নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ০৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশিদের উপচে পড়া ভীড় দেখে এবার নিজেই বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ প্রধানমন্ত্রী দলের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে বলেছেন, ‘এত আওয়ামী লীগ এলো কোথা থেকে? এরা কী দু:সময়ে থাকবে?’ আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করছে।
গত সোমবার থেকে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ফরম দেওয়া শুরু করেছে। প্রথম দিন সকাল নয়টা থেকে ফরম দেওয়া শুরু করলেও , ভোর ছয়টা থেকে উপজেলা মনোনয়ন প্রার্থীদের লাইন লেগে যায়। আওয়ামী লীগের ফরম বিতরনকারী নেতাকর্মীরা হিমশিম খান দলের এই মনোনয়ন ফরম বিক্রী করতে গিয়ে। তারাও অবাক হয়ে যান, এত আওয়ামী লীগ এলো কোথা থেকে!
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলছেন যে, এখন একটা ধারণা তৈরী হয়েছে যে আওয়ামী লীগের টিকিট পেলেই বোধহয় নির্বাচিত হওয়া যাবে। উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান বা মহিলা চেয়ারম্যান হওয়া যাবে। এই ধারণা থেকে যেখানে যে আছে, তারাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। আওয়ামী লীগের সংখ্যাও এখন বেড়ে গেছে। এই বিষয়টি আওয়ামী লীগের নীতি আদর্শ এবং আওয়ামী লীগের যে রাজনীতি তা থেকে দলকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে বলে দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করছে।
তারা মনে করছেন যে, ক্ষমতার হালুয়া রুটির লোভে এখন অনেক আওয়ামী লীগার হয়ে গেছে। দু:সময়ে তারা কতটুকু থাকবে সেটাই হলো দেখার বিষয়। আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অনেকেই বলছেন, ‘৭৫ এর ১৫ আগষ্ট বা ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের কঠিন সময়ে দেখা গেছে এই আওয়ামী লীগের মিছিল করার লোক পাওয়া যায়নি। প্রতিবাদ করার , কর্মসূচী পালন করার লোক পাওয়া যায়নি। এখন যারা এত আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে, সেই আওয়ামী লীগাররা কি আগামী দিনে আওয়ামী লীগের যখন দুর্দিন আসবে, তখন থাকবে?’
আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। নি:সন্দেহে আওয়ামী লীগ একটি জনপ্রিয় দল। কিন্তু যেভাবে মনোনয়নের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন লোকজন। তাতে কয়জন আওয়ামী লীগার বা কয়জন সুবিধাবাধী, এটা আমাদের পরীক্ষা করে দেখতে হবে। মনোনয়নের জোয়ারে যেন সুবিধাবাধীরা আওয়ামী লীগ দখল করে না নেয়। সে ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নিজেও এ ব্যাপারে বিরক্তী প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে মহিলা আসনে সহশ্রাধিক মনোনয়ন ফরম কেনা, জমা দেওয়া এবং উপজেলায় দীর্ঘ লাইন দিয়ে মনোনয়ন ফরম কেনার বিষয়টিকে পছন্দ করেনি দলের সভাপতি। তিনি মনে করছেন, আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আছে। এজন্য অনেক সুযোগ সন্ধানী এখন আওয়ামী লীগে আশ্রয় নেওয়ার পথ খুঁজছে। তারা মনে করছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেই হয়তো নির্বাচিত হওয়া যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানাচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রী গতরাতে দলের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে রাজনৈতিক কৌশল এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ করেন। এ সময় তিনি দলে অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে সজাগ থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে, ‘অন্য দল থেকে লোকজন এসে যেন বিভিন্ন সুবিধা ভোগীরা দলের ভাবমূর্তী নষ্ট না করে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর নজরদারির নির্দেশ দেন দলের সাধারণ সম্পাদককে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটা জনপ্রিয় দল। এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই। তবে আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে যে, আওয়ামী লীগ একটা নীতি আদর্শ ভিত্তিক দল। আওয়ামী লীগের নীতি আদর্শে যারা বিশ্বাস করে তাদের জন্য আওয়ামী লীগের দরজা সবসময় খোলা। কিন্তু কেউ যদি ক্ষমতার হালুয়া রুটি খাওয়ার জন্য, ক্ষমতার ভাগ বাটোয়ারা কিংবা দলে আছেন তাতে সুবিধা পেতেই হবে বলে আওয়ামী লীগ করেন। তাদের ব্যাপারে আমাকে সতর্ক থাকতে হবে। এবং তাদেরকে যেকোনভাবেই প্রতিহত করতে হবে।’ তিনি আশা করেন যে, ‘দলের তৃনমূলের নেতাকর্মীরা এ ব্যাপারে সজাগ থাকবে। যেন সুবিধাভোগীরা আওয়ামী লীগে প্রবেশ করে সুনাম নষ্ট না করতে পারে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, প্রধানমন্ত্রী অতি দ্রুত আওয়ামী লীগের কর্মী এবং কর্মীদের ডাটা বেস তৈরীর জন্য ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সারাদেশে কর্মী এবং নেতাদের তালিকা প্রণয়নের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, ‘প্রধানমন্ত্রী চান না যে আদর্শ বিবর্জিত লোকজন আওয়ামী লীগে ঢুকে দলের সুনাম নষ্ট করুক।’
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।