নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ০১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। এই সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে একটি প্রশ্ন ক্রমশই বড় হয়ে উঠছে, আওয়ামী লীগ কি আমলানির্ভর হয়ে পড়েছে? এবার কি আমলাতন্ত্রের উত্থান ঘটলো? বিভিন্ন কারণে রাজনৈতিক অঙ্গণে এই প্রশ্নগুলো উঠছে। যে কারণে প্রশ্নগুলো উঠছে তা হলো:
১. টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ দলের সিনিয়র এবং অভিজ্ঞদেরকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু মন্ত্রণালয়ে এমন অনেকে দায়িত্ব পেয়েছেন যারা প্রথমবার এমপি এবং মন্ত্রী হয়েছেন। ফলে তারা একটি সরকার কীভাবে পরিচালিত হয়, মন্ত্রণালয়ের কাজের গতিপ্রকৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে মোটেও অবহিত নন। একারণে প্রথমদিন থেকেই তাঁরা আমলাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন বলেই প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম আইনজীবী হিসেবে অত্যন্ত দক্ষ। কিন্তু তিনি এবার প্রথম এমপি হয়েই মন্ত্রী হয়েছেন। গৃহায়ণ ও গনপূর্ত মন্ত্রণালয় একটি অত্যন্ত জটিল এবং বড় মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব, কার্যক্রম এবং গতিপ্রকৃতি বুঝতে একজন বুদ্ধিমান মানুষেরও অনেক সময় লাগার কথা। সেখানে নতুন কেউ দায়িত্বে এলে তাকে আমলাদের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। এটাই স্বাভাবিক।
একইভাবে বলা যায় যে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, যেটা সবসময় ঝানু ও অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের দেওয়া হয়। যারা সারা দেশের রাজনীতি ও উন্নয়ন সম্বন্ধে ধারণা রাখেন। সেখানে এবার একজন নবীন মন্ত্রীকে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যিনি প্রথম মন্ত্রী হয়েছেন। তিনি ব্যবসায়ী এবং রাজনিতিবিদ হিসেবে সফল। কিন্তু সরকার পরিচালনার গতিপ্রকৃতি বুঝতে তার সময় লাগবে। কাজেই তিনি চান বা না চান, আমলাদের ওপরই তাকে নির্ভর করতে হবে। এভাবে দেখা যায় যে, দুয়েকটি মন্ত্রণালয় ছাড়া অধিকাংশ মন্ত্রণালয়েই নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আমলাদের গুরুত্ব বেড়েছে। সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় তারা অনেক বেশি মতামত দিতে পারছেন।
২. বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যারা সচিব পর্যায়ে রয়েছেন, তারা প্রধান হিসাব নীরিক্ষকও বটে। তারা দীর্ঘদিন ধরে সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় তারা আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত। আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ নয়, এমন সচিব নেই বললেই চলে। কাজেই তাদের একটি রাজনৈতিক প্রভাব আছে, রাজনৈতিক বলয় আছে। সেকারণে তারা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য ইস্যুগুলোর ব্যাপারেও ওয়াকিবহাল। যেহেতু প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে, এবং প্রশাসনের শীর্ষপদ তাদের। এ কারণে মন্ত্রণালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণে তারা মন্ত্রীদের চেয়ে বেশিই ভূমিকা রাখছেন বলে জানা গেছে।
৩. মাঠ প্রশাসন এবং মধ্য পর্যায়ের প্রশাসনের মধ্যেও এখন আওয়ামী লীগ হয়ে যাওয়ার প্রবণতাগুলো বেড়েছে। আমলাদের অনেকেই এখন নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় দিতে কোনো কুন্ঠাবোধ করছেন না। এবং তারা কবে কোন আমলে আওয়ামী লীগ করেছেন এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের কি সম্পর্ক ছিল তা কোনো রাখ ঢাক ছাড়াই বলছেন। যার ফলে আমলারা যখন রাজনীতিবিদে পরিনত হচ্ছেন তখন রাজনীতিবিদরা কোণঠাসা হয়ে পড়বেন এটাই স্বাভাবিক। বিভিন্ন জেলায় জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকার্তারাই এখন রাজনীতির গতপ্রকৃতির নিয়ন্ত্রক হয়ে যাচ্ছেন। ফলে আমলারা যখন রাজনীতিবিদে পরিণত হচ্ছেন তখন রাজনীতিবিদরা কোণঠাসা হয়ে পড়বেন এটাই স্বাভাবিক। বিভিন্ন জেলায় জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারাই এখন রাজনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠছেন। রাজনীতিবিদদের তাঁদের ভালোমন্দ উপদেশ দিচ্ছেন। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থানীত নেতৃত্ব কীভাবে পরিচালিত হওয়া উচিৎ সে ব্যাপারে তারা পরামর্শ দিচ্ছেন।
৪. যেহেতু এবার হেভিওয়েট মন্ত্রীরা মন্ত্রিসভায় নেই, প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে যারা পরিচিত তাঁরাও এবার মন্ত্রীসভায় নেই। কাজেই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক হিসেবেও আমলাদের উত্থান ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সমন্বয়কারী তাঁরাই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য পরামর্শদাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। একমাত্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়া এমন কোনো রাজনীতিবিদ নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে নেই যারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নীতি নির্ধারণী বিষয়ে পরামর্শ করতে পারে। সেক্ষত্রে আমলারাই নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণে মূখ্য ভূমিকা পালন করছে।
৫. প্রধানমন্ত্রীর যে উপদেষ্টা মন্ডলী সেই উপদেষ্টা মণ্ডলীও আমলা নির্ভর এবং আমলা নিয়ন্ত্রিত। সেখান থেকেও যে উপদেশগুলো আসছে সেই উপদেশগুলোও আমলাতান্ত্রিক আলোকেই আসছে। তারা প্রাক্তন আমলা হওয়ার কারণে আমলাদের দিয়েই কাজ করানোর ব্যাপারে অধিক মাত্রায় তারা আগ্রহী।
৭ জানুয়ারী মন্ত্রিসভা গঠনের পর দেখা গেছে শুধু প্রশাসন নয় সরকার পরিচালনায় আমলাদের প্রভাব অনেক বেড়ে গেছে। একমাত্র দলের সাধারণ সম্পয়াদক ওবায়দুল কাদের ছাড়া রাজনীতিবিদদের সরকারের নীতি নির্ধারণী ব্যাপারে বা সরকারের কাজে অংশগ্রহণের হার অনেক কম। মন্ত্রীরা এখন পর্যন্ত তাঁদের মন্ত্রণালয়গুলো বুঝে উঠতে নতুন কাজের দায়িত্ব পালনেই ব্যস্ত। কাজেই অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদে কি আমলাতন্ত্রের উত্থান ঘটছে?
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।
মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে না- এই অবস্থান থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পিছু হঠেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থাৎ নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তাদের আপাতত কিছু হচ্ছে না। অথচ ক’দিন আগেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বারবার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন এবং যারা এই দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তাদের ব্যাপারে নমনীয় মনে হয়েছে।