নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
২০০৮ এর নির্বাচনে বিজয়ের পর আওয়ামী লীগে আওয়াজ উঠেছিল ‘কমিউনিস্ট’ খেদাও। আওয়ামী লীগ সংগঠনের মধ্যে ‘কমিউনিস্ট’রা অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে এসে ‘কমিউনিস্ট’রা আওয়ামী লীগ থেকে বিতারিত প্রায়। আওয়ামী লীগের মধ্যে হাতেগোণা যে কয়েকজন ‘কমিউনিস্ট’ আছেন তাঁরাও দলের মধ্যে কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছেন। আওয়ামী লীগে যারা ছাত্র ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট পার্টি বা ন্যাপ থেকে যোগ দিয়েছেন তাদেরকেই আওয়ামী লীগের লোকজন ‘কমিউনিস্ট’ বলে। ২০০৮’র নির্বাচনের পর ছাত্র ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট পার্টি বা ন্যাপ থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া লোকজনের প্রভাব প্রতিপত্তি অনেক বেড়েছিল বলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন এবং ২০১৯ সালে এসে সেই ‘কমিউনিস্ট’ দূর্গের পতন হয়েছে বলে নেতাকর্মীরা মনে করেন।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে ‘কমিউনিস্ট’ পার্টির সম্পর্ক ঐতিহাসিক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যখন সারাদেশ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেছিল সেই মুক্তিযুদ্ধে কমরেড মনি সিংয়ের নেতৃত্বে ‘কমিউনিস্ট’ পার্টি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিল। সোভিয়েতপন্থি বামদলগুলো (কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ) তাঁরা সম্মিলিতভাবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সংগ্রাম করেছিল। ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, সোভিয়েত ইউনিয়নসহ ‘কমিউনিস্ট’ দেশগুলো যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে দ্রুত সমর্থন দিয়েছিল এর পেছনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল এদেশের কমিউনিস্ট পার্টি এবং বাম ঘরানার দলগুলো। জাতির পিতার নেতৃত্বে এদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন, ন্যাপ স্লোগান তুলেছিল যে, ‘লাখো শহীদের মুক্ত স্বদেশ, এসো দেশ গড়ি বঙ্গবন্ধুর ডাকে।‘ তাঁরা এদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে কাজ করেছিল। ’৭৫ সালে জাতির পিতা যখন বাকশাল গঠন করে তখন কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ তাঁদের দল বিলোপ করে এই বাকশালে যোগ দিয়েছিল এবং বাকশাল গঠনের ক্ষেত্রে মস্কোপন্থি বামদলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল বলে রাজনৈতিক মহল মনে করেন। ৭৫ এর পর জাতির পিতার হত্যার যারা প্রতিবাদ করেছিল তাঁরা হলো এই মস্কোপন্থি রাজনৈতিক জোট ও বাম জোটগুলো। ৭৫ এর ১৫ই আগস্টের পর আওয়ামী লীগের ওপর যেমন জুলুম নিপীড়ন নেমে এসেছিল ঠিক তেমনিভাবে জুলুম নির্যাতন নেমে এসেছিল সিপিবি, ন্যাপসহ কমিউনিস্টপন্থি বামদলগুলোর ওপর। মস্কোপন্থি কমিউনিস্ট পার্টিকে জিয়াউর রহমান নিষিদ্ধও ঘোষণা করেছিল। এই সময়েও কমিউনিস্টদের সঙ্গে আওয়মী লীগের রাজনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট নয়নি বরং আরও প্রগাঢ় হয়েছে। যদিও কমিউনিস্টদের মধ্যে এই সময়ে বেশকিছু বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। তাঁরা জিয়াউর রহমানের খাল কাটা বিপ্লবেও অংশগ্রহণ করেছিল। কমিউনিস্ট পার্টি এবং ছাত্র ইউনিয়নের ওই সময়ের প্রাক্তন নেতৃবৃন্দ মনে করেন যে, এটা ছিল তাঁদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কৌশল। জিয়াউর রহমানের রোষানল থেকে বাঁচার জন্য তাঁরা এটা করেছিলেন। তবে কমিউনিস্ট পার্টি ও আওয়ামী লীগের এই সখ্যতার আড়ালে তাঁদের বিরোধেরও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। ১৯৭৪ সালে পয়লা জানুয়ারি ভিয়েতনামে মার্কিন আগ্রাসনের প্রতিবাদে ছাত্র ইউনিয়ন মার্কিন দূতাবাস ঘেরাওয়ের অভিযান পরিচালনা করলে সেখানে পুলিশ গুলি ছোড়ে এবং একজন মারা যায়। এরপর তৎকালীন ডাকসুর ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ডাকসু ভবনে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ফেলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। যদিও মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম মনে করেন যে, সেটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল। ৭৫’র ১৫ই আগস্টের পর মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমই হলেন প্রথম ব্যক্তিদের একজন যিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। ৭৫’র পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে যখন আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে শেখ হাসিনা দেশে ফেরেন তখন তাঁর বিশ্বস্ত মিত্র ছিল কমিউনিস্ট পার্টি। মোহাম্মদ ফরহাদের সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পর্যায়ক্রমে গড়ে ওঠে ১৪ দল এবং এই ১৪ দলের নেতৃত্বেই স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন হয়। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ এবং কমিউনিস্ট পার্টিই ছিল সবচেয়ে বিশ্বস্ত এবং পরীক্ষিত মিত্র।
রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ২০০১ সাল থেকে সিপিবি, ছাত্র ইউনিয়ন, ন্যাপ থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করার সংখ্যা ছিল উল্লেখ করার মতো। ২০০৭ সালে যখন ওয়ান ইলেভেনের বিপর্যয় আসে তখন আওয়ামী লীগে যারা ‘কমিউনিস্ট’ হিসেবে পরিচিত তাঁদের ভূমিকাই ছিল বিস্বস্ততার এবং আস্থার। তাঁরাই মাইনাস ফর্মূলার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হয়েছিল।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভিন্ন পর্যায়ে, বিভিন্ন বাঁকে কমিউনিস্ট, ন্যাপ এবং ছাত্র ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ৭৫ এর ১৫-ই আগস্টের পরে মস্কোপন্থি বাম দলগুলো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি বড় অংশ আওয়ামী লীগে যোগ দেয়। এই প্রবাহ, ধারা বন্ধ হয়নি। বিভিন্ন সময়ে কমিউনিস্ট পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন নুরুল ইসলাম নাহিদ, আব্দুল মান্নান খানসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। এই নেতাকর্মীরাই ২০০৭ সালে যখন শেখ হাসিনার রাজনৈতিক নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে, তথাকথিত মূল আওয়ামী লীগ যখন তাঁকে মাইনাস করার তত্ব হাজির করে তখন এই আওয়ামী লীগের কমিউনিস্টরাই সেটার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল। তখন মতিয়া চৌধুরী, আব্দুল মান্নান খান, নুরুল ইসলাম নাহিদসহ প্রমুখ বাম ঘরানা থেকে আসা নেতৃবৃন্দই শেখ হাসিনার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন। একারণেই ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারে ‘কমিউনিস্ট’ থেকে আসা আওয়ামী লীগারদের জয়জয়কার দেখা যায়। এটা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে ক্ষোভ এবং নানারকমের গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। এরপর আওয়ামী লীগ যখন দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয় তখন কমিউনিস্টিদের প্রভাব কিছুটা কমে গেলেও বেগম মতিয়া চৌধুরী, নুরুল ইসলাম নাহিদের মতো স্বীকৃত কমিউনিস্ট পার্টি এবং ছাত্র ইউনিয়ন করা লোকজন মন্ত্রিসভায় ছিলেন। মন্ত্রিসভায় ‘কমিউনিস্ট’ পার্টির যে প্রভাব সেটা মোটামুটি অক্ষুণ্ণ অবস্থায়ই ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে এসে মন্ত্রিসভায় শুধু না, তথাকথিত কমিউনিস্টদের অবস্থান সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামে একমাত্র মতিয়া চৌধুরী ছাড়া আর কোনো সদস্য নাই। তিনিও রাজনীতিতে অন্তিমলগ্নে আছেন। এবার তিনি মন্ত্রিসভাতে অন্তর্ভূক্ত হননি। ছাত্রইউনিয়ন এবং কমিউনিস্ট পার্টি থেকে আসা নুরুল ইসলাম নাহিদ এবার মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভূক্ত হননি। আব্দুল মান্নান খান প্রেসিডিয়ামে আছেন। কিন্তু তাঁর গুরুত্ব খুবই কম বলেই জানা গেছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে। ২০০৮এ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে কমিউনিস্ট পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানের হার প্রায় শূন্যতে নেমে এসেছে। কমিউনিস্ট পার্টি এখন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবেই কাজ করছে। বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের কট্টর সমালোচক হিসেবেই কমিউনিস্ট পার্টি আবির্ভূত হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগের যে গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল ধারা সেই ধারাকে অক্ষুণ্ণ রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়নসহ বাম প্রগতিশীল দলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। বিভিন্ন সময়ে বাম প্রগতিশীল ঘরানার দলগুলো থেকে আওয়ামী লীগে যারা যোগদান করেছিল তাঁরাই আওয়ামী লীগকে প্রগতিশীল এবং সমাজতান্ত্রিক ধারায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এখন তাঁদের এই যোগদানের ধারা কমে গেলে আওয়ামী লীগ ক্রমশ দক্ষিণপন্থিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে কিনা এনিয়েও জল্পনা কল্পনা রয়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামসহ দক্ষিণপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর সখ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, আওয়ামী লীগ কি তাঁর প্রগতিশীল শক্তি হারিয়ে ফেলেছে? সেজন্যই কি বাম ঘরানা থেকে আসা আওয়ামী লীগারদের কদর কমে গেছে দলে?
