নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ০৩ মে, ২০১৯
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে নাটকের পর নাটক চলছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বেগম খালেদা জিয়া অচিরেই মুক্তি পাচ্ছেন। মুক্তি পেয়ে তিনি সৌদি আরবে চিকিৎসার জন্য যাবেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ ব্যাপারে খুঁটিনাটি বিষয়গুলো ত্রিপাক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে চুড়ান্ত হচ্ছে। বেগম জিয়ার পরিবার, সরকারের প্রতিনিধি দল, এবং সৌদি দূতাবাস এই খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি তদারকি করছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৩৬ টি মামলা রয়েছে। মুক্তি পেতে হলে আরো ৪টি মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন পেতে হবে। এর মধ্যে জিয়া এতিম খানা মামলা উচ্চ আদালতে জামিনের অপেক্ষায় আছে। জিয়া এতিম খানা মামলায় জামিনের আবেদন করা হয়েছিল গত সপ্তাহে। তখন বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ বলেছিল নিম্ন আদালত থেকে তার নথি আসতে হবে। এর জন্য দুই মাস সময় বেধে দিয়েছে। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুকে কটুক্তি করার অভিযোগে এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে যে দুটি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন নেই, সেই মামলাগুলোও আইনী জটিলতায় আটকা পড়ে আছে। সহসা তার জামিন সম্ভব নয় বলে আইনজীবিরা মনে করছেন। কাজেই জামিন নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির সম্ভাবনা আপাতত নেই। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়া এবং তার পরিবার প্যারোল নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে আছেন। বেগম খালেদা জিয়া সকালে প্যারোলের পক্ষে বললেও বিকালে তিনি প্যারোলের বিরুদ্ধে অবস্থান করছেন। এর প্রধান কারণ হচ্ছে প্যারোলে আবেদন করতে হবে আসামীর নিজেকেই। তাকে অপরাধ স্বীকার করতে হবে। পরবর্তীতে এই মামলার আইনী লড়াইয়ের জন্য নেতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এ কারণেই প্যারোলটি অসম্মানজনক মনে করছেন বেগম জিয়া। যার কারণে বেগম জিয়ার প্যারোলে উৎসাহী নন। এর মধ্যে বেগম জিয়ার পরিবার খালেদা জিয়ার প্যারোল মুক্তির জন্য তৃতীয় একটি পথ খুঁজে পেয়েছে বলে জানা গেছে। সে পথটি হলো বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা একটি প্রতিবেদন দিবেন উন্নত চিতিৎসার জন্য। সেই প্রতিবেদনে যদি থাকে তার দেশের বাইরে চিকিৎসা প্রয়োজন। এই প্রতিবেদনের আলোকে হাইকোর্ট বা দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাকে জামিন দিতে পারেন।
চিকিৎসক দলের একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার যে অসুখ রয়েছে তা দীর্ঘমেয়াদি এবং ভিন্ন পরিবেশে তাঁর চিকিৎসা করা প্রয়োজন। এখানে তাঁরা খুব বেশী উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেন না বলেও তাঁরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। সবকিছু মিলিয়ে একটা বিষয়ে পরিষ্কার হয়েছে যে, বেগম খালেদা জিয়া হয়তো চিকিৎসকদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই আদালতের নির্দেশে মুক্তি পাবেন। সৌদি দূতাবাসের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছে যে, সৌদি দূতাবাস বেগম খালেদা জিয়াকে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার জন্য সৌদি আরবে নিয়ে যেতে চায়। বেগম জিয়া কি চিকিৎসার জন্য সৌদি আরবে যাচ্ছেন এ ব্যাপারে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় যে, সৌদি আরবে বিএনপির কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা গত কয়েকদিনে সৌদি আরবের কিং ফয়সাল ইন্সটিটিউট হাসপাতালে যোগাযোগ করছেন। উল্লেখ্য যে, বেগম খালেদা জিয়া এখানেই হার্টের অপারেশন করিয়েছিলেন। শেষপর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বেগম খালেদা জিয়া, ঈদের আগেই আদালতের নির্দেশে জামিন পেয়ে সৌদি আরবে চিকিৎসার জন্য যেতে পারেন বলে জানা গেছে।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন