নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ০১ মে, ২০১৯
আকস্মিকভাবে বিএনপির পাঁচ এমপির শপথ গ্রহণ শুধু বিএনপিকেই লণ্ডভণ্ড করে দেয়নি, সেই তাণ্ডবে লন্ডভণ্ড হয়েছে ২০ দল এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এই ঘটনায় বিএনপির লাভ ক্ষতি কি হয়েছে তা নিয়ে চলছে নানা হিসাব নিকাশ। কিন্তু বিএনপির পাঁচ এমপির শপথ গ্রহণ ইস্যুতে দেউলিয়া হয়ে গেছেন কয়েকজন রাজনীতিবিদ, যারা বিএনপির ওপর নির্ভর করেই রাজনীতি করছিলেন। এই ঘটনায় সবেচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাঁরাই। বিএনপি শপথ না নিলে আস্তে আস্তে রাজপথের আন্দোলন গড়ে তোলা হবে এবং বিএনপিতে এবং রাজনীতিতে তাঁদের কদর বাড়বে এমন ধারণা তারা করছিলেন। কিন্তু তাঁরা হতাশ হয়েছেন, আশাহত হয়ে পড়েছেন। বিএনপির পাঁচ এমপির শপথ গ্রহণের মধ্যদিয়ে রাজনীতি সংসদ কেন্দ্রিক হয়ে গেলো। সংসদের বাইরে যে রাজনৈতিক নেতারা আছেন তাঁরা আপাতত সংসদের বাইরে আগামী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত একরকম অবসর জীবনই কাটাবেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। যেসমস্ত নেতারা নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই পাদপ্রদীপে এসেছিলেন, তাঁরাই আওয়ামী লীগ বিএনপির চেয়ে নিজেদেরকে বড় নেতা হিসেবে আবির্ভূত করেছিলেন এই ঘটনায় তাঁরা এমনভাবে ছিটকে পড়েছেন যে রাজনীতিতে তাঁরা প্রায় বিপন্ন এবং অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজনকে নিয়েই এই প্রতিবেদন-
মাহামুদুর রহমান মান্না
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা মাহামুদুর রহমান মান্না। একসময় জাসদ-বাসদ ও পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে মাহামুদুর রহমান মান্না শেষে নিজেই নাগরিক ঐক্য নামে একটি সংগঠন করেছিলেন। কিন্তু সংগঠনের বিকাশ ঘটাতে পারেননি। শেষ্পর্যন্ত তিনি ঠাই নেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে। নির্বাচনের আগে তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নীতিনির্ধারক হয়ে ওঠেন। তিনি বিএনপি চালান এবং রাজনীতিতে তাঁর গুরুত্ব অনেক বেশী এরকম একটি ভাবমূর্তি তৈরি করার চেষ্টা করেন। নির্বাচনে তিনি শুধু পরাজিতই হননি বরং তিনি যে নিজেকে জাতীয় নেতা হিসেবে দাবী করেন সেই দাবীও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এই প্রেক্ষিতে মান্না চেয়েছিলেন যে, বিএনপির এমপিরা শপথ গ্রহণ করবে না এবং আস্তে আস্তে তিনি আন্দোলন গড়ে তুলবেন। যারা শপথ গ্রহণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল তাঁদের মধ্যে মান্না অন্যতম। যখন বিএনপি শপথ নিলো তখন সবচেয়ে বড় শত্রু হয়েছেন মান্না। মান্না কোনো রাখঢাক না রেখেই এই শপথের সমালোচনা করেছেন। বাস্তবতা হলো এই শপথের কারণে রাজনীতিতে দেউলিয়া হয়ে পরলেন মান্না। কারণ এই শপথের মধ্য্যদিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের রাজনীতির প্রায় মৃত্যুঘন্টা বেজে গেছে। বিএনপি এখন নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত, নিজের দল গোছাতেই ব্যস্ত। এই বাস্তবতায় মান্নাদের মত ‘পরগাছারা’ বিএনপিতে কতটা প্রয়োজন এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিএনপির মধ্যেই। কাজেই মান্নার ভবিষ্যৎ রাজনীতি অনিশ্চয়তার মুখে।
আসম আব্দুর রব
জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের আরেক নেতা আসম আব্দুর রবও নির্বাচনের সময় বেশ হৈচৈ করেছিলেন। ঐক্যফ্রন্টের নেতা হয়ে তিনি সরকারকে ফেলে দেয়ার হুমকি ধামকিও কম দেননি। নির্বাচনে জনগণ তাঁকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেছে। নির্বাচনের পর তিনি হঠাৎ সরব হঠাৎ নিরব ভূমিকা পালন করতেন। বিএনপি নেতাদের শপথ না নেয়ার পক্ষে তিনিও ছিলেন অন্যতম। কিন্তু বিএনপি শপথ নেয়ায় তিনিও মুষড়ে পড়েছেন। রাজনীতিতে তিনিও একটা অপ্রয়োজনীয় উপাদানে পরিণত হয়েছেন।
কাদের সিদ্দীকি
