নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২২ মার্চ, ২০১৯
বিএনপির রাজনীতিতে এই মুহর্তে ক্লিন ইমেজের ব্যাক্তিটির নাম হলো গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি যে বক্তব্য রাখছেন বা কথাবার্তা বলছেন,সেগুলোই বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মীর বক্তব্য বলে কর্মীদের একটি বড় অংশ মনে করছে। তিনি মূলত এখন বিএনপির তৃনমূলের কন্ঠস্বরে পরিণত হয়েছেন। তিনি ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে যাওয়ার বিরোধী ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া বিএনপির কোন নির্বাচনে যাওয়া উচিত নয়। তিনি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের কথা বলেছিলেন। তিনিই প্রথম বলেছিলেন, আইনি লড়াই করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারবে না। গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ই সিনিয়র নেতাদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি যিনি বরেছিলেন বিএনপিকে ঢেলে সাজাতে হবে। বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিরোধিতা করেছিলেন। যখন শেষ পর্যন্ত ঐক্য হয় তখন তিনি বলেছিলেন, প্রয়োজনে শয়তানের সঙ্গেও ঐক্য করবো। রাজনীতিতে স্পষ্টবাদী হিসেবে পরিচিত গয়েশ্বর চন্দ্র রায় তার রাজনৈতিক জীবনে কখনো পদস্ফলন ঘটাননি। তিনি শুরু থেকেই বিএনপির রাজনীতি করতেন। জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে বিএনপির রাজনীতির সূচন করেন। তিনি বিএনপির অঙ্গ সংগঠন, জাতীয়তাবাদী যুব দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এখন তিনি স্থায়ী কমিটির সদস্য। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া দুজনকেই গয়েশ্বর রায়কে অত্যন্ত পছন্দ করেন। তাকে আস্থাভাজন মনে করেন। তার বিরুদ্ধে কখনো দলের নীতি আদর্শ নিয়ে আপোস করা, নিজের স্বার্থের জন্য দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার রেকর্ড নেই। এমনকি ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর যখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে নানারকম কথাবার্তা বাজারে প্রচলিত রয়েছে। সরকারের সঙ্গে তার গোপন আঁতাতের খবরও প্রকাশিত হচ্ছে। ঠিক সেই সময় শুধুমাত্র গয়েশ্বর চন্দ্র রায় একজন বিএনপির বিরল রাজনৈতিক, যাকে নিয়ে কোনরকম সরকারের সঙ্গে দেনদরবার, আপোসরফা বা গোপন আতাতের কোন অভিযোগ নাই। এজন্য ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। অনেকেই মনে করেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কেই মহাসচিব করা উচিত। এটা নিয়ে বিএনপির মধ্যে যে আলোচনা হয়নি তা নয়। ভারতসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও মনে করে, বিএনপির এই চরম হতাশজনক দুর্দিনে এমন একজন মহাসচিব দরকার যিনি দলকে সংগঠিত করতে পারবেন এবং দলের নেতাকর্মীদের আস্থাভাজন হিসেবে কাজ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সবার থেকে এগিয়ে। এনিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মনে কনো সন্দেহ নেই। প্রশ্ন উঠে, কেন তাহলে দলের মহাসচিব পদে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আলোচিত নন? কেন তাকে মহাসচিব করার চিন্তাভাবনা বিএনপর নীতিনির্ধারকদের নেই? তার কারণ কি তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করেন এইজন্যই?