বাংলা ইনসাইডার/এসআর
মন্তব্য করুন
বিএনপির কারাবন্দি নেতাকর্মীর সংখ্যা আবারও বাড়ছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে যেসব নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের অধিকাংশ মুক্ত হলেও অনেককে নতুনভাবে কারাগারে যেতে হচ্ছে। ঈদুল ফিতরের আগে এবং সম্প্রতি শতাধিক নেতাকর্মী ফের কারাগারে গেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়। কেউ কেউ আছেন একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। অনেককে বিভিন্ন মামলায় আটকের পর গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে বলে বিএনপির অভিযোগ। সর্বশেষ সোমবার জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বিএনপির কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতা এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী কারাগারে গেছেন। দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে বন্দি আছেন কেউ কেউ।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎভাবে লাগাতার আন্দোলনে নামে বিএনপি। মূলত ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের পর থেকে একদফা দাবিতে টানা হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে যায় বিএনপিসহ সমমনা দল এবং জোটগুলো। এ আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে পারেনি তারা। একপর্যায়ে গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ ৬২টি রাজনৈতিক দল। ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সারা দেশে ব্যাপক আন্দোলন করে বিএনপি। নানামুখী তৎপরতার পরও নির্বাচন ঠেকাতে না পারা বিএনপির আন্দোলনে ভাটা পড়ে। সেই থেকে ধীরে চলছে বিএনপি। নেই রাজপথের কঠোর কোনো কর্মসূচি। সম্প্রতি দলীয় কিছু কর্মসূচিতে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাধা দিয়েছে বলে দলটির অভিযোগ। বিএনপি নেতারা বলছেন, রাজপথে জোরালো কর্মসূচি না থাকা সত্ত্বেও পুরোনো মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও সাজার ঘটনা দলের নীতিনির্ধারকদের ভাবিয়ে তুলছে জানা গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বিরোধী দলকে দমনের জন্য হামলা-মামলা ও গুলিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার। এটা সবাই জানেন যে, গত বছরের ২৮ অক্টোবর সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কীভাবে আমাদের নিরীহ ও নিরস্ত্র নেতাকর্মীদের ওপর টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়েছে। অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সরকার কিন্তু বিরোধী দল দমনসহ বিএনপিকে ভাঙতে ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে। মামলা-মোকদ্দমা আজও শেষ হয়নি। এখনো প্রতিদিন হাজার হাজার নেতাকর্মী দেশের বিভিন্ন কোর্টে হাজিরা দিচ্ছেন। নেতাকর্মীদের কারও বিরুদ্ধে ৩০০ থেকে ৫০০ পর্যন্ত মামলা আছে। গভীর রাতেও গ্রামে-গঞ্জে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে হানা দেয় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জানা গেছে, গত ২৮ এপ্রিল রাজধানীর গেণ্ডারিয়া থানার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির মকবুল ইসলাম টিপু, ওমর নবি বাবু, মাহবুবুর রহমান টিপু, রফিকুল ইসলাম ময়না, মোহাম্মদ রবিন, মোহাম্মদ সালেহ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর ও কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একই দিনে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান (ভিপি মিজান), জেলা বিএনপি নেতা মোহিতুর রহমান হেলাল, মাহমুদুর রহমান, স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরীসহ ১৪ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি রাজধানীর জুরাইন থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মনির মুন্সী, নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব বাবুসহ গাড়ি চালককে গোয়েন্দা পুলিশ কর্তৃক আটকের পরও অস্বীকার এবং মহানগর যুবদলের সাবেক সদস্য সচিব শাহেদকে গোয়েন্দা পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির।