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দীকিও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়েছিলেন বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে। রাজনীতির মাঠে তিনি যতটা না আলোচিত তিনি তারচেয়েও তিনি আলোচিত ৭৫ পরবর্তী সময়ের ভুমিকার কারণে। কিন্তু সেই ধারণাকে আড়াল করে তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজনীতিতে বিএনপি ঘরানার রাজনীতিতে নিজেকে বিকশিত করতে চেয়েছিলেন। ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে নির্বাচনে তাঁর মনোনয়ন বাতিল হয়েছিল। নির্বাচনের পরও তিনি চেয়েছিলেন সকলকে নিয়ে আন্দোলন করতে। কিন্তু বিএনপির এই শপথ গ্রহণের মধ্যদিয়ে কাদের সিদ্দীকির রাজনীতিও একটা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়লো।
শুধু জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নয় ২০ দলের অনেকেরই রাজনীতি এখন সংকটের মধ্যে পড়েছে। তাঁদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত এখন গাড় অন্ধকারে ঢাকা। এদের মধ্যে রয়েছেন কল্যাণ পার্টির নেতা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ ইব্রাহিম, এলডিপির নেতা কর্নেল অলি আহমেদসহ আরও অনেকেই। এরা এখন কি করবেন? কারণ বিএনপি এখন দুটো কাজে ব্যস্ত থাকবে। এক হলো- সংসদ কেন্দ্রীক রাজনীতি। সংসদে বিএনপি চাইবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং অন্যান্য বিহশোয়গুলোকে সামনে নিয়ে এসে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। অন্যদিকে এবিনপির এখন সবচেয়ে বড় কাজ যেটা সামনে এসেছে সেটি হলো দল গুছানো। কারণ হতবিহব্বল, হতাশ, বিক্ষুব্ধ এবং প্রায় নেতিয়ে পরা দলটিকে জাগ্রত করাই এখন বিএনপির চ্যালেঞ্জ। সেখানে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা ২০দলের দিকে কোনো আগ্রহ নেই। যারা রাজনীতিতে নিজের শক্তির ওপর বলিয়ান না হয়ে অন্য দলের ওপর নির্ভরশীল হয় তাঁদের রাজনীতি এই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রায় নিঃশেষ যে হয়ে গেলো তা আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে পাঁচ জনের শপথ গ্রহণের মধ্যদিয়ে।
বাংলা ইনসাইডার/এসআর
মন্তব্য করুন
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে
মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী
লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয়
নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত
অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে
এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক
বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও
এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
শুধু তাই নয়, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়া প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আগামী দিনেও কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মূলত মন্ত্রী-এমপিসহ স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে উপজেলা নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতেই আওয়ামী লীগ এমন কৌশল নিয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড তাপদাহে ১৪ দলে স্বস্তির বৃষ্টি
জানা গেছে, এবারের উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে শুরু থেকেই
সচেষ্ট ছিল আওয়ামী লীগ। এ কারণেই দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দিয়ে সবার জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত
করা হয়। তা সত্ত্বেও বিএনপি-জামায়াতসহ অনেক দল নির্বাচনের বাইরে থাকায় শেষ পর্যন্ত
এই নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হবে—তা নিয়ে সংশয় ছিল। বিশেষ করে সরকারের মন্ত্রী, সংসদ
সদস্য কিংবা স্থানীয়ভাব প্রভাবশালী নেতাদের হস্তক্ষেপে অনেক উপজেলায় তাদের পছন্দের
প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
বিশেষ করে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্য বা স্বজনরা অবাধে ভোটে দাঁড়াতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে আর কেউ প্রার্থী হতে চাইতেন না। এমন বিবেচনা থেকেই ভোটের মাঠ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন ও নিকটাত্মীয়দের নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তা সত্ত্বেও অনেক উপজেলায় ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন প্রভাবশালী প্রার্থীরা। তা সত্ত্বেও দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
আরও পড়ুন: নির্দেশ অমান্যকারী মন্ত্রী-এমপিদের সাধারণ ক্ষমা?
