নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৯ এপ্রিল, ২০১৯
নীরবেই পরিবর্তন হয়েছে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক। বিশেষ করে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অসুস্থ হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের পাঁচ নেতার উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। বিভিন্ন বিষয়ে তাদের দায়িত্ব দিচ্ছেন। সাংগঠনিক বিষয়ে আগে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করছেন, তাদের মতামত দিচ্ছেন। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এবং তথ্য তাদের সঙ্গে শেয়ার করছেন। এরাই আওয়ামী লীগের এখন সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। দলের সভাপতির নির্দেশ পেয়ে সরাসরি তারা বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের পরামর্শ দিচ্ছেন। সারাদেশে সাংগঠনিক অবস্থা যাচাই বাছাইয়ের কাজ করছেন এই পাঁচ নেতাই। এরা হলেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাসিম এবং বিএম মোজাম্মেল। আওয়ামী লীগ সভাপতি এখন এই পাঁচজনকে দিয়েই দল চালাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ সম্পর্কে যারা গবেষণা করেন তাদের মতে, ৮১ সালে দলের নেতৃত্ব গ্রহণের পর থেকেই শেখ হাসিনা একটা বিশ্বস্ত বলয় তৈরি করে কাজ করেন। এরাই আসলে দলের নীতিনির্ধারক। ৮০’র দশকে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক ছিলেন জোহরা তাজউদ্দিন, বেগম সাজেদা চৌধুরী, জিল্লুর রহমান এবং আমীর হোসেন আমু। ৯০’র দশকে আমীর হোসেন আমু, জিল্লুর রহমানের সঙ্গে যুক্ত হন আবদুল জলিল এবং মোহাম্মদ নাসিম। ২০০১ এর বিপর্যয়ের পর শেখ হাসিনা তরুণদের উপর নির্ভরশীল হন। এসময় সাবের হোসেন চৌধুরী, মাহামুদুর রহমান মান্না, আখতারুজ্জামানরা আবদুল জলিলের সঙ্গে দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রে পরিণত হন। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের ওলট-পালটে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। শেখ হাসিনার নিজস্ব বলয়ও পরিবর্তন হয়। এসময় আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক হন জিল্লুর রহমান, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। ২০১০ এ এসে ওবায়দুল কাদের, মাহাবুবুল আলম হানিফ, ডা. দীপুমনি শেখ হাসিনার নিজস্ব বলয়ে প্রবেশ করেন। ক্রমেই ওবায়দুল কাদের দলের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তিতে পরিণত হন। দলীয় সব সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী তার সঙ্গেই পরামর্শ করতেন বলে দলে চাউর আছে। তাছাড়া প্রচুর পরিশ্রম করতেন বলে দলের সভাপতি তার উপর অনেকখানি নির্ভরশীল হয়ে উঠেছিলেন।
কিন্তু ওবায়দুল কাদের অসুস্থ হওয়ার পর আওয়ামী লীগ পরিচালনায় একটি শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর গুরুদায়িত্ব পালন করে আবার দলের সব খুটিনাটি বিষয় তদারকি করা ছিল দলের সভাপতির জন্য বাড়তি চাপ। এর উপর সামনে কাউন্সিল এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর বিরাট আয়োজন। এই প্রেক্ষিতেই পাঁচজনকে দলের কার্যক্রম এবং নীতিনির্ধারণী বিষয়গুলো দেখার দায়িত্ব দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আওয়ামী লীগ সভাপতির দেওয়া কিছু দায়িত্ব এই পাঁচজন দক্ষতার সঙ্গেই পালন করেছে বলেও আওয়ামী লীগ সভাপতির ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন