নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
তৃতীয় মেয়াদে এসে আওয়ামী লীগ একলা চলো নীতি গ্রহণ করেছে। ৭ জানুয়ারি গঠিত মন্ত্রিসভায় প্রথমবারের মতো শরীকদের বাদ দেয়া হয়। এরপর থেকে মহাজোট এবং শরীকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দূরত্ব বাড়ছেই। নতুন মন্ত্রিসভা এবং প্রশাসন মহাজোট এবং শরীকদের তদ্বির এড়িয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে সচিবালয়ে তদ্বিরে যাওয়া ১৪ দল এবং জাতীয় পার্টির এমপিরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। উপজেলা নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ একাই চলছে। এখানে শরীকদের পাত্তা দেয়া হচ্ছে না। এমনকি ঢাকা উত্তরের মেয়র নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের পাশে নেই শরীকরা। সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ১৪ দলের বৈঠক ছিল দায়সারা এবং স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা। শরীকদের নেতারাও স্বীকার করছেন আওয়ামী লীগ আর আগের মতো নেই, বদলে গেছে। ১৪ দলের অন্যতম শরীক ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ হয়তো মনে করছে রাজনীতিতে তাদের প্রতিপক্ষ নেই। এ কারণেই তারা সম্ভবত একাই চলার নীতি নিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি এটা ভেবে থাকে তাহলে মস্ত ভুল করছে।’
প্রায় একই রকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তাঁর মতে, ‘যে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ১৪ দল গঠিত হয়েছিল সেই প্রেক্ষাপটের কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং এখনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তি অনেক শক্তিশালী।’ প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও ১৪ দলের শরীক এমনকি আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও মনে করছেন, এই একলা চলার নীতি একটি ভুল সিদ্ধান্ত। দীর্ঘমেয়াদে এটা আওয়ামী লীগকেই দুর্বল করবে। শুধু একলা চলা নীতি নয়, তৃতীয় মেয়াদে নিরঙ্কুশ বিজয় আওয়ামী লীগকে অতি আত্মবিশ্বাসী করেছে বলেও অনেক রাজনীতিবিদ মনে করছেন। এর ফলে সামনে আওয়ামী লীগ সমস্যায় পড়বে বলেও কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন। একলা চলা সিদ্ধান্ত কেন ভুল? এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের শরীকরা বেশকিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন। তার কয়েকটি এরকম-
১. এর ফলে বিএনপি সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পাবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ক্রমশ সব রাজনৈতিক দল এমনকি ১৪ দলের শরীকরাও ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। তখন আওয়ামী লীগের জন্য পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে।
২. একলা চলতে গিয়ে আওয়ামী লীগ ক্রমশ হেফাজত এবং অন্যান্য দক্ষিণপন্থী দলগুলোর উপর নির্ভরশীল হবে। তখন আওয়ামী লীগ তার সেক্যুলার চরিত্র হারাবে।
৩. আওয়ামী লীগ একা চললে দেশের উদার গণতান্ত্রিক এবং প্রগতিশীল শক্তিগুলো অভিভাবকহীন এবং দুর্বল হয়ে পড়বে। এটা শেষ বিচারে আওয়ামী লীগের জন্যই ক্ষতিকর হবে।
৪. অতীতে দেখা গেছে যখনই আওয়ামী লীগ বন্ধুহীন হয়, তখনই তারা বিপদে পড়ে। আওয়ামী লীগের শক্তি কমে যায়। ২০০১ সাল হলো তার বড় প্রমাণ।
৫. এর ফলে যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গী এবং গণতন্ত্র বিরোধীরা সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পাবে। এরা সবসময়ই আওয়ামী লীগের জন্য বিপজ্জনক।
৬. একলা চলতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার রাজনীতির উপর নির্ভরতা কমিয়ে আমলাদের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়বে, যার লক্ষণ এখনই দেখা যাচ্ছে। এটা শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রের জন্যই ক্ষতিকর হবে।
৭. এর ফলে দেশের বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ এবং মুক্তচিন্তার মানুষের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দূরত্ব তৈরী হবে। যা আওয়ামী লীগের জন্যই পরে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
অবশ্য ১৪ দলের অনেক শরীকই শেষ বিচারে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির প্রতি আস্থাশীল। তারা মনে করছেন, দেলের একটি অংশ এরকম একলা চলার নীতিতে থাকলেও শেখ হাসিনা সবাইকে নিয়েই থাকতে চান। তিনি দ্রুতই এই সমস্যাগুলো বুঝবেন।
বাংলা ইনসাইডার/এমআর
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়া বহিষ্কার বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
লোকসভা নির্বাচন আওয়ামী লীগ বিজেপি
মন্তব্য করুন