বিএনপি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই স্বাধীনতা বিরোধী এবং সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর প্রতি বেশি নির্ভরশীল। বিএনপির নেতৃত্বে সবসময়ই দেখা গেছে, যারা স্বাধীনতা বিরোধী, যারা উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠী তাদের সঙ্গেই বিএনপির সখ্যতাটা একটু বেশি। তারাই বিএনপির দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হন। জিয়াউর রহমান যেমন তাদেরকে দলের শীর্ষ পদগুলোতে নিয়ে এসেছেন। ঠিক তেমনিভাবে খালেদা জিয়াও সেই ধারা অব্যাহত রেখেছেন। তার মধ্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মত একজন নেতার স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ পাওয়া বিরল ঘটনা। অনেকেই মনে করে, বি জিয়াউর রহমানের আমল থেকে বিএনপি নিজেদের একটা সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে বিকশিত করেছে। দক্ষিনপন্থীদের সঙ্গে মাখামাখি করতে তারা স্বস্তিবোধ করে। সেই প্রক্রিয়ায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়াও একটা বড় ব্যপার।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কী তাহলে শুধু ধর্মীয় কারণে দলের মহাসচিব পদের জন্য অযোগ্য? এই প্রশ্নটি উঠেছে বিভিন্ন মহলে। মনে করা হচ্ছে যে, দক্ষিণপন্থী এবং উগ্র ডানপন্থীদের সঙ্গে যেমন বিএনপির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। সেইজন্যই গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দলের বিবেচনায় নেই। দলের একজন সিনিয়র নেতাও বলেছেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় একজন ভালো নেতা। দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। নেতাকর্মীদের মধ্যে তিনি স্পষ্টবাদী এবং সৃজনশীল নেতা হিসেবে পরিচিত। তবে তাকে মহাসচিব করার ক্ষেত্রে একটা কিন্তু আছে। এই কিন্তুটি কি জানতে চাওয়া হলে বিএনপির একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেছেন, তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক। এজন্য বিএনপির মতো একটা সংগঠন তাকে মহাসচিব হিসেবে বিবেচনা করতে ভয় পায়। কারণ ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি বিভিন্ন সময়ে রাজনীতি করেছে। কাজেই একজন সংখ্যালেঘুকে মহাসচিব করার মত ঝুঁকি বিএনপি নিতে চায় না। সম্ভাবত এ কারণেই স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়েই গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে খুশি থাকতে হচ্ছে। তবে একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছে যে, জামাতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নিয়ে যখন নানা রকম কথাবার্তা চলছে এবং বিএনপিকে যখন উগ্র মৌলবাদী এবং দক্ষিনপন্থী ইসলাম পছন্দ দলগুলোর আস্থাভাজন দল হিসেবে মনে করা হচ্ছে, ঠিক তখন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে মহাসচিব করে বিএনপি তার সেক্যুলার চেতনাটাকে উর্ধে তুলে ধরতে পারে। কিন্তু সেটা করার মতো রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং অবস্থান বিএনপির আছে কিনা সেটাই দেখার বিষয়।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে
মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী
লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয়
নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত
অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে
এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক
বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও
এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
শুধু তাই নয়, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়া প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আগামী দিনেও কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মূলত মন্ত্রী-এমপিসহ স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে উপজেলা নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতেই আওয়ামী লীগ এমন কৌশল নিয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড তাপদাহে ১৪ দলে স্বস্তির বৃষ্টি
জানা গেছে, এবারের উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে শুরু থেকেই
সচেষ্ট ছিল আওয়ামী লীগ। এ কারণেই দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দিয়ে সবার জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত
করা হয়। তা সত্ত্বেও বিএনপি-জামায়াতসহ অনেক দল নির্বাচনের বাইরে থাকায় শেষ পর্যন্ত
এই নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হবে—তা নিয়ে সংশয় ছিল। বিশেষ করে সরকারের মন্ত্রী, সংসদ
সদস্য কিংবা স্থানীয়ভাব প্রভাবশালী নেতাদের হস্তক্ষেপে অনেক উপজেলায় তাদের পছন্দের
প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
বিশেষ করে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্য বা স্বজনরা অবাধে ভোটে দাঁড়াতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে আর কেউ প্রার্থী হতে চাইতেন না। এমন বিবেচনা থেকেই ভোটের মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন ও নিকটাত্মীয়দের নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তা সত্ত্বেও অনেক উপজেলায় ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন প্রভাবশালী প্রার্থীরা। তা সত্ত্বেও দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
আরও পড়ুন: নির্দেশ অমান্যকারী মন্ত্রী-এমপিদের সাধারণ ক্ষমা?
