নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৪ এপ্রিল, ২০১৯
টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম বিদেশ সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন যে, ‘এরপর তিনি আর প্রধানমন্ত্রী হবেন না’। চলতি মেয়াদের পর তিনি দায়িত্ব থেকে অবসর নেবেন বলেও জানিয়েছিলেন। তখন সবাই মনে করেছিল যে, এটা হয়তো কথার কথা। কিন্তু ওই বক্তব্যে এখনো অনড় আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু অনড়ই নন, তিনি বিভিন্ন আলাপচারিতায় বারবার এই কথাটা বলছেন।
প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি এবং ঘনিষ্ঠদেরকে এই সতর্কবার্তা দিচ্ছেন যে, এবারই শেষ। আর নয়। গত বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনজন চিকিৎসক তার ডান চোখের নিবিড় পরীক্ষা-নীরিক্ষা করেন। এদের মধ্যে একজন ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক। একজন ছিলেন তার সাবেক উপদেষ্টা। তৃতীয় চিকিৎসক ছিলেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের পরিচালক। এই তিনজনকেই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, এবরই শেষ। তিনি আর দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক নন। তিনি অবসর জীবনের পরিকল্পনা করছেন বলেও জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, গতকাল মঙ্গলবার তিনি ব্রুনাই থেকে দেশে ফেরার পর মন্ত্রিসভার কয়েকজন তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন দাপ্তরিক বিষয়ে পরামর্শ চান। তখন প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে নিজেদের দায়িত্ব নিজেদের বুঝে নেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘আমি ক্লান্ত। এবারের পর আমি আর দায়িত্ব গ্রহণ করবো না।’
উল্লেখ্য যে, প্রধানমন্ত্রী জার্মানিতে গিয়ে আল জাজিরার এক সাংবাদিককে দেওয়া সাক্ষাতকারে বলেন যে, ‘আমি আর দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক নই।’ তার এই সিদ্ধান্তের পর প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। দলের মধ্যে এবং বিভিন্ন মহল থেকে তার এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য অনুরোধ করা হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখালেখিও হয়েছে।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তার সিদ্ধান্তে অনড়। এ বিষয়ে তিনি যাদের সঙ্গেই কথা বলেছেন, তার ব্যাখ্যা ছিল এমন যে প্রত্যেকেরই একটা চলে যাওযার সময় থাকে। তিনি একটি সম্মানজনক প্রস্থান চান। এজন্য তিনি এবারের পর আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না, সেখানে আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। তবে তিনি বলেছেন যে, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকবেন। এরপর তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ছেড়ে দেবেন। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী এই আলাপচারিতায় বলেছেন, পরিবারের কাউকে তিনি আওয়ামী লীগের উত্তরাধিকারী হিসেবে নির্বাচিত বা মনোনীত করতে আগ্রহী নন। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা যাকে নেতা হিসেবে পছন্দ করবে সেই-ই নেতৃত্বে আসবে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে তার ছেলেমেয়ে কেউ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসুক, এটা চান না। তবে তিনি এটাও বলেছেন, যদি দলের নেতাকর্মীরা কাউন্সিলের মাধ্যমে কাউকে নির্বাচিত করেন তবে সেটা কাউন্সিলরদের বিষয়। কিন্তু চাপিয়ে দেওয়া কোনো নেতৃত্ব তিনি বিশ্বাস করেন না। প্রধানমন্ত্রী তার ঘনিষ্ঠদেরকে বলেছেন যে, অবসর জীবনে তিনি তার নাতি-নাতনিদের নিয়ে সময় কাটাতে চান, বই লিখতে চান এবং প্রচুর বই পড়তে চান। কিন্তু দলের মধ্যে তার এই আকস্মিক অবসরের ঘোষণায় দলের মধ্যে নানারকম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। দলের বিভিন্ন মহল থেকে এই সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনার জন্য বার বার অনুরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু এসব অনুরোধ সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী এখন পর্যন্ত তার সিদ্ধান্তে অনড় অবস্থানে রয়েছেন।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।
মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে না- এই অবস্থান থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পিছু হঠেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থাৎ নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তাদের আপাতত কিছু হচ্ছে না। অথচ ক’দিন আগেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বারবার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন এবং যারা এই দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তাদের ব্যাপারে নমনীয় মনে হয়েছে।