তাদের মতে, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের ভোট করার নির্দেশনা দিয়ে দল
সবার জন্য একটি বার্তা দিতে চেয়েছে। তা হলো, আওয়ামী লীগ অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক উপজেলা
নির্বাচন চায়। হাতেগোনা দু-চারটি বাদে মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্যরা নির্বাচনে অংশ
নিচ্ছেন না। তাদের যেসব আত্মীয়স্বজন প্রার্থী হয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই দীর্ঘদিন ধরে
দলীয় রাজনীতিতে অবদান রেখে আসছেন। তা ছাড়া দু-চারটি ব্যতিক্রম বাদে এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা কম। সব মিলিয়ে উপজেলা নির্বাচনে নিয়ে দলীয় কৌশল সফল হয়েছে বলেই
অনেক কেন্দ্রীয় নেতার ধারণা।
এ বিষয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ‘দলের বার্তা খুব পরিষ্কার, উপজেলা নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমন বার্তাই স্পষ্ট করেছেন। নির্বাচনকে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতেই এই কৌশল। এখন পর্যবেক্ষণ করতে হবে নির্বাচন কতটা প্রভাবমুক্ত হয়।’
আরও পড়ুন: মন্ত্রী-এমপিরা কেন দলের সিদ্ধান্ত মানছেন না
গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ৬২ টিতেই
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন করে জয়ী হন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মধ্যে সিংহভাগই
আওয়ামী লীগ নেতা। ফলে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে যে দ্বৈরথ তৈরি হয়েছে, উপজেলা নির্বাচনেও
তার প্রভাব পড়তে পারে বলে আওয়ামী লীগের আশঙ্কা। এ কারণেই দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না
দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নির্বাচনকে আরও গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত রাখতে আত্মীয়-স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতেও নির্দেশ
দেয় ক্ষমতাসীন দল। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়ে গেছেন এ ধরনের প্রার্থীরা।
নির্বাচন কমিশনের তপশিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলায়, দ্বিতীয়
ধাপে ১৬১, তৃতীয় ধাপে ১১২ ও শেষ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার
তৃতীয় ধাপের মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনের হিসাব অনুযায়ী অন্তত অর্ধশতাধিক মন্ত্রী ও এমপির
স্বজন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তবে ৪৮০টি উপজেলার মধ্যে এই সংখ্যাকে খুব বেশি বলে মনে
করছে না আওয়ামী লীগ। এ কারণেই ঢালাওভাবে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে আপাতত বিরত থাকছে তারা।
গতকাল গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি
শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি
বলেন, ‘পারিবারিক ফর্মুলা কী? নিজের ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী, এই তো। তারপর হিসাব করে দেখেন,
কয়জন ছেলেমেয়ে, কয়জন স্ত্রী দাঁড়িয়েছে। এর বাইরে তো পরিবার ধরা হয় না। আমাদের
কথা হচ্ছে নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে।’
জানা গেছে, প্রতিটি সংসদীয় আসনে এক বা একাধিক উপজেলা রয়েছে। এলাকার
রাজনীতিতে এমপির পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যানের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। দ্বাদশ জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও অনেকে উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে হেরেছেন।
এ কারণে উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেন সংসদ সদস্যরা। নিজ পরিবার কিংবা বলয়ের
লোককে উপজেলা চেয়ারম্যান করতে সচেষ্ট তারা।
এ পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের নির্বাচনে
অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে
কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে তাদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও দলের
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ার করে দেন।
সূত্র জানায়, এরপরই মন্ত্রী এমপিদের স্বজনদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
জমা পড়ে দলের দপ্তরে। অনেকে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে
লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার আলোচ্যসূচিতেও
উপজেলা নির্বাচন ইস্যুটি অন্তর্ভুক্ত হয়। সাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রতিবেদনও চূড়ান্ত করেন।
তবে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাহী সংসদের সভায় এ বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।
বৃহস্পতিবার (০২ মে) সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নে অনেকটা নমনীয় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি বলেছিলাম (মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকতে)। কারণ হচ্ছে, আমরা চাইছি, নির্বাচনটা প্রভাবমুক্ত যেন হয়, মানুষ যেন স্বাভাবিকভাবে ভোটটা দিতে পারে। সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।’
আরও পড়ুন: ভোটের মাঠেই রয়েছেন মন্ত্রী-এমপির স্বজন ও বিএনপির প্রার্থীরা
এসব কারণে অনেকের ধারণা, মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
নেওয়ার হুমকি ও হুঁশিয়ারি রাজনৈতিক কৌশল।
আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মূলত বিএনপি নির্বাচনে
আসবে না জেনেই নির্বাচনকে জমজমাট ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়ার
সিদ্ধান্ত দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচনে যদি মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন
ঢালাওভাবে অংশ নেয়, তবে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে একপেশে হয়ে যাবে—এমন আশঙ্কায়
তিনি ওই কৌশল নিয়েছিলেন।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন কালবেলাকে বলেন,
‘আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো বার্তা দিয়েই দিয়েছেন। তার বার্তা
অনুযায়ী নির্বাচন যে-ই করুক, কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন
কঠোর ভূমিকা পালন করবে। উপজেলা নির্বাচনে কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না, যেহেতু
দল কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’
প্রভাবশালী নেতা আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের স্বজনের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হাতেগোনা দু-একজন বাদে ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন এ ধরনের বেশিরভাগ প্রার্থী। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজন উপজেলায় ভোট করছেন, তৃণমূল পর্যন্ত অনেক নেতাকর্মীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার। তা সত্ত্বেও এ ইস্যুতে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মৌখিক বক্তৃতায় হুমকি-ধমকির মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমনকি দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।