ইনসাইড পলিটিক্স

কেন কঠোর শেখ হাসিনা?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭:০১ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯


Thumbnail

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তার দলের ভিতর শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। টানা দশ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগে দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, ক্যাডার এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন তিনি।

গত শনিবার তিনি এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিলেন দলের কার্যনির্বাহী সভায়। দলের সভায় তিনি কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের সামনে বলেছিলেন, আমার দলে কোন সন্ত্রাসী- ক্যাডার দরকার নেই। দলের ছত্রছায়ায় যারা অপকর্ম করবে তাদের প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। শেখ হাসিনা যা বলেন সেটা যে করেন তা আরেকবার প্রমাণ করলেন। শেখ হাসিনার বক্তব্যের ৭২ ঘন্টার মধ্যে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ঢাকায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাকর্মীদের তত্বাবধানে পরিচালিত ক্যাসিনোগুলোতে সাড়াশি অভিযান শুরু করে। একদিনের অভিযানেই ঢাকা শহরের সব অবৈধ ক্যাসিনো বন্ধ হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে ৪টি ক্যাসিনোতে সিলগালা লাগিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, শুধুমাত্র ক্যাসিনো বন্ধই নয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কাছে ৫ শতাধিক ব্যক্তির একটি তালিকা হাতে এসে পৌঁছেছে যারা চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন।

রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন প্রশ্ন, কেন শেখ হাসিনা এই কঠোর অবস্থানে গেলেন? হঠাৎ কেন তিনি দলের ভিতর শুদ্ধি অভিযান শুরু করলেন? অনেকেই মনে করছে যে, এর ফলে আওয়ামী লীগের মধ্যে ভুল বার্তা যাবে। বিরোধী দল আঙ্গুল তোলার সুযোগ পাবে। আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় যতদিন ধরে অনিয়ম চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস হয়েছে সেটা বলার একটা প্ল্যাটফর্ম পাবে বিরোধী দলগুলো। কিন্তু এর বিপরীত মতামতও রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছে, এর মাধ্যমে শেখ হাসিনা নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা আরো বাড়বে। সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করবে শেখ হাসিনা যতক্ষণ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছে ততক্ষণ তিনি দেশের মঙ্গল কামনা করবেন। জনগনের পাশে থাকবেন তিনি। এটা টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের জন্য একটা বড় প্লাস পয়েন্ট হিসেবে দাঁড়াবে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এই মতবিরোধের আড়ালে আমরা বুঝতে পারি শেখ হাসিনা কেন হঠাৎ করে এত কঠোর হলেন। কি কারণে তিনি দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করলেন। এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে বাংলা ইনসাইডারের অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে কয়েকটি কারণ। এর মধ্যে রয়েছে-

১. গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সতর্কবার্তা: বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দলের বিভিন্ন নেতাকর্মী, সহযোগি ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীদের লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করেছেন। শুধু সতর্কই করেননি, বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে যারা বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করছে সেই সমস্ত অপকর্মের তথ্য প্রমাণ প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেছে। তথ্য প্রমাণ এবং ছবি সম্বলিত এসব প্রতিবেদনে শেখ হাসিনা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং তিনি মনে করছেন ‘এনাফ ইজ এনাফ’। এসব অপকর্ম আর বাড়তে দেওয়া যায়না। এসব অপকর্ম আর বাড়তে দেয়া যায়না। এসব যদি বাড়তে দেওয়া হয় তাহলে তারা লাগামহীন হয়ে পড়বে। এর ফলে আওয়ামী লীগ জনগণের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াবে। একারণেই তিনি কঠোর অবস্থানে গেছেন।

২. নিজস্ব নেটওয়ার্কের পাওয়া তথ্য: শুধু গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের উপর নির্ভর করে চলার মানুষ শেখ হাসিনা নন। টানা তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করা আওয়ামী লীগ সভাপতির রয়েছে নিজস্ব টীম। যাদের কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই, তাদের নেটওয়ার্ক সারা দেশব্যাপী বিস্তৃত। শেখ হাসিনার নিজস্ব টীম সারাদেশ থেকে যে রিপোর্ট পাঠাচ্ছিল সে রিপোর্টও প্রধানমন্ত্রীর জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল না। এই রিপোর্টে দেখা যায় তৃতীয়বারের মত ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীই মনে করছে যে, এটাই শেষবারের মত ক্ষমতা। আমরা যা ইচ্ছা তাই করে নেই। এরকম মনোভাব দলের জন্য এবং দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। গোয়েন্দা সংস্থা এবং নিজস্ব নেটওয়ার্কের মধ্যে অদ্ভুত মিল পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে কারণে তিনি মনে করছেন, এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখনই সময়। সরকারের মেয়াদ এখনও একবছর পূর্ণ হয়নি। এখন এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে দল গুছানো অত্যন্ত সহজ হবে। যে কারণে তিনি এ ব্যবস্থা গ্রহণে কার্পণ্য করেননি।

৩. আওয়ামী লীগের নিম্নগামী ইমেজ: ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর থেকেই একের পর এক ইস্যুতে জর্জরিত আওয়ামী লীগ। নানা কারণে আওয়ামী লীগকে নিয়ে জনমনে অস্বস্তি বাড়ছে। দ্রব্যমুল্যের উর্ধগতি, ডেঙ্গু জ্বর, প্রিয়া সাহার ঘটনা, গুজব সন্ত্রাস ইত্যাদি নিয়ে এক বছর যেতে না যেতেই তৃতীয়বারের মত ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ ব্যাকফুটে গেছে। এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের নিম্নগামী ইমেজ উদ্ধারের জন্য শেখ হাসিনার কঠোর হওয়ার বিকল্প ছিল না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন যে, একমাত্র শেখ হাসিনার ইমেজ ছাড়া আওয়ামী লীগের অন্যান্য অত্যন্ত খারাপ। এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, শেখ হাসিনা এখন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয়তম ব্যক্তি। তাঁর ইমেজেই আওয়ামী লীগ চলছে। একারনেই আওয়ামী লীগের ইমেজ পুনরুদ্ধারের জন্য এরকম কঠোর অবস্থানের বিকল্প ছিল না বলেই মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

৪. দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চান: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয়বার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি আর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না। সেই হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটাই তাঁর শেষ মেয়াদ। তাই তিনি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চান যেন দেশের জনগণ তাকে মনে রাখে। ইতিমধ্যে তিনি বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়েছেন। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন, অগ্রগতিগুলো সারাবিশ্বের মানুষের কাছে একটা দৃষ্টান্ত। আর এজন্যই শেখ হাসিনা চান না যে সব উন্নয়ন দুর্নীতি এবং অপকর্ম খেয়ে নিক। এজন্যই তিনি যে দলের উর্ধ্বে, সবার আগে যে দেশ এবং জনগন এই দৃষ্টান্ত যে তিনি স্থাপন করতে চান এবং এজন্যই তিনি এই কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন।

৫. বিরোধী দলকে কোণঠাসা করা: কিছুদিন ধরেই রাজনীতিতে বিরোধী দলগুলো নতুন করে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন বা বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার কৌশল খুঁজছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দলের শুদ্ধি অভিযানের ঘোষণা দিয়ে বিরোধীদলকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছেন। এর ফলে জনগণের কাছে শেখ হাসিনার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়েছে। বিরোধী দল শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করছে। শেখ হাসিনা দেশের মানুষের কথা চিন্তা করছেন। দেশের উন্নয়নের কথা চিন্তা করছেন। এজন্য তিনি দলের মধ্যেও শুদ্ধি অভিযান করতে কার্পণ্য করছেন না। এই বার্তাটা স্পষ্ট হয়ে গেছে। যার ফলে বিরোধী দলের আন্দোলন হালে পানি পাবে না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

শেখ হাসিনার এই কঠোর অবস্থান দলের মধ্যে অস্বস্তি তৈরী করলেও দেশের মানুষের মধ্যে একটি স্বস্তি এবং প্রশংসা কুড়াচ্ছে। আর এটাই হলো শেখ হাসিনার রাজনীতি। তিনি ক্ষুদ্র স্বার্থের বদলে বৃহত্তর স্বার্থকেই যে সবসময় বড় করে দেখেন এই ঘটনার মাধ্যম তিনি সেটাই প্রমাণ করেছেন।

