নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ২৪ মে, ২০১৯
জাতির পিতাকে স্বীকৃতি দেওয়া সহ ১০টি মৌলিক বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে এখন বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। রাজনৈতিক সহ অবস্থান, গণতান্ত্রিক রীতি নীতির চর্চার জন্য বিএনপিকে ‘উপযুক্ত’ করতে ১০ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন। লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে এই দশ সংস্কার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এর ফলে বেগম জিয়ার কারামুক্তি, দেশে ফিরে তারেক জিয়ার রাজনীতি করা এবং রাজনৈতিক সহ-অবস্থান সম্ভব হবে বলে মনে করেন এই আইনজ্ঞ। সূত্রমতে, মৌলিক জাতীয় প্রশ্নে ঐক্যমত ছাড়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিহিংসা বন্ধ হবে না বলেও সুপারিশে বলেছেন ড. কামাল। তার মতে, রাজনীতিতে প্রতিহিংসা বন্ধ না হলে গণতান্ত্রিক চর্চাও হবে না। কোনো দল একবার ক্ষমতায় গেলে আর ক্ষমতা ছাড়তে চাইবে না। ক্ষমতায় থাকার জন্য নির্বাচনে কারচুপি করবে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করবে এবং এবং দলীয় অনুগত বানাবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের। একারণেই আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে এক ঐতিহাসিক সমঝোতা চুক্তি হওয়া প্রয়োজন বলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই নেতা মনে করেন। তবে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, এই সমঝোতা প্রস্তাব ড. কামাল হোসেনের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে। তিনি এটা নিয়ে প্রধান দুই দলের মধ্যে সমঝোতার কাজ করবেন বলেই ওই কূটনৈতিক সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছে। কি আছে সমঝোতা প্রস্তাবে:
১. বিএনপি বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে স্বীকৃতি দেবে এবং গঠনতন্ত্রে এর উল্লেখ থাকবে।
২. স্বাধীনতার ঘোষক বা এ জাতীয় কিছু থাকবে না। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা একজন সেক্টর কমান্ডার এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সকলের কাছে স্বীকৃত হবে।
৩. প্রয়াত কোনো নেতাকে নিয়ে কেউ কোনো কটূক্তি বা নেতিবাচক মন্তব্য করবে না।
৪. বিএনপি স্বাধীনতা বিরোধী এবং যুদ্ধাপরাধী কোনো ব্যক্তি বা দলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ঘোষণাকে পূর্ণ বাস্তবায়ন করবে।
৫. ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ঘটনার জন্য বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং দুঃখ প্রকাশ করবে।
৬. যুদ্ধাপরীদের পরিবারের কাউকে বিএনপি দলের নেতৃত্বে রাখবে না।
৭. কোনো দলই সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেবে না।
৮. রাজনৈতিক সমঝোতার অংশ হিসেবে সরকার বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করে নেবে। বেগম জিয়া মুক্তি পাবেন এবং তারেক জিয়া দেশে ফিরে আসবেন।
৯. রাজনীতিতে পারস্পরিক সহ অবস্থানের মাধ্যমে উভয় দেশ দেশের স্বার্থে দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করবে।
১০. তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নয়, বরং উভয় দল নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংহত করার জন্য কাজ করবে।
সূত্রমতে, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে থেকেই এই সমঝোতা প্রস্তাব নিয়ে কাজ করা হচ্ছিলো। এই সমঝোতার অংশ হিসেবেই বিএনপি নির্বাচনে গেছে এবং সংসদে শপথ নিয়েছে। এই সমঝোতার উদ্যোক্তারা বলছেন, প্রধান দুই দলের পারস্পরিক বিরোধ এবং প্রতিহিংসার মনোবৃত্তি বন্ধ না হলে বাংলাদেশের অর্জিত উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়বে।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়ার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তারেক জিয়া তার পছন্দের ব্যক্তিদেরকে দলে রাখছেন। অপছন্দের ব্যক্তিদেরকে দল থেকে বের করে দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে এবং এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা দলের ভিতরে চলছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং কোন্দল।
সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন নির্বাচিত হয়েছিলেন। দল তাকে আদেশ করেছিল দায়িত্ব গ্রহণ না করার জন্য। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির পদটি গ্রহণ করেন। আর তার এই পদ গ্রহণের কারণে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম তাকে অব্যাহতি দিয়েছিল। কিন্তু এই অব্যাহতি শেষ পর্যন্ত টেকেনি। এখন তাকে দলে রাখার সিদ্ধান্ত যেমন নেওয়া হয়েছে, তেমনই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তারেক জিয়ার এই সিদ্ধান্তে বিএনপির আইনজীবীদের একাংশ যারা মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিরুদ্ধে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে। বিশেষ করে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আলীসহ সিনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, তারেক জিয়ার নির্দেশেই তারা খোকনের ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আবার তারেক জিয়াই তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেন। মাঝখান থেকে তারেক জিয়া তাদেরকে অসম্মান করবেন বলেও এই সিনিয়র আইনজীবী মনে করেন।
তারেক জিয়ার পরামর্শেই তারা মাহবুব উদ্দিন খোকনকে দায়িত্ব না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারেক জিয়াই এখন মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঙ্গে কথা বলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব পদে যেমন আছেন, তেমনই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদেও বহাল থাকছেন।
বিএনপির মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে মাহবুব উদ্দিন খোকন যদি নির্বাচন করে এবং জিতে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে তাহলে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীরা কী দোষ করল? বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত হল বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। আর এই ধারাবাহিকতায় বিএনপির বিভিন্ন পেশাজীবীদের নির্বাচনও বর্জন করছে। এর আগে বিএনপি নিয়ন্ত্রিত ড্যাব চিকিৎসকদের বিএমএ নির্বাচনও বর্জন করেছিল।
প্রকৌশলীদের নির্বাচনেও বিএনপি সরে গিয়েছিল। আর এরকম একটি পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কেন বিএনপি অংশগ্রহণ করল? সেটি যেমন একটি বড় প্রশ্ন, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হল যে- একই সিদ্ধান্ত একেক জনের ব্যাপারে এক রকম হবে কেন? এ নিয়ে বিএনপির নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন?
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ দলের কিছু বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদেরকে বলেছেন, এই সমস্ত কীভাবে হচ্ছে আমি জানি না। আপনাদের যদি কোনও কিছু বলার থাকে আপনারা লন্ডনে যোগাযোগ করেন। এখন বিএনপিতে কেউ দায় নিতে চাচ্ছে না। কেউ জানছেও না যে কাকে কখন কীভাবে বহিষ্কার করা হচ্ছে। যার ফলে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে দলটির মধ্যে।
উপজেলা নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করেছেন সে রকম ৭৩ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, উপজেলা নির্বাচন বা স্থানীয় সরকার নির্বাচন একটি নির্দলীয় ধরনের নির্বাচন। এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক তারা ব্যবহার করবে না।
অনেক বিএনপি নেতা মনে করেন যে, দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তটাই সঠিক ছিল। কিন্তু কেউ যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে সেটি তার নিজস্ব ব্যাপার। এ জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা বাঞ্ছনীয় নয় বলেই বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা মনে করেন। আর একারণেই বিএনপির সব নেতারাই হাল ছেড়ে দিয়েছেন এবং তারা এখন তিক্ত-বিরক্তও বটে।
বিএনপি রাজনীতি মির্জা ফখরুল তারেক জিয়া ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির সভা উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়ার একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তারেক জিয়া তার পছন্দের ব্যক্তিদেরকে দলে রাখছেন। অপছন্দের ব্যক্তিদেরকে দল থেকে বের করে দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখানো হচ্ছে এবং এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা দলের ভিতরে চলছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ এবং কোন্দল।