নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৯
আওয়ামী লীগের হেভিওয়েটদের সঙ্গে দুরত্ব তৈরি হয়েছে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের। ক্রমশই এই দুরত্ব প্রকাশ্য হচ্ছে। এবার নির্বাচনের পর গঠিত মন্ত্রিসভায় দলের সব হেভিওয়েটদের বাদ দেন প্রধানমন্ত্রী। কথা ছিলো, দলীয় কর্মকান্ডে তাঁদের গুরুত্ব বাড়ানো হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁরা যেন কথা বলেন, সে ব্যাপারেও সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু কার্যত সিনিয়র নেতাদের কর্মহীন করে রাখা হয়েছে। ওবায়দুল কাদের তার অনুগতদের দিয়েই দলের কর্মকান্ড চালাচ্ছেন। বিএনপির বিভিন্ন সমালোচনার জবাব দিচ্ছেন একাই। ১৪ দল নিয়ে সিনিয়রদের সঙ্গে তার অবস্থানগত পার্থক্য স্পষ্ট।
আওয়ামী লীগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণ সম্পাদকের কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট ৪ হেভিওয়েট। এরা হলেন, আমীর হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম এবং শেখ ফজলুল করিম সেলিম। এদের মধ্যে আমু এবং তোফায়েল আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। নাসিম এবং সেলিম প্রেসিডিয়াম সদস্য। মোহাম্মদ নাসিম ১৪ দলের সমন্বয়ক। দলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে তাঁদের মত বিরোধ প্রথম প্রকাশ্য হয় তিনদিন আগে। শহীদ মনসুর আলীর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ নাসিম আমন্ত্রণ জানান ১৪ দলের নেতাদের এবং তোফায়েল আহমেদকে। সেখানে বক্তারা, ১৪ দলকে টিকিয়ে রাখার ঐতিহাসিক প্রয়োজনের উপর গুরত্ব আরোপ করেন। পরোক্ষভাবে সেখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ১৪ দল নিয়ে সাম্প্রতিক কিছু অবস্থানের সমালোচনা করেন।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, ১৪ দল একটি উপলক্ষ মাত্র। সিনিয়র নেতারা দলের সাধারণ সম্পাদকের আচরণে এবং কথাবার্তায় অপমানিত বোধ করছেন। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, সিনিয়র নেতারা আশা করেছিলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক তাঁদের বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ নেবেন, পরামর্শ করবেন। দলীয় কার্যালয়ে আসার অনুরোধ করবেন। বিভিন্ন বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং করতে সিনিয়র নেতাদের অনুরোধ করবেন। কিন্তু দলের সাধারণ সম্পাদক এসব কিছুই করেন নি।’ আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রগুলো বলছে, ‘সিনিয়র নেতাদের সাথে টেলিফোনে কুশল বিনিময়েও অনাগ্রহী ওবায়দুল কাদের। দলের একজন সিনিয়র নেতা বলেছেন, ‘সবারই ভালো দিন থাকে, খারাপ দিন আসে। ভালো দিনে খারাপ সময়ের বন্ধুদের মনে রাখতে হয়। কিন্তু কাদের এখন তার খারাপ দিনগুলো ভুলে গেছেন।’ অন্য একজন নেতা বলেন, ‘আমরাই তো ওবায়দুল কাদেরকে নেতা বানাতে অবদান রেখেছি, এখন কাদের আমাদেরই অবসরে পাঠাতে চাইছেন।’
অবশ্য আওয়ামী লীগের কাদেরপন্থি নেতারা বলছেন, ‘আওয়ামী লীগের মূল শক্তি হলেন দলের সভাপতি। সব সিদ্ধান্ত তারই। সিনিয়রদের বসিয়ে রাখার সিদ্ধান্তও তাঁর। এখানে ওবায়দুল কাদেরের করনীয় আসলে কিছুই নেই।’ কিন্তু এর জবাবে অনেকে বলছেন, ‘ওবায়দুল কাদের তো নিয়মিতই নেত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন। নিজের লোকজনের জন্য নেত্রীর কাছে তদ্বিরও করছেন। কিন্তু সিনিয়রদের জন্য মুখ খুলছেন না। ওবায়দুল কাদের দলের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর দায়িত্বও বেশি। দলের বঞ্চিতদের খুশি করা। কর্মীদের চাঙ্গা রাখার দায়িত্ব তাঁর।’ সিনিয়র একজন নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি পরিবার। আর এই পরিবারের সবাইকে খুশি রাখার অন্যতম দায়িত্ব দলের সাধারণ সম্পাদকের।’ এ প্রসঙ্গে ঐ নেতা প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘২০০৮ সালে মন্ত্রিসভাতেও আমাদের রাখা হয়নি। তখন আশরাফ আমাদের ফোন করেছিলেন। আমাদের বাড়িতে এসে কথা বলে গিয়েছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জীবন সায়াহ্নে। এই বয়সে শুধু একটু সম্মান চাই। সেটাই কাদেরের কাছে আমরা চেয়েছিলাম। কিন্তু…’
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
ভারতের জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি ও প্রচারণা দেখতে বাংলাদেশ
থেকে আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। বুধবার (০১ মে)
আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে সাতটি ধাপে জাতীয়
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ক্ষমতাসীন বিজেপি এই নির্বাচনে তাদের সার্বিক প্রস্তুতি ও
প্রচারণা দেখানোর জন্য বিদেশি কিছু রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে
একমাত্র আওয়ামী লীগকে তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, ভারতে বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায়। অন্যদিকে,
বাংলাদেশে পরপর চারটি জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশভাবে
জয়লাভ করে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। এই সময়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে
যুগান্তকারী উন্নয়ন হয়েছে। এই উন্নয়ন পুরো পৃথিবীকে অবাক করেছে।
ভারতের ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে
শুধুমাত্র আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ
গণতন্ত্র ভারত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি যে আস্থাশীল এবং
আওয়ামী লীগকে যে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও তাদের প্রকৃত বন্ধু
মনে করে, এই আমন্ত্রণ সেই ইঙ্গিতই বহন করে।
বিজেপির নির্বাচনী প্রস্তুতি ও প্রচারণা পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশ
আওয়ামী লীগকে পাঠানো আমন্ত্রণপত্রে তারা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি পাঠাতে
অনুরোধ করেছে।
এই আমন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে দলের
তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং সংসদ সদস্য ড. সেলিম মাহমুদকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ভারত সফরে
মনোনীত করেছেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, এই সফরটি মূলত পাঁচ দিনের। ১
মে থেকে ৫ মে পর্যন্ত। সফরে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধির সঙ্গে বিজেপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের
বৈঠক রয়েছে। দিল্লির বাইরে বিজেপির নির্বাচনী প্রচারণা সরেজমিনে দেখানোর জন্য বিজেপি
আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিকে ছত্রিশগড়ে নিয়ে যাবে।
ভারতের নির্বাচন ১৯ এপ্রিল শুরু হয়েছে যা ১ জুন পর্যন্ত চলবে।
৪ জুন ভোটের ফলাফল ঘোষিত হবে।
ভারত নির্বাচন বিজেপি আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন