নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
মন্ত্রিসভা গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় একটি সরকারে যাত্রা। সরকারের সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন এই মন্ত্রিসভার সদস্যদের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। কিন্তু এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠদেরকে নিয়ে গঠিত হয় আরেকটি ছোট মন্ত্রিসভা-কিচেন ক্যাবিনেট। যেখানে রাষ্ট্রের সকল গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হয়। সরকার এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত এই কিচেন ক্যাবিনেটের সদস্যরা আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করেন। সারা বিশ্বে কিচেন ক্যাবিনেট একটি খুবই জনপ্রিয় ধারা। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এটি একটি স্বীকৃত পদ্ধতি। দল বা রাষ্ট্রের বিভিন্ন সমস্যা বা সংকট উত্তরণের জন্য কিচেন ক্যাবিনটের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। এরাই সরকারের নীতি নির্ধারক। টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করা মন্ত্রিসভা থেকে দলের হেভিওয়েটদের ছেঁটে ফেলেছে। আওয়ামী লীগের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা কিচেন ক্যাবিনেটে এবার তাহলে কারা আছেন তা নিয়ে কৌতুহল তৈরি হয়েছে সাধারণের মধ্যে।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সূচনা থেকে কিচেন ক্যাবিনেট বেশ শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে। স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ বিএনপি ক্ষমতায় আসে। সেসময় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কিচেন ক্যাবিনেটে ছিলেন সাইফুর রহমান, লে. কর্নেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান, মেজর জেনারেল (অব.) মজিদ-উল-হক, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এবং তরিকুল ইসলাম। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কিচেন ক্যাবিনেটে ছিলেন শাহ এম এস কিবরিয়া, মোহাম্মদ নাসিম, তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু এবং মহিউদ্দিন খান আলমগীর। ২০০১ সালে আবারও ক্ষমতায় আসে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। সেসময় অবশ্য দুটি কিচেন ক্যাবিনেট দৃশ্যমান হয়। একটি ক্যাবিনেট ছিল প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি ছিল হাওয়া ভবনের। সেসময় প্রধানমন্ত্রীর কিচেন ক্যাবিনেটে জায়গা পান সাইফুর রহমান, মান্নান ভূঁইয়া, সাদেক হোসেন খোকা, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এবং তরিকুল ইসলাম। কিচেন ক্যাবিনেটের সদস্যরা সরকারের অনেক নীতিনির্ধারণী বিষয় ও কৌশল নিয়ে আলোচনা করতেন।
২০০৮ সালে আবারও ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ। সেসময় আওয়ামী লীগ দলের হেভিওয়েটদের বাদ দিয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করে। সেখানেও একটি কিচেন ক্যাবিনেট ছিল। গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন শেখ হাসিনা এবং গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত তাদেরকে আগেই জানাতেন। সেসময় কিচেন ক্যাবিনেটে ছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত, বেগম মতিয়া চৌধুরী, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। ২০১৪ সালে টানা দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। কিচেন ক্যাবিনেটে পরিবর্তন আসে। আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বেগম মতিয়া চৌধুরী থেকে যান পুরনোদের মধ্য থেকে। নতুনদের মধ্য থেকে যুক্ত হন আ হ ম মোস্তফা কামাল, ওবায়দুল কাদের এবং আনিসুল হক।
একাদশ জাতীয় সংসদে বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। নতুন মন্ত্রিসভার বয়স ইতিমধ্যে একমাস পার হয়ে গেছে। এবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করছেন তাদের পরামর্শ শুনছেন। সরকার পরিচালনার বিভিন্ন কৌশল ও পথ নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বলা হয় আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনার পর সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি তিনিই। সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী ও বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল আছেন কিচেন ক্যাবিনেটে। যে কোন সরকারেরই একটি মহাগুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রণালয়। সিলেট থেকে অর্থমন্ত্রী হওয়ার চিরাচরিত রীতি ভেঙেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বস্ত মোস্তফা কামাল। খালেদা জিয়ার মামলা, তারেক জিয়াকে ফিরিয়ে আনার মতো অনেকগুলো বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দেয়ার জন্য কিচেন ক্যাবিনেটে আছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ২০০৯ সালে মন্ত্রী হলেও পরবর্তীতে তাকে সরিয়ে দেয়া্ হয়। তারপরও তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাহচর্য ছাড়েননি। তখন থেকেই প্রধানমন্ত্রী অনেক বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে শেয়ার করতেন। তিনিও আছেন কিচেন ক্যাবিনেটে। বর্তমান সরকার কূটনীতিক বিষয়কে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুর মতো আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সামনে এসেছে। বাংলাদেশ শুরুতে মহানুভবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও এখন তাদের নীতি ‘এনাফ ইজ এনাফ’। আর একটি রোহিঙ্গাকেও জায়গা না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ। এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দেয়ার জন্য কিচেন ক্যাবিনেটে আছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন।
কিচেন ক্যাবিনেটের বাইরে আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা যতো জটিল ও কঠিন হচ্ছে, একটি সুপার ক্যাবিনেটের ধারণাও প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এমন ব্যক্তিদের নিয়ে সুপার ক্যাবিনেট গঠন হয় যারা মন্ত্রী নন, সরকারের কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে নেই এবং সাধারণের কাছে পরিচিতও নন।
বাংলা ইনসাইডার/এমআর
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।