নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০১৯
বিএনপি’র নির্বাচিত সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান জাহিদের শপথের মধ্যে দিয়ে দলটির ভাঙন প্রক্রিয়ার সূচনা হলো বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে। এর মাধ্যমে বিএনপি স্পষ্টত দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। মাত্র দু’দিন আগে বিএনপি তার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, দলটির কেউ জাতীয় সংসদ অধিবেশনে যোগ দেবে না এবং বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির জন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, এই বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণের ব্যাপারে এখনই কোনো হার্ডলাইন না নেওয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছিলেন। কিন্তু ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের চাপে স্থায়ী কমিটিতে ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তের ৭২ ঘন্টার বিএনপির একজন সদস্য শপথ নিলেন। এমন একজন সংসদ সদস্য শপথ নিয়েছেন, যিনি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এলাকার নেতা। মির্জা ফখরুল ইসলামের ছত্রছায়ায়ই তিনি বিএনপিতে বেড়ে উঠেছেন। বিএনপির একাধিক নেতারা বলেছেন যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ইঙ্গিতে এবং তার নির্দেশেই জাহিদুর রহমান শপথ গ্রহণ করেছেন। গতকাল রাতেও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাসভবনে জাহিদ দীর্ঘ বৈঠক করেছেন বলে বিএনপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিএনপির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়েছেন যে, যেকোনো মূল্যে তিনি সংসদের কার্যক্রমে বিএনপিকে অংশগ্রহণ করাবেন। বিপুল পরিমান অর্থের বিনিময়েই তিনি সরকার নির্দেশিত পথে দলকে পরিচালিত করছেন বলেও ঐ নেতা দাবি করেন। তিনি বলেন যে, নির্বাচনের আগে যদি বিএনপি শর্ত দিত যে বেগম খালেদা জিয়াকে প্যারোল বা জামিন দিতে হবে। দিলেই তারা নির্বাচনে যাবে। এমন কোন দাবি উথাপন করা হলে সরকার নি:সন্দেহে সে দাবি মেনে নিতো। সেক্ষেত্রে বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে নির্বাচন করলে বিএনপি অনেক ভালো ফলাফল করতো। কিন্তু যেহেতু সরকারের অনুগত হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পরিচয় লাভ করেছে। সেজন্য বিএনপি সে সময় সে দাবিটি উথাপন করেনি। এখন যখন বিএনপির সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, তখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার ইস্যুটি সামনে নিয়ে এসেছেন। এর মূল উদ্দেশ্য হলো বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার ইস্যুটি সামনে এনে বিএনপির সংসদ সদস্যদের সংসদে নিয়ে যাওয়া। এর মাধ্যম তিনি বর্তমান সরকার এবং ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনকে বৈধতা দিতে চান। তবে বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পরে বেগম খালেদা জিয়ার দলের একক কর্তৃত্বের খর্ব হয়েছে। দলের মধ্যে যৌথ নেতৃত্ব তৈরী করার জন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সকল সদস্য একমত পোষন করেছে। এজন্যই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন বিএনপিকে বিভক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এখন ধারণা করা হচ্ছে, যে পাঁচজন সংসদ সদস্য শপথ গ্রহণ করেননি, আগামী তিনদিনের মধ্যে তারা শপথ গ্রহণ করবে। সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে যে, ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তারা শপথ গ্রহণ না করে যদি একটা আবেদন দেন যে অনিবার্য কারণবশত তারা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করতে পারেননি কিংবা তারা কোন আবেদন না দিয়েও যদি ৩০ এপ্রিলের পরেও তারা শপথ গ্রহণ করেন। তখন যদি তারা বলে যৌক্তিক কারণে শপথ গ্রহণ করতে পারেননি, তাদের আসন শূন্য হবে না। সংসদে যাওয়া এবং শপথ নেওয়া না নেওয়াকে ঘিরেই যে বিএনপি ভাঙ্গনের মুখে তা এখন স্পষ্ট। বিএনপির অন্যতম নেতা মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন বলেছেন, ‘বিএনপিকে ভাঙ্গার চক্রান্ত সরকার করছে না। বিএনপির মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু স্বার্থান্বেষী মহলেই বিএনপিকে ভাঙ্গার জন্য যথেষ্ঠ। তাদের ইঙ্গিতেই জাহিদ শপথ গ্রহণ করেছেন।’ বিএনপির একাধিক নেতা মনে করছেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি অংশ যারা সরকারের সঙ্গে আপোষরফার মাধ্যমে দলকে পরিচালনা করতে চান। অন্য একটি অংশ যারা আন্দোলন এবং সংগ্রাম করে খালেদা জিয়ার মুক্তি চান। এই দুই ধারার মধ্যে বিভক্ত স্পষ্ট হয়ে গেছে। জাহিদের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে তাদের এই ভাঙ্গন আরো ত্বরান্বিত হয়েছে বলেই সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে। এই ভাঙ্গন প্রক্রিয়ায় একটি পক্ষ থাকবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও তার অনুগতরা এবং অন্য একটি পক্ষে থাকবে স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ অন্যান্যরা বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই ভাঙ্গন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি উদাহরণ দেন যে, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে কোনো দাবি দাওয়া ছাড়াই এবং বেগম জিয়ার মুক্তির শর্তপূরন ছাড়াই ফখরুল দলকে নির্বাচনে নিয়ে গিয়েছিলেন।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।