ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর সহকর্মীদের থাকা উচিত। সেটা বুঝতে না পারলে চুপ থাকাটাই শ্রেয়। আশা করি আওয়ামী লীগের প্রজ্ঞাবান নেতারা তাদের নেতার চিন্তা চেতনার সঙ্গে মানিয়ে চলার সক্ষমতা অর্জন করবেন।
বাংলা ইনসাইডার/এমআর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন