নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২৭ এপ্রিল, ২০১৯
সরকারের চাপ নয়, বরং কূটনৈতিক মহলই এখন বিএনপির নির্বাচিতদের সংসদে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে চাপ দিচ্ছে। সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার শেষ সময়ে এসে কূটনৈতিক মহলের তৎপরতা লক্ষণীয়। একাধিক দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে যে, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার, ভারতের রাষ্ট্রদূত রিভা গাঙ্গুলী এবং যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন, তিনজনই বিএনপির সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তারা বিএনপিকে অনুরোধ করেছে, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় থাকার জন্য, সেই লক্ষ্যে আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে যেন বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা যেন শপথ গ্রহণ করে এবং সংসদের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। গণতান্ত্রিক রীতিনীতি এবং গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার জন্য সংসদই যেন কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এজন্য তারা বিএনপিকে অনুরোধ করছেন। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, গত শুক্রবার মার্কিন লাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের একাধিক নেতার কথাবার্তা হয়েছে। সেখানে দলের মাহসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামে আলমগীরও ছিলেন। ড. আব্দুল মঈন খানের সঙ্গে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের এনিয়ে একাধিক দফা কথা হয়েছে বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। নবনিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারও বিএনপির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দকে বলা হয়েছে, সংসদকে যেন বিএনপির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হয়। সে লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে এটাও বলা হয়েছে যে, সংসদে যত কম সংখ্যক আসনই হোক না কেন বিএনপির সেখানে গিয়ে কথা বলা উচিত। তাদের বক্তব্যগুলো পেশ করা উচিত।
সর্বশেষ এই কূটনৈতিকদের সূচনা হয়, গতমাসে যখন বিএনপির উদ্যোগেই কূটনৈতিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং খালেদা জিয়ার অসুস্থতার ব্যাপারে ব্রিফ করা হয়েছিল। সেসময় বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তারা সংসদে যাবে কি যাবে না সে ব্যাপার নিয়ে এখনো চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে তৃনমূলের নেতৃবৃন্দ থেকে চাপ আছে তারা যেন সংসদে যোগ না দেয়। এই প্রেক্ষাপটে প্রায় একমাস পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয় যে, বিএনপির নির্বাচিত কোন সদস্যই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করবে না। তারা সংসদে যাবেন না।
উল্লেখ্য যে, আগামী ৩০ এপ্রিল শপথ নেওয়ার যে সাংগঠনিক বাধ্যবাধকতা তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে যদি বিনপির বাকি পাঁচজন সদস্য শপথ গ্রহণ না করেন তাহলে তাদের আসনগুলো শুন্য হয়ে যাবে। কূটনৈতিক মহল এই পরিস্থিতি চাইছেন না। তারা মনে করেন যে, এই সময়ের মধ্যে যদি বিএনপির বাকিরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন তাহলে বাংলাদেশে যে গণতান্ত্রিক ধারা এবং বিধি ব্যবস্থা তা আরো অব্যাহত থাকবে।
গত ৪৮ ঘন্টায় বিএনপির সঙ্গে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতসহ কূটনৈতিক ব্যাক্তিদের দফায় দফায় বৈঠক এবং আলাপ আলোচনার খবর পাওয়া গেছে যেসব বৈঠকে তারা বিএনপিকে অনুরোধ করেছে যে, বিএনপি যেন সংসদে যোগ দেয় এবং তাদের বক্তব্যগুলো সংসদে উপস্থাপন করে। সংসদে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র , যুক্তরাজ্যের প্রধান যুক্তিগুলো হলো এই; প্রথমত, জনগনের ভোটে তারা নির্বাচিত হয়েছেন, কাজেই সংসদে অবশ্যই যাওয়া উচিত। দ্বিতীয়ত, তারা মনে করে যে সংসদে যদি তারা যোগ না দেয়, তাহলে রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে না। সেক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে কোন রকমের আলাপ আলোচনা করার ক্ষেত্রেও বিদেশী রাষ্ট্রদূতগুলোর সমস্যা হবে। তৃতীয়ত, তারা যে দাবি দাওয়ার কথা বলে সেগুলো অন্যকোন অগনতান্ত্রিক পন্থায় না বলে সংসদে গিয়ে যদি বলা হয় সেটা শোভনীয় এবং গণতান্ত্রিকভাবে এই বিষয়গুলোর দিকে নজড় দিতে পারবে।
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে এখন এ ব্যাপারে কোন ইতিবাচক সারা দেওয়া হয়নি। একটি সূত্র দাবি করছে যে, ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির নেতা ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন যে, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি সুরাহা হলে সংসদে যোগ দেওয়ার ব্যাপারটা সহজতর হতো। কিন্তু সেটা সরকার করছে না। অবশ্য ড. মঈন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন যে, বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকদের সঙ্গে তার বিভিন্ন পর্যায়ের আলাপ আলোচনা হয়েছে। তবে তিনি দাবি করেন যে, সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে কোন ইতিবাচক সিদ্ধান্তের কথা তিনি কাউকে বলেননি। এছাড়াও গত দুইদিনে বিএনপির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টুর সঙ্গে ভারতীয় দূতাবাসের একাধিক কর্মকর্তার বৈঠকের খবর পাওয়া গেছে। তারাও বিএনপিকে সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে অনুরোধ জানিয়েছেন। মিন্টু তাদেরকে বলেছেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর এবং সংসদে যাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারকে কিছু ভূমিকা পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি কিছু শর্তের কথা বলেছেন, যার মধ্যে রয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তার ভাষায় বিএনপির নেতৃবৃন্দের হয়রানি মূলক মামলাগুলো প্রত্যাহার। তবে এই কূটনৈতিক চাপের মুখে বিএনপি শেষ পর্যন্ত সংসদে যাবে কি যাবে না সে সিদ্ধান্ত এখন স্পষ্ট নয়। তবে বিএনপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, আগামীকাল কিংবা পরশুর মধ্যে বিএনপির অন্তত তিনজন সংসদ সদস্য শপথ গ্রহণ করবেন। এ ব্যাপারে তারা পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি গ্রহণ করেও রেখেছেন। তবে যারা শপথ গ্রহণ করেছেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তারা কেউই বলেননি যে কূটনৈতিক চাপে বা সরকারী চাপে শপথ গ্রহণ করছেন। বরং তারা বলেছেন, জনগনের কাছে দায়বদ্ধতা থেকেই শপথ গ্রহণের জন্য আগ্রহী হয়েছেন।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।