নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ০৩ জুন, ২০১৯
আটত্রিশ বছর ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এই ৩৮ বছর কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না, নানা ঝঞ্জাট, বিক্ষুদ্ধতা ও প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে তাকে এই সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। আজকে যেমন তিনি দলের সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী। তার কথাই দলের শেষ কথা। সেরকম পরিস্থিতি কিছুদিন আগেও ছিল না। একটা দলের ভিতরে এবং বাইরে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই আজকের অবস্থানে আসতে হয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতিকে। আওয়ামী লীগ সভাপতি তার রাজনীতির ৩৮ বছরের বিভিন্ন সময় দল ছেড়ে দেওয়া, রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া এবং অবসর গ্রহণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু একটা পরিকল্পনাও তার কার্যকর হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে তার ভেস্তে যাওয়া যে উল্লেখযোগ্য অবসর পরিকল্পনা। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় ছিল একরকম নিশ্চিত। কিন্তু সেই নির্বাচনে সবাইকে অবাক করে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হয়। অবিশ্বাস্যভাবে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। বিএনপি-জামাত জোট হয়ে সরকার গঠন করে। এই নির্বাচনের পর দলের ভিতর তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। দলের মধ্যে একটি অংশ দাবি করে যে, নির্বাচনের পরাজয়ের গ্লানি মাথায় নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির পদত্যাগ করা উচিত। সেই প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি পদত্যাগের ইচ্ছে প্রকাশ করেন। পদত্যাগের ঘোষণাও দিয়েছিলেন তখন। কিন্তু তৃনমূলের নেতাকর্মীদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে তার সেই অবসর পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
২. ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন যে, ৫৯ বছর বয়সে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নিবেন। কিন্তু পরে দলীয় নেতাকর্মীর আপত্তি এবং তীব্র প্রতিবাদের মুখে তার সেই উদ্যোগও ভেস্তে যায়। অবশ্য ওয়ান ইলেভেনের সময় যখন তাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার পরিকল্পনা নেওয়া হয় এবং দলের মধ্য থেকে যখন সংস্কারপন্থীরা তাকে সভাপতির পদ তাকে ছাড়ার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করে তখন তিনি বলেছিলেন যে, ৫৯ বছর বয়সে যে ঘোষণা তিনি দিয়েছিলেন তা তিনি প্রত্যাহার করেছেন।
৩. ওয়ান ইলেভেনের সময় যখন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে কারাগারে বন্দি করা হয়, সেই সময় তার বিরুদ্ধে যখন দলের একটা অংশ তাকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়, সেই সময় তিনি রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের তৃনমূলের নেতাকর্মীরা যদি না চায় তাহলে তিনি একদিনও রাজনীতি করতে চান না। এই সময় তিনি বলেছিলেন, নেতাকর্মীরা না চাইলে তিনি অবসরে চলে যাবেন। কিন্তু এই সময় তৃনমূলের প্রবল আপত্তির মুখে তার অবসরের ঘোষণা ভেস্তে যায়।
সর্বশেষ তিনি অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন, এ বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচিত হওয়ার পর। তবে তিনি রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা এবার দেননি। তিনি বলেছেন, আর তিনি প্রধানমন্ত্রীত্ব নিবেন না। প্রধানমন্ত্রীত্ব না নিলেই যে তিনি রাজনীতি থেকে অবসরে যাবেন এমনটা মনে করার কারণ নেই। তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ফোরামের সভায় তিনি বলছেন, ৩৮ বছর ধরে আমি একটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছি। এটা একটু বেশিই। আমি এখন সরে যেতে চাই। তবে তিনি এটাও নেতাকর্মীদের বলেছেন, তিনি সরে গেলেও দলের সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকবে। আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবেই তিনি অবসর জীবন যাপন করবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের তৃনমূলের কেউই তার অবসর যাওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে রাজি নন। শেখ হাসিনাকে তাকে প্রচণ্ড পছন্দ করেন, ভালোবাসেন কিন্তু তারপরও এই একটি বিষয়ে শেখ হাসিনার মুখোমুখি অবস্থানে আওয়ামী লীগের তৃনমূল। তারা মনে করে যে, শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগ অচল। এজন্য তার অবসর পরিকল্পনাগুলো বারবার ভেস্তে যায়। এবারও তার অবসর পরিকল্পনা নিয়ে আওয়ামী লীগের আসন্ন কাউন্সিল অধিবেশনে বড় রকমের একটা শো ডাউন করবে তৃনমূলের নেতাকর্মীরা। এটাই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।