বাংলা ইনসাইডার



মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

ফিরোজায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া

প্রকাশ: ০৯:০৬ পিএম, ০২ মে, ২০২৪


Thumbnail

জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের ফিরোজায় ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

বৃহস্পতিবার (২ মে) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার।

এর আগে, বুধবার খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন।

৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, হৃদ্‌রোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন।

সবশেষ ৩০ মার্চ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। তিনদিন পর তিনি বাসায় ফেরেন।

ফিরোজা   খালেদা জিয়া  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

প্রচণ্ড তাপদাহে ১৪ দলে স্বস্তির বৃষ্টি

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ০২ মে, ২০২৪


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ আনুষ্ঠানিকভাবে জানালেন যে, ১৪ দল বিলুপ্ত হয়নি, ১৪ দল আছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি সাফ জানিয়ে দিলেন, খুব শীঘ্রই তিনি ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। 

প্রধানমন্ত্রী এটিও বলেছেন যে, ১৪ নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে। ১৪ দলের সমন্বয়ক নিয়মিত ১৪ দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এছাড়াও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও ১৪ দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। 

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য ১৪ দলের নেতাদেরকে উল্লসিত করেছে। তীব্র তাপদাহে যেন তাদের কাছে এক স্বস্তির বৃষ্টি। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ১৪ দলের শরিকরা এতিম হয়ে পড়েছিল। তারা কোথাও পাত্তা পাচ্ছিল না। মন্ত্রিসভাতে যেমন ১৪ দলের কাউকে রাখা হয়নি, ঠিক তেমনই সংরক্ষিত নারী আসনে যে ৪৮ জনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সেখানও ১৪ দলের কোন প্রতিনিধিকে রাখা হয়নি। ১৪ দলের নেতাদের এ বার নির্বাচনে বড় ধরনের ভরাডুবি ঘটেছে। হাসানুল হক ইনু, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ফজলে হোসেন বাদশার মতো ১৪ দলের হেভিওয়েট নেতারা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন। এরপর ১৪ দলের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ১৪ দলের নেতারা সেই সময় থেকেই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও তারা দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেননি। এর মধ্যে ১৪ দলের বৈঠক নিয়ে কিছু কথাবার্তা হলেও শরিকরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং ১৪ দলের অন্তত তিনজন নেতা গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে সংশয় প্রকাশ করে বলেছিলেন যে, ১৪ দল শেষ পর্যন্ত থাকবে কি না তা নিয়ে তারা শঙ্কিত।

২০০১ সালে নির্বাচনের বিপর্যয়ের পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আওয়ামী লীগ এই ১৪ দলীয় জোট গঠন করেছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের ভূমিধ্বস বিজয়ের পর ১৪ দলের সদস্যদেরকে মন্ত্রিসভায় রাখা হয়েছিল। সেই সময় দিলীপ বড়ুয়া মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে গঠিত মন্ত্রিসভাতেও ১৪ দলের নেতা রাশেদ খান মেনন এবং হাসানুল হক ইনুকে রাখা হয়েছিল। এরপর থেকেই ১৪ দলের শরিকদেরকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হয়। 

এবার নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তিক্ততা সৃষ্টি হয় এবং তিক্ত অবস্থা রেখেই আওয়ামী লীগ ১৪ দলের শরিকদের জন্য মাত্র ৬টি আসন দেয়। শেষপর্যন্ত জোটের স্বার্থে ১৪ দল নির্বাচনে ওই কয়েকটি আসন নিয়ে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু সেখানে ১৪ দলের অধিকাংশ নেতার বিপুল ভরাডুবি হয়। বিশেষ করে হাসানুল হক ইনু, ফজলে হোসেন বাদশা এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর বিপর্যয় ১৪ দলকে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেয়। এমনকি শিরীন আখতারকে পরবর্তীতে সংরক্ষিত আসনের এমপি করা হবে- এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল বলেও জাসদের নেতারা দাবি করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিরীন আখতারও সংরক্ষিত কোটায় এমপি হতে পারেননি। এরকম অবস্থায় ১৪ দলের মধ্যে চাপা ক্ষোভ, অসন্তোষ এবং হতাশা ছিল দৃশ্যমান। কিন্তু আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করলেন যে, তিনি ১৪ দলের সঙ্গে বসবেন। 

তিনি বলেছেন, কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে বৈঠক করার পর তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর তিনি ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ১৪ দলের এই বৈঠকের নেতাদেরকে উল্লসিত করেছে। তারা এখন আশায় বুক বেঁধে আছেন। 

১৪ দলের নেতারা আসলে কর্মীহীন, অস্তিত্বের সংকটে ভুগছেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে লতাপাতার মতো জড়িয়ে থেকে তারা কোন রকম অস্তিত্ব রক্ষা করতে চেষ্টা করছেন। এখন তিনি আওয়ামী লীগ যদি তাদের থেকে ছাতা সরিয়ে নেয় তাহলে এই দলগুলো মৃত্যু ঘটবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি আজ তাদেরকে জীবিত করার যেন মহৌষধ দিলেন।

১৪ দল   আওয়ামী লীগ   প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

কমে গেল কাদেরের দাপট?

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ০২ মে, ২০২৪


Thumbnail

ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান এমন একজন নেতা যিনি ওবায়দুল কাদেরের এই সিদ্ধান্ত মানেননি। সিদ্ধান্ত না মেনে তিনি ধানমণ্ডি ৩ নম্বর কার্যালয়ে গিয়ে ওবায়দুল কাদেরের তোপের মুখে পড়েন। ওবায়দুল কাদের তাকে বলেন, আপনি তো দলের কোন সিদ্ধান্তই মানেন না। কিন্তু তার পরও শাজাহান খান তার ছেলেকে প্রার্থী হিসেবে রাখেন এবং দলের তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন আশঙ্কার মধ্যেই তিনি উপজেলা নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে শুরু করেন। কিন্তু আজ আওয়ামী লীগ সভাপতির সংবাদ সম্মেলনের পর দেখা গেল যে, ওবায়দুল কাদের যা বলেছেন এবং আওয়ামী লীগের যে সিদ্ধান্ত তার মধ্যে দুস্তর ফারাক রয়েছে। ওবায়দুল কাদের যেভাবে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন বাস্তবতা তা নয়। ওবায়দুল কাদের যত গর্জেছেন বাস্তবে আওয়ামী লীগ তত বর্ষেনি। আর একারণেই এখন ওবায়দুল কাদেরের কর্তৃত্ব নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।


এমনিতেই আওয়ামী লীগে বেশ কিছুদিন ধরে এক ধরনের বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির বাইরে অন্য কোন নেতার কথা তৃণমূলের আওয়ামী লীগ বা মাঠ পর্যায়ের নেতারা মোটেও কর্ণপাত করেন না। তাদেরকে খুব একটা আমলে নেন না। তারপরও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলে কথা। তিনি দলের দ্বিতীয় ক্ষমতাবান ব্যক্তি। সেই ক্ষমতাবান ব্যক্তি যখন বলছেন, সকলে ধরে নিয়েছিল যে, এটি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা এবং ওবায়দুল কাদের এটিকে শেখ হাসিনার নির্দেশনা বলেই অভিহিত করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলার পরে তিনি আওয়ামী লীগের নেতা একরামুল করিম চৌধুরী, শাজাহান খান এবং ড. রাজ্জাকের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন এবং তাদের স্বজনদেরকে প্রার্থিতা থেকে সরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু এই তিনজনের কেউই ওবায়দুল কাদেরের কথায় কর্ণপাত করেননি। 

ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশনা অমান্য করে তারা প্রার্থী হওয়ার পর এখন দেখা গেল যে, ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের অবস্থানই এখন আর সঠিক নেই। ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোন আলোচনাই হয়নি। অথচ ওবায়দুল কাদের একাধিক গণমাধ্যমে বলেছিলেন যে, ৩০ এপ্রিল যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু ৩০ এপ্রিল এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনাই হয়নি। তাহলে কী ওবায়দুল কাদের বাড়িয়ে বলেছেন? 


