নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:০১ পিএম, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৯
আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি এবং জামাত এই নির্বাচন নিয়ে নতুন কৌশল করার চেষ্টা করছে। যদিও তারা বলেছে বর্তমান সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোন নির্বাচনে তারা অংশ নেবে না বাইরে থেকে কোন একজন প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে আওয়ামী লীগকে চমকে দিতে চায়। বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, তারা মনে করছে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর মানুষের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। মানুষ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি, সেটা নিয়ে তাদের মধ্যে চাপা বিক্ষোভ রয়েছে। এটাকে তারা এই নির্বাচনে কাজে লাগাতে চায়, আওয়ামী লীগ বিরোধী একজন প্রার্থী তারা দাঁড় করাতে চায় এবং তাকে সমর্থন দিতে চায়।
জামাতের একটি নির্দিষ্ট ভোট ব্যাংক থাকলেও বিএনপির নেতাকর্মীরা অন্য কোন প্রার্থীকে ভোট দেবে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যেমনটি হয়েছিল ২০০৪ সালে তৎকালীন ঢাকা-১০ (তেজগাও-রমনা) আসনের উপনির্বাচনে। সেসময় বিএনপির মোসাদ্দেক আলী ফালুর বিপক্ষে আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী না থাকলেও তারা বিকল্পধারার মেজর এমএ মান্নানকে সমর্থন দিয়েছিল। যদিও সে নির্বাচনে ফালু জয়লাভ করেন। একইভাবে বিএনপি এবং জামাতও কোন একজন প্রার্থীকে নীরবে সমর্থন দিয়ে নির্বাচনের সমীকরণ জটিল করতে চায়। তাদের সমর্থিত প্রার্থী যেন পুরোদমে প্রচার প্রচারণা চালাতে পারে, জনগণের সর্বোচ্চ সহযোগিতা পায় সেদিকে নজর দেবে বিএনপি জামাত।
নির্বাচনে ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী হিসেবে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলামের নাম ঘোষণা করেছে। এই নির্বাচনে যিনি নির্বাচিত হবেন যেহেতু তিনি মাত্র ১ বছর দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন তাই আতিকুল ইসলাম চেয়েছিলেন এই নির্বাচন যত কম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় তার জন্য ততো ভালো। এই নির্বাচনে অধিকাংশ দলের অনাগ্রহ থাকলেও আতিকুল ইসলামের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার কোন সুযোগ খুবই কম। ইতিমধ্যে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আনিসুর রহমান মনোনয়নপত্র কিনেছেন এবং তিনি জানিয়েছেন তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল হক রুবেল নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি প্রচারণাও শুরু করেছেন। তবে আতিকুলের মূল চ্যালেঞ্জ হতে পারেন ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী গাজী ইয়াকুব। ইতিমধ্যে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যে কোনো ভাবে তিনি নির্বাচনে থাকবেন। একইসঙ্গে তিনি বিএনপি এবং জামাতের সমর্থন পাওয়ার জন্য দল দুটির সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আওয়ামী লীগকে চাপে ফেলার জন্য বিএনপি-জামাতের সমর্থন গাজী ইয়াকুবের পক্ষেই যাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বাংলা ইনসাইডার/এমআর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন