নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
আগামী বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে দুটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। ‘মুজিব বর্ষ’ উদযাপনের জন্য ১০২ সদস্য বিশিষ্ট ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি’ এবং ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি এই কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপণ জারি করা হয়েছে। সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী কমিটি হলো জাতীয় কমিটি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সভাপতি করে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জাতীয় কমিটি গঠনের পর এটা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে নানা রকম প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জাতীয় কমিটিতে অন্তত তিনজন বিতর্কিত ব্যক্তি স্থান পেলেও সেখানে জাতীয় চার নেতার পরিবার উপেক্ষিত হয়েছে। জাতীয় কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। ১৯৮২ সালের ২৪ জানুয়ারি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন। ক্ষমতায় এসে তিনি জাতির পিতার স্বঘোষিত খুনিদের বিচারের ব্যবস্থা না করে বরং কূটনৈতিক ক্ষেত্রে পদোন্নতি দিয়েছিলেন। তিনি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেননি এবং জাতির পিতার স্বীকৃতিও তিনি দেননি।
তালিকায় আছেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগে বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল জাসদের গণবাহিনী। অনেকেই মনে করেন জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পটভূমির পিছনে জাসদ এবং গণবাহিনীর বড় একটা ভূমিকা ছিলো। সে বিবেচনায় ইতিহাসের দায় জাসদ এবং হাসানুল হক ইনু আদৌ কতটুকু এড়াতে পারেন সেটা নিয়ে সুধীজনের প্রশ্ন রয়েছে। এছাড়াও তালিকায় আরেকজন আছেন যিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর খন্দকার মোশতাকের খুনী মন্ত্রিসভার শপথ পাঠ করিয়েছিলেন।
এমন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে জাতীয় কমিটি গঠন করায় অনেকেই অবাক হয়েছেন। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, ১০২ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় কমিটি বা ৬১ সদস্যের বাস্তবায়ন কমিটিতে জাতীয় চার নেতার পরিবার থেকে মাত্র একজন সদস্য জায়গা পেয়েছেন। যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে রক্ষার জন্য কারাবরণ করেছিলেন, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে তাদেরকে হত্যা করা হয়। সে সময় বঙ্গবন্ধুর পর আওয়ামী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চারজন-সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানের পরিবার থেকে একমাত্র মোহাম্মদ নাসিম ছাড়া আর কাউকে না রাখা দুঃখজনক। কমিটিতে রাখা হয়নি এএইচএম কামরুজ্জামানের ছেলে ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনকে। মুক্তিযু্দ্ধ ও পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর সার্বক্ষণিক সহচর তাজউদ্দিন আহমেদের ছেলে সোহেল তাজ কিংবা মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি, বর্তমান সরকারের সাংসদ তাকেও রাখা হয়নি জাতীয় কমিটিতে। ১০২ সদস্যের কমিটিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামের পরিবার থেকেও কেউ জায়গা পাননি। সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি আওয়ামী লীগের এমপি হলেও তাকেও জাতীয় কমিটিতে বিবেচনা করা হয়নি। বঙ্গবন্ধুর কাছের এই চার নেতার মধ্যে ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম ছাড়া আর কাউকে না রাখাতে বিস্মিত হয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কমিটিতে নেই জাতির পিতাকে রক্ষায় এগিয়ে আসা একমাত্র সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জামিলের পরিবারের কেউ।
বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর যিনি প্রতিবাদ করেছিলেন সেই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকেও রাখা হয়নি কমিটিতে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন, যত মতপার্থক্যই হোক বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের জন্য যারা জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম করেছিলেন তাদেরকে এ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন ছিল। এটা একটি আলঙ্কারিক কমিটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে যারা হৃদয়ে ধারণ করেন তারা মনে করেন, এরকম আমলাতান্ত্রিক কমিটির চেয়ে যারা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসেছেন, ’৭৫-র পর বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করেছেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বাস্তবায়নের জন্য সংগ্রাম করেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের এই কমিটিতে রাখলে শোভন হতো।
একইভাবে ৬২ সদস্যবিশিষ্ট বাস্তবায়ন কমিটিতেও ৭৫’র পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ যারা ধারণ করেছিলেন, তার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন তাদেরকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এর ফলে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী রাষ্ট্রীয় আড়ম্বরে হয়তো অনুষ্ঠিত হবে, কিন্তু সেখানে জন আবেগ, বঙ্গবন্ধুর প্রতি গণমানুষের অনুভূতি ও ভালোবাসার প্রকাশ কতটুকু থাকবে সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
বাংলা ইনসাইডার/এমআর
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।