তাদের মতে, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের ভোট করার নির্দেশনা দিয়ে দল
সবার জন্য একটি বার্তা দিতে চেয়েছে। তা হলো, আওয়ামী লীগ অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক উপজেলা
নির্বাচন চায়। হাতেগোনা দু-চারটি বাদে মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্যরা নির্বাচনে অংশ
নিচ্ছেন না। তাদের যেসব আত্মীয়স্বজন প্রার্থী হয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই দীর্ঘদিন ধরে
দলীয় রাজনীতিতে অবদান রেখে আসছেন। তা ছাড়া দু-চারটি ব্যতিক্রম বাদে এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা কম। সব মিলিয়ে উপজেলা নির্বাচনে নিয়ে দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলেই
অনেক কেন্দ্রীয় নেতার ধারণা।
এ বিষয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘দলের বার্তা খুব পরিষ্কার, উপজেলা নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমন বার্তাই স্পষ্ট করেছেন। নির্বাচনকে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতেই এই কৌশল। এখন পর্যবেক্ষণ করতে হবে নির্বাচন কতটা প্রভাবমুক্ত হয়।’
আরও পড়ুন: মন্ত্রী-এমপিরা কেন দলের সিদ্ধান্ত মানছেন না
গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ৬২ টিতেই
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন করে জয়ী হন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্যে সিংহভাগই
আওয়ামী লীগ নেতা। ফলে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে যে দ্বৈরথ তৈরি হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনেও
তার প্রভাব পড়তে পারে বলে আওয়ামী লীগের আশঙ্কা। এ কারণেই দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না
দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নির্বাচনকে আরও গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত রাখতে আত্মীয়-স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতেও নির্দেশ
দেয় ক্ষমতাসীন দল। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়ে গেছেন এ ধরনের প্রার্থীরা।
নির্বাচন কমিশনের তপশিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায়, দ্বিতীয়
ধাপে ১৬১, তৃতীয় ধাপে ১১২ ও শেষ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার
তৃতীয় ধাপের মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনের হিসাব অনুযায়ী অন্তত অর্ধশতাধিক মন্ত্রী ও এমপির
স্বজন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে ৪৮০টি উপজেলার মধ্যে এই সংখ্যাকে খুব বেশি বলে মনে
করছে না আওয়ামী লীগ। এ কারণেই ঢালাওভাবে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে আপাতত বিরত থাকছে তারা।
গতকাল গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি
শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি
বলেন, ‘পারিবারিক ফর্মুলা কী? নিজের ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী, এই তো। তারপর হিসাব করে দেখেন,
কয়জন ছেলেমেয়ে, কয়জন স্ত্রী দাঁড়িয়েছে। এর বাইরে তো পরিবার ধরা হয় না। আমাদের
কথা হচ্ছে নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে।’
জানা গেছে, প্রতিটি সংসদীয় আসনে এক বা একাধিক উপজেলা রয়েছে। এলাকার
রাজনীতিতে এমপির পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যানের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। দ্বাদশ জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও অনেকে উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে হেরেছেন।
এ কারণে উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেন সংসদ সদস্যরা। নিজ পরিবার কিংবা বলয়ের
লোককে উপজেলা চেয়ারম্যান করতে সচেষ্ট তারা।
এ পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের নির্বাচনে
অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে
কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে তাদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও দলের
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ার করে দেন।
সূত্র জানায়, এরপরই মন্ত্রী এমপিদের স্বজনদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
জমা পড়ে দলের দপ্তরে। অনেকে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে
লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার আলোচ্যসূচিতেও
উপজেলা নির্বাচন ইস্যুটি অন্তর্ভুক্ত হয়। সাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রতিবেদনও চূড়ান্ত করেন।
তবে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাহী সংসদের সভায় এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।
বৃহস্পতিবার (০২ মে) সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নে অনেকটা নমনীয় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি বলেছিলাম (মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে)। কারণ হচ্ছে, আমরা চাইছি, নির্বাচনটা প্রভাবমুক্ত যেন হয়, মানুষ যেন স্বাভাবিকভাবে ভোটটা দিতে পারে। সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।’
আরও পড়ুন: ভোটের মাঠেই রয়েছেন মন্ত্রী-এমপির স্বজন ও বিএনপির প্রার্থীরা
এসব কারণে অনেকের ধারণা, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নেওয়ার হুমকি ও হুঁশিয়ারি রাজনৈতিক কৌশল।
আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মূলত বিএনপি নির্বাচনে
আসবে না জেনেই নির্বাচনকে জমজমাট ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়ার
সিদ্ধান্ত দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচনে যদি মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন
ঢালাওভাবে অংশ নেয়, তবে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে একপেশে হয়ে যাবে—এমন আশঙ্কায়
তিনি ওই কৌশল নিয়েছিলেন।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন কালবেলাকে বলেন,
‘আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো বার্তা দিয়েই দিয়েছেন। তার বার্তা
অনুযায়ী নির্বাচন যে-ই করুক, কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন
কঠোর ভূমিকা পালন করবে। উপজেলা নির্বাচনে কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না, যেহেতু
দল কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’
প্রভাবশালী নেতা আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।