নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২৮ এপ্রিল, ২০১৯
এবার কাউন্সিলের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে কমিউনিস্ট অধ্যায়ের অবসান ঘটছে। ছাত্র ইউনিয়ন, ন্যাপ এবং কমিউনিস্ট পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়াদের কেউই কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকছেন না। অবশ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীকে এর আওতায় আনা হয়নি। উপদেষ্টা মণ্ডলী একটি অলংকারিক পদ। এই কমিটি দলের থিংক ট্যাংক হিসেবে কাজ করে। বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামে তিনজন প্রাক্তন কমিউনিস্ট রয়েছেন, এরা হলেন বেগম মতিয়া চৌধুরী, নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং আবদুল মান্নান খান- এরা তিনজনই এবার প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ হারাবেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছে। এর ফলে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি কমিউনিস্ট শূন্য হবে।
গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টিসহ বাম সংগঠনগুলোর সম্পর্ক ভালো না। কমিউনিস্ট পার্টি বা ছাত্র ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান শুন্যের কোঠায় নেমে গেছে। ফলে আওয়ামী লীগে কমিউনিস্ট বিতর্কের অবসান ঘটবে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির বন্ধন দীর্ঘ। জাতির পিতা যখন স্বাধিকার আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন তখন কমিউনিস্ট পার্টি ছিলো তার সহযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পরেছিল কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ, ছাত্র ইউনিয়নসহ মস্কোপন্থী বাম দলগুলো। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নসহ কমিউনিস্ট দেশগুলোর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থনের বড় কারণ ছিলো কমিউনিস্ট পার্টি। মুক্তিযুদ্ধের পর কিছু টানাপোড়েন সত্বেও কমরেড মনি সিংয়ের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সুসম্পর্ক ছিলো। জাতির পিতা বাকশালের উদ্যোগ নিলে কমিউনিস্ট পার্টি তাতে বিলীন হয়। ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর যে স্বল্প সংখ্যক রাজনৈতিক দল জাতির পিতার হত্যার বিচার চেয়েছিল, তাদের মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টি ছিলো অগ্রগন্য। ৭৫ এর পর বহু কমিউনিস্ট আওয়ামী লীগে যোগ দেয়। ৮১ তে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পর কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সুসম্পর্ক আরও বাড়ে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ১৫ দলীয় জোটে কমিউনিস্ট পার্টি ছিল দ্বিতীয় প্রধান দল। কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মোহাম্মদ ফরহাদ ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতির বিশ্বস্ত এবং আস্থাভাজন।। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর আস্তে আস্তে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির দূরত্ব তৈরি হয়। এসময় বিপুল সংখ্যক আওয়ামী লীগ কমিউনিস্টে যোগ দেয়। ওয়ান-ইলেভেনের সময় আওয়ামী লীগে কমিউনিস্ট বিপ্লব ঘটে। দলের অধিকাংশ হেভিওয়েট নেতা সংস্কারপন্থী হয়ে শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চান। অন্যদিকে বেগম মতিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বে কমিউনিস্টরা শেখ হাসিনার প্রতি আকুণ্ঠ সমর্থন জানান। ২০০৮ এ নির্বাচনে বিজয়ের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভায় কমিউনিস্টদের জয়জয়কার দেখা যায়। শেখ হাসিনাকে কমিউনিস্টরা ঘিরে ফেলেছে এমন আওয়াজ আওয়ামী লীগে জোরেশোরেই ওঠে। দলের মধ্যে কমিউনিস্ট বিরোধী তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে মন্ত্রিসভা গঠনে চমক দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং নুরুল ইসলাম নাহিদকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেন। মতিয়া চৌধুরীর মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়াটা ছিল বিস্ময়কর। আর আগামী অক্টোবরের কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় কমিটি কমিউনিস্ট মুক্ত হলে তা হবে আরেক বিস্ময়।
বাংলা ইনসাইডার/এসআর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।
মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে না- এই অবস্থান থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পিছু হঠেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থাৎ নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তাদের আপাতত কিছু হচ্ছে না। অথচ ক’দিন আগেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বারবার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন এবং যারা এই দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তাদের ব্যাপারে নমনীয় মনে হয়েছে।