গত ২৪ এপ্রিল খুলনা জেলা বিএনপির ৩০ নেতাকর্মী নিম্ন আদালতে জামিন আবেদন করলে জামিন নামঞ্জুর ও কারাগারে পাঠানো হয়। কারাবন্দি নেতারা হলেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এসএম মনিরুল হাসান বাপ্পী, বিএনপি নেতা খান জুলফিকার আলী জুলু, রুপসার থানার মোল্লা সাইফুর রহমান, পাইকগাছার এনামুল হক, মো. সাহাবুদ্দিন ইজাদার, মো. সাইফুল ইসলাম পাইক, স্বেচ্ছাসেবক দলের মো. জাকির হোসেন তালুকদার, মো. লায়েকুজ্জামান লাকু, মো. কামাল উদ্দিন, মো. ফরহাদ হোসন, জাসাসের মো. খালিদ লস্কর, ছাত্রদলের জাকারিয়া, মো. তরিকুল ইসলাম রনি, মো. আলমগীর শেখ, যুবদলের ইমরান হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সোহেল গাজী, মো. সোহেল গাজী, মো. ফারুক হোসেন, আমিনুল মল্লিক, মো. শিহাব সরদার, বাদশাহ সরকার, মো. আল আমিন শেখ প্রমুখ।
গত ২১ এপ্রিল দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট পৌর বিএনপির সভাপতি এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ২৭ নেতাকর্মীর জামিন নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। কারাবন্দি নেতারা হলেন দিনাজপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার মিলন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির গোলাম হোসেন, মো. মোরসালিন, আবদুল আজিজ, সাবের হোসেন, কালাম, হান্নান খান, আবু কাউসার ভূঁইয়া, হুমায়ুন, আনিসুর রহমান শিপলু, সানি ও ইয়াসিন, মোস্তাক আহমেদ, মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দীন সিরাজ, সেন্টু আহমেদ সাকি, সৈয়দ মঞ্জুরুল হক, মোহাম্মদ মঈন, যুবদলের ওমর ফারুক, রাজু বল্লম রাজু, মো. রকি, বিএনপি নেতা মো. বিল্লাল, মো. ফালান, মোহাম্মদ রনি, মামুন, সাগর ও শাওন। ১৭ এপ্রিল বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য শহিদুল ইসলাম বাবুল, বিএনপি নেতা সেলিম আহম্মেদ সালেম, কুতুব উদ্দিন এবং রেজাউর রহমান রাজুর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তার আগে গত ১৮ এপ্রিল বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য হাবিবুর রশীদ হাবিবসহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য লতিফুল্লাহ জাফরু, বংশাল থানার মো. মাকসুদ হোসেন এবং মোহাম্মদ আরিফ হাসানের জামিন নামঞ্জুর কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
গত ১৭ ও ১৮ এপ্রিল দিনাজপুর জেলা বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা এবং কেন্দ্রীয় যুবদল নেতার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন দিনাজপুর জেলা বিএনপির শামীম চৌধুরী, মোজাহারুল ইসলাম, নুর ইসলাম (চেয়ারম্যান), ঘোড়াঘাট উপজেলার আবু সাঈদ মিঞা, জেলা যুবদলের মোন্নাফ মুকুল, বিরল উপজেলার মো. মমিনুল ইসলাম, মো. আরমান আলী, মো. মমিন, মো. হাসিনুর রহমান পায়েল এবং যুবদলের কেন্দ্রীয় ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আবুল মনছুর খান দিপক। এর আগে গত ১ মার্চ বিএনপির খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ যশোর সদর ও কেশবপুর উপজেলা বিএনপির ৫২ নেতাকর্মী আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ১৮ মার্চ তারা ছাড়া পেয়েছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিনা কারণে বিএনপির নেতাকর্মীদের কারাগারে যেতে হচ্ছে। কারাগার যেন তাদের স্থায়ী ঠিকানা হয়ে গেছে। বিএনপির মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা দীর্ঘ তিন-চার মাস কারাগারে থেকে বেরোলেন। এখনো কয়েক হাজার নেতাকর্মী কারাগারে বন্দি। তাদের জন্য দিনের আলো ও মুক্ত বাতাস গ্রহণ যেন নিষিদ্ধ। এদের প্রায়ই কারাগারের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। এভাবে নেতাকর্মীদের কারাগারে ঢুকানো, গুম ও খুন করা এই কর্মসূচি যেন সরকারের শেষ হচ্ছে না। আমার মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী একটা আতঙ্কের মধ্যে ভুগছেন। কারণ তিনি জানেন তার জনসমর্থন নেই। সরকার যতই বিরোধীদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন করুক না কেন, একদিন এর বিচার হবেই। সব অন্যায়ের রেকর্ড আছে। তাদের শেষ রক্ষা হবে না।
জানা গেছে, ঈদের আগে সাজাপ্রাপ্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশিদ হাবিব, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তফা কামাল হৃদয়, এসএ খোকন, উত্তরা থানার আনোয়ার হোসেনসহ অনেকে আত্মসমর্পণ করেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান আত্মসমর্পণের পর কিছুদিন কারাভোগের পর সম্প্রতি ছাড়া পেয়েছেন। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, নির্বাহী কমিটির সদস্য লুৎফুজ্জামান বাবর, ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দিন অপু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের আজিজুর রহমান মুসাব্বির, ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ইখতিয়ার রহমান কবিরসহ অনেকে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের স্ত্রী শিরিন সুলতানা বলেন, গত বছরের ২৬ অক্টোবর একটি হত্যা মামলায় তার স্বামী খোকনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। একই মামলায় এ পর্যন্ত অনেক আসামির জামিন হলেও খোকনকে জামিন না দিয়ে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। অথচ খোকন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, পায়ে পানি ধরাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। অবিলম্বে স্বামী খোকেনর মুক্তি দাবি করেন শিরিন সুলতানা।
সিলেট জেলা বিএনপির শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সহসম্পাদক তামিম ইয়াহিয়া আহমদ বলেন, মিথ্যা মামলায় পুলিশি হয়রানির কারণে আমি তো ঘরে থাকি না। তবু কেউ কেউ আমার বাসার সামনে ও বিল্ডিংয়ের ছাদে, কেউ আবার ভাঙাড়ি সেজে, মনিটরিং করে। আমি তো চোর বা ডাকাত নই। আমার দল দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এবং জুলুমের বিপক্ষে লড়ছে। আমি সেই দলেরই (বিএনপি) একজন।
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া মাহমুদুর রহমান মান্না
মন্তব্য করুন
বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতাল বিএনপি শামীম ইস্কান্দার ডা. জাহিদ
মন্তব্য করুন
বিএনপির কারাবন্দি নেতাকর্মীর সংখ্যা আবারও বাড়ছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে যেসব নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের অধিকাংশ মুক্ত হলেও অনেককে নতুনভাবে কারাগারে যেতে হচ্ছে। ঈদুল ফিতরের আগে এবং সম্প্রতি শতাধিক নেতাকর্মী ফের কারাগারে গেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়। কেউ কেউ আছেন একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। অনেককে বিভিন্ন মামলায় আটকের পর গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে বলে বিএনপির অভিযোগ। সর্বশেষ সোমবার জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বিএনপির কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতা এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী কারাগারে গেছেন। দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে বন্দি আছেন কেউ কেউ।
উপজেলা নির্বাচনের দুই ধাপের প্রস্তুতি এবং প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই দুই ধাপে আওয়ামী লীগের প্রায় ৫০ জন মন্ত্রী এমপির স্বজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর মন্ত্রী-এমপিদের নিজস্ব ব্যক্তি বা মাইম্যান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে একশরও বেশি। উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে যখন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছেন তখন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
বেগম খালেদা জিয়া একদিনের জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে তাকে আবার বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে গতকাল সন্ধ্যায়। বাড়িতে ফেরার পর বিএনপি পন্থী চিকিৎসক এবং ড্যাব নেতা ডা. জাহিদ দাবি করেছেন যে, খালেদা জিয়াকে এখন লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে এবং এর জন্য তাকে বিদেশ নেওয়ার কোন বিকল্প নেই।