নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২৮ মে, ২০১৯
আওয়ামী লীগের এবারের কাউন্সিল নানা দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। এই কাউন্সিল এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজত জয়ন্তী উদযাপিত হবে। এই কাউন্সিলের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তার নেতৃত্বের বাক পরিবর্তনের রেখা চিহ্ন একে দিতে চায়। এই কাউন্সিলের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে প্রবীনদের বদলে তরুণ নেতৃত্ব স্থলাভিষিক্ত হবে। এই কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে যদিও মূল নেতৃত্বের পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম এবং আওয়ামী লীগের মূল নেতৃত্বে তারুণ্যের জয়োধ্বনি শোনা যাবে বলেই আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক মহল থেকে আভাস পাওয়া গেছে। এবারের কাউন্সিলে আওয়ামী লীগে যে পরিবর্তনের ইঙ্গিত করা হয়েছে, তার একটি বড় দিক হলো দলের হেভিওয়েটরা কাউন্সিলের মাধ্যমে অবসরে যেতে পারে। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, বেগম মতিয়া চৌধুরীরা এবার কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে অবসরে যেতে পারে। যদিও তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু এখন উপদেষ্টা মণ্ডলীতে আছে এবং অন্যদিকে বেগম সাজেদা চৌধুরী এবং মতিয়া চৌধুরী, দুজনেই প্রেসিডিয়ামে আছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের ভিতরকার খবর হলো যে, উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য থাকতে চান না তোফায়েল আহমেদ ও আমির হোসেন আমু। বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকীতে তারা রাজনীতি থেকে অবসর নিতে পারেন। শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়, আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট অনেক নেতাই অবসরের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। তারা তাদের নিকটজনদের বলছেন, মেঘে মেঘে বেলা অনেক হয়েছে। রাজনীতিতে এখন অবসর গ্রহণ করাই উত্তম। তবে এর পেছনে কোন অভিমান আছে কিনা তা অবশ্য স্পষ্ট নয়, তা জানা যায়নি। তবে অভিমান থাকুক বা না থাকুক, ইতিমধ্যেই তাদের মূলে আওয়ামী লীগের অবস্থান নড়বড়ে হয়ে গেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, এই কাউন্সিলের মাধ্যমে তারা আওয়ামী লীগের মূল নেতৃত্ব থেকে সরে যাবেন এবং রাজনীতিতে তাদের অবসর গ্রহণ চুড়ান্ত হবে। তোফায়েল আহমেদ এবং আমির হোসেন আমু তো উপদেষ্টা মণ্ডলীতে আধা অবসর হয়ে আছেন। কিন্তু বেগম সাজেদা চৌধুরী এবং বেগম মতিয়া চৌধুরী, দুজনেই আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে আছেন। বেগম মতিয়া চৌধুরী শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ। তার এবার নির্বাচন করারই কথা ছিল না। শেষ পর্যন্ত তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, সংসদে উপনেতাও হয়েছেন। কিন্তু শরীরের সঙ্গে যুদ্ধ করেই তিনি সময় কাটাচ্ছেন। কাজেই নতুন আওয়ামী লীগের যে যাত্রাপথ, তাতে তরুণদের জয়োধ্বনি হবে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রে এ পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে প্রবীণদের বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত তরুণদের প্রেসিডিয়ামে আনা হবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগে যারা যুগ্ন সম্পাদক আছেন, তাদের মধ্য থেকে কাউকে প্রেসিডিয়ামে আনা হবে। এ দুজনকে উপদেষ্টা মণ্ডলীতে স্থানান্তর করা হবে। উপদেষ্টা মণ্ডলীতে স্থানান্তর করা হলে তারা এক ধরনের অবসরে চলে যাবেন, পরের নির্বাচনে যে তারা অংশগ্রহণ করবে না এটা মোটামুটি নিশ্চিত। অর্থ্যাৎ এবারের কাউন্সিলের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে একটা অবসরের মিছিল হবে। শুধু এই হেভিওয়েট নেতারা নন, বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামে ছিলেন এমন অনেক সিনিয়র নেতাও এবার কাউন্সিলের মাধ্যমে অবসরে যাবেন বলে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মহল থেকে ইঙ্গিত করছে। কাজেই অক্টোবরে এবার আওয়ামী লীগের যে কাউন্সিল সেই কাউন্সিলে অনেকে অবসর গ্রহণের জোয়ার হিসেবেও চিহ্নিত করছেন।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন