নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১২ মার্চ, ২০১৯
এবারের ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে কি স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রবেশদ্বার উম্মুক্ত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে?এবারের ডাকসু নির্বাচনে যেটা লক্ষণীয়, আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ছাড়া অন্যকোন প্রধান রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন ভালো করেনি। যে যতই বলুক না কেন নির্বাচনে কারচুপি বা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ হয়েছে, কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনের যে শক্ত অবস্থান, সেটা থেকে বোঝা যায় যে, কারচুপি যদি নাও হত, নির্বাচন যদি সুষ্ঠুও হত তাহলেও হয়তো প্রগতিশীল ছাত্র জোট বা ছাত্রদলের আরও ভরাডুবি হত।
নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগ এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে। অনেকেই বলছে কোটা সংস্কার আন্দোলনটা হলো জামাত এবং শিবির নিয়ন্ত্রিত। বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের যে প্যানেল তৈরী হয়েছিল তার পেছনে জামাত শিবির এবং লন্ডন থেকে তারেক জিয়ার মদদ ছিল। এগুলোর কোনটার পক্ষেই কোন যুক্তিসংগত প্রমান বা তথ্য উপাত্ত নেই। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনের পেছনে জামাত এবং ছাত্র শিবিরের মদদ ছিল সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। এই নির্বাচনের আগে জামাত ইসলাম এবং ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষের প্রার্থীদের ভোট দিতে এবং তাদের অকুন্ঠ সমর্থন জানিয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন শুরু হয়েছিল, তখন এই নুরুল হক নুরু এবং রাশেদ খানসহ কোটা সংস্কারের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে শিবিরের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। তারা যে এক সময় শিবির করেতেন এবং শিবিরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল তার নানা প্রমাণ গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে কখনো ছাত্রশিবির বা ধর্মভিত্তিক কোন দল কখনো স্থান পায়নি। এরা বিভিন্ন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের চিন্তা করেছিল। কাটাবন মসজিদ এবং এই মসজিদ সংশ্লিষ্ঠ দোকানগুলো ঘিরে ইসলামিক ছাত্রশিবির এবং জামাতের তৎপরতা ছিল। এরা আশির দশকে একবার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে চেয়েছিল। তখন সাধারণ ছাত্রদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গুটিয়ে যায়। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন হলে বিভিন্ন সময়ে ছাত্র শিবির এবং জামাত পন্থীরা থাকতো। কিন্তু তারা তাদের কার্যক্রম গোপনে চালাতো। প্রকাশ্যে কখনো তাদের তৎপরতা দেখা যায়নি কখনো। জামাতের বিভিন্ন দলিলপত্রে দেখা যায় যে, তারা বিভিন্ন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে অনেকে জামাতের ব্রেইন চাইল্ড বলেও মনে করে। ছাত্রশিবির এই আন্দোলনের রুপ পরিকল্পনা, সংগঠিত এবং সারাদেশে বিন্যাস এবং বিকাশের জন্য তৎপর ছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলন দাবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এই আন্দোলনের নেতৃত্বের মধ্য দিয়েই জামাত এবং শিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়ে একটি নেটওয়ার্ক তৈরী করতে সক্ষম হয় বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর অনুযায়ী, এবারের ডাকসু নির্বাচনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে বিভিন্ন সরকার বিরোধী মহলের মদদ এবং পৃষ্টপোষকতা ছিল। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মদদ ছিল ইসলামি ছাত্রশিবিরের। তাই এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ এবং যেখানে মুক্ত চিন্তা পাদপিঠ বলা হয়ে, সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কি শিবিরের উথান ঘটলো? এর মাধ্যমে কি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ছাত্র শিবির তার অবস্থান দৃঢ় করলো? বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী জানা যায় যে, জামাত ইসলাম তাদের দল বিলুপ্ত করে নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করবে। নতুনভাবে শুরু করলে তারা তাদের গায়ে স্বাধীনতা বিরোধী যে তকমা তা যেন গায়ে না আটে সেজন্য তারা তৎপর। একটা নতুন নাম নিয়ে তারা কাজ করছে। জামাত যখন বিলুপ্ত হবে তখন ইসলামী ছাত্র শিবিরও বিলুপ্ত হবে বলে জামাতের বিভিন্ন সূত্রগুলো মনে করছে। এটাই যদি হয়, তাহলে ডাকসু নির্বাচন কি তার প্রথম পদক্ষেপ? কোটা সংস্কার আন্দোলনের যে ব্যানার, সেটা কি পরিবর্তিত জামাতের ছাত্র সংগঠন হিসেবে আবির্ভূত হবে? তার প্রস্তুতি হিসেবেই কি এবারের ডাকসু নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করলো? এমন একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে জামাত আত্মপ্রকাশ করতে চায় যে দলের নাম জামাত থাকবে না এবং যে দলে স্বাধীনতা বিরোধীদের চিহ্নমাত্রা থাকবে না। সেই আবহ তৈরীতেই কি ডাকসু নির্বাচনে কোটা আন্দোলনকারীরা অংশগ্রহণ করেছিল? এই নির্বাচনের সাফল্য কি জামাতকে নতুন একটি সংগঠন হিসেবে উৎসাহী এবং এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে? এরকম প্রশ্নগুলোই এই ডাকসু নির্বাচনের পর সামনে চলে এসেছে। এবারের নির্বাচনে একটি বিষয় দেখা গেছে যে, সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের আদর্শের চেয়ে ঠুনকো আবেগ এবং নিজস্ব দাবিদাওয়ার ব্যাপারেই মনোযোগি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় যে একটা আদর্শিক বিনির্মাণের জায়গা হিসেবে পরিচিত ছিল, যেখানে প্রগতিশীল চিন্তার চর্চা হত এবং ডাকসুতে এর আগে অধিকাংশ সময়ই বাম মনস্ক ছাত্র সংগঠনগুলো আধিপত্য বিস্তার করেছিল। সেই জায়গায় এখন আদর্শহীন একটি ইস্যুভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম যখন নির্বাচনে ভালো ফলাফল করলো তখন এই প্রশ্ন আসতেই পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কি তাহলে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতির অনুপ্রবেশ ঘটলো?
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।