নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৯
নির্বাচনের পর থেকেই টানাপোড়েন চলছে ১৪ দলের। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেখা পাননি ১৪ দলের নেতারা। ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিমও ছিটকে পড়েছেন মন্ত্রিসভা থেকে। তাই ১৪ দলের বৈঠকেও এখন অনাগ্রহ। এই পরিস্থিতিতে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি গণভবনে ১৪ দলের নেতারা চা চক্রের নিমন্ত্রণ পেয়েছেন। যদিও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এই চায়ের দাওয়াত প্রত্যাখান করেছে। বাম গণতান্ত্রিক মোর্চাও বলেছে তারা এই চা চক্রে অংশ নেবে না। ১৪ দল এই সুযোগটা নিতে চায়। তারা প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চায়।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন যে, ১৪ দলের ভান ভাঙাতে এই চা চক্র ভাল টনিক হিসেবে কাজ করবে। গত এক মাসে ১৪ দলের চেনা নেতারা অচেনা হয়ে গেছেন। তারা কর্মহীন। কেউ কেউ ভেতরে ভেতরে আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে উষ্ণা প্রকাশ করলেও প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলছে না। তারা একটু দেখতে চাচ্ছে।
নির্বাচনের পর ১৪ দলের শরিকরা অনেকগুলো ধাক্কা খেয়েছে। প্রথম ধাক্কাটি ছিল মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়া। দ্বিতীয় ধাক্কা খেলো যখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বললেন, ১৪ দলের শরিকদের বিরোধী দলে থাকাই ভালো। তৃতীয় ধাক্কাটি ছিল, নির্বাচনের পর আওয়ামী বিজয় সমাবেশে আমন্ত্রণ না পাওয়া। আর চতুর্থ ও সর্বশেষ ধাক্কাটি ছিলো, উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একলা চলো নীতি। ফলে ১৪ দলের অধিকাংশ শরিক দলই আওয়ামী লীগের উপর গোপনে গোপনে অসন্তোষ প্রকাশ করছে। কিন্তু তারপরও তারা মনে করছে যে, ১৪ দল থেকে সরে যাওয়া কিংবা আওয়ামী লীগে বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া ভালো সিদ্ধান্ত হবে না। তারা অপেক্ষা করছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি সাক্ষাতের। এ জন্য তারা চেষ্টা তদবিরও যে করেননি তা নয়। চেষ্টা করেও ১৪ দলের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ত সময় থেকে তাদের জন্য কিছু সময় বের করতে পারেননি। বরং এই চা চক্রে ১৪ দলের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চায়ের ফাঁকে ফাঁকে কথা কয়েকটি বিষয়ে কথা বলতে চান।
১৪ দলের একাধিক নেতা বলেছেন যে, তারা মোটামুটি ৫টি বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চা চক্রে কথা বলতে চান।
(১) ১৪ দলের ভবিষ্যৎ কী: ১৪ দলের ভবিষ্যতের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ১৪ দলের নেতারা একটি সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা চাইবেন। যেহেতু ১৪ দল গঠিত হয়েছিল এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে। সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ২০০১ সালের পর ১৪ দল গঠিত হয়েছিল। যে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ১৪ দল গঠিত হয়েছিল তার বাস্তবতা এখনও রয়ে গেছে। এ বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি দিক নির্দেশনা চাইবেন।
(২) জাতীয় সংসদে ১৪ দলের ভূমিকা: একাদশ জাতীয় সংসদে ১৪ দলের ভূমিকা কী হবে সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকেই শুনতে চাইবেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কিংবা অন্য কোন নেতার বক্তব্যে নয়, ১৪ দলের মূল নেতা শেখ হাসিনার কাছ থেকেই সংসদের ১৪ দলের ভূমিকা সম্পর্কে শুনতে চান তারা।
(৩) সরকাররে কর্মকাণ্ডে ১৪ দলের ভূমিকা: সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি ও কর্মকাণ্ডে ১৪ দল কী ভূমিকা পালন করবে, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর একটি সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা তারা চাইবেন।
(৪) জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ দমনে ১৪ দলের ভূমিকা: জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবাষ্প এখনও রয়ে গেছে সেখানে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে ১৪ দল কী ভূমিকা পালন করতে পারে সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনা চাইবেন ১৪ দলের নেতারা।
(৫) রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মসূচি: আওয়ামী লীগে পাশাপাশি বিভিন্ন ইস্যুতে ঐক্যমতের ভিত্তিতে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মসূচি দিতে পারবে কি না সে ব্যাপার প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব জানতে চাইবেন।
৭ জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হওয়ার পর থেকে ১৪ দলের কোন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। যার ফলে এই চা চক্রটিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ২০ দল, বিএনপি, বাম ফ্রন্ট আসুক বা না আসুক ১৪ দলের আসা অন্য রকম একটি তাৎপর্য বহন করছে। এই চা চক্র শেষ পর্যন্ত ১৪ দলের মান ভাঙানোর চা চক্র হিসেবে পরিণত হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।