কেউ কেউ দাবি করেন, যেহেতু একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন সেহেতু ওবায়দুল কাদের বিষয়টিকে বড় করে দেখেছেন এবং তিনি নিজেই উপজেলা নির্বাচনের বিষয় নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। কারণ তার নির্বাচনী এলাকায় যদি একরামুল করিমের সন্তানও উপজেলা চেয়ারম্যান হয় তাহলে তার এলাকায় আধিপত্য কমে যাবে। আর একারণেই হয়তো তিনি বিষয়টিকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ করেছিলেন বলে অনেকে মনে করেন।

আজ আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্য থেকে স্পষ্টতই মনে হয় যেভাবে আওয়ামী লীগের নেতারা এই বিষয় নিয়ে গর্জে ছিলেন বাস্তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বিষয়টিকে অতটুকু গুরুত্বতর মনে করেন না। বরং তার প্রধান আগ্রহের ব্যাপার হলো উপজেলা নির্বাচন যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। আর এ কারণেই প্রশ্ন উঠেছে তাহলে ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনা সবসময় যা বলেন সেটিরই পুনঃউচ্চারণ করেন এই বক্তব্যটি ঠিক না। শেখ হাসিনা আত্নীয় স্বজনদের ব্যাপারে ওবায়দুল কাদেরের অবস্থানের সঙ্গে পুরোপুরি একই রকম বক্তব্য রাখেননি। আর এর ফলে ভবিষ্যতে ওবায়দুল কাদেরের হুশিয়ারি বা নির্দেশনা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কতটুকু শুনবে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে প্রশ্ন করেছেন তাহলে কী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দাপট কমে গেল?




ওবায়দুল কাদের   আওয়ামী লীগ   সাধারণ সম্পাদক  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপিতে কী ধর্মঘট চলছে?

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ০২ মে, ২০২৪


Thumbnail

বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না। 

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ সৌদি আরবে যাচ্ছেন ওমরা পালনের জন্য। অন্যান্য নেতারাও তীব্র গরমে বাসায় শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ বসে আছেন। কোন নেতাই কোন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না। একমাত্র আশার প্রদীপ হয়ে জ্বলে আছেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি সারাক্ষণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। কিন্তু রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্য এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে আর্তনাদের মতো শোনাচ্ছে।


বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রগুলো বলছে, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বিএনপির মধ্যে এখন এক ধরনের হতাশা দেখা দিয়েছে এবং এই হতাশার কারণে বিএনপির সিনিয়র নেতারা এখন বিরক্ত। 

বিএনপির বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, মূলত তারেক জিয়ার খাম খেয়ালিপনা এবং স্ব-বিরোধী সিদ্ধান্তের জন্যই বিএনপি নেতারা বিরক্ত এবং নিজেদের হাত পা গুটিয়ে বসে আছেন। 


বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন যে, আমাদের কোন ক্ষমতা নেই। সিদ্ধান্ত তিনি নিচ্ছেন, তিনি আমাদেরকে জানাচ্ছেন। কাজেই আমরা কী করব? স্থায়ী কমিটির আসলে কোন কাজ নেই। স্থায়ী কমিটিতে দূরের কথা, কেন্দ্রীয় কমিটিতেও কোন কাজ নেই। 

তিনি বলেন, বিএনপির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে উপজেলা নির্বাচনে তারা বর্জন করবে। কিন্তু যারা উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র অংশগ্রহণ করছে তাদের বহিষ্কারের ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করার কথা ছিল সেই প্রক্রিয়ার কোনটাই অনুসরণ করা হয়নি। তাদেরকে কোনো কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়নি, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। এমনকি এমন অন্তত ৫ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে যারা কাগজে কলমে বিএনপিও করে না। বিএনপি শুভাকাঙ্খী হিসেবে, বিএনপির সমর্থক হিসেবে  তারা পরিচিত। এই যদি হয় দলের অবস্থা তাহলে সেই দলে যে কোন কথা বলে বিপদ বলে মনে করেন ওই স্থায়ী কমিটির সদস্য। 

এরকম কথাবার্তা শোনা যায়, বিএনপির বিভিন্ন নেতাদের মুখে। বিএনপির আন্দোলনের কর্মসূচি এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নতুন করে আন্দোলন শুরু করার কথা বলেছেন, বারবার তাগাদা দিচ্ছেন। কিন্তু এ নিয়ে উদ্যোগ নিচ্ছেন না কোন বিএনপির সদস্যরা। 


বিএনপির স্থায়ী কমিটির একটি বড় অংশ অসুস্থ অথবা অকার্যকর। স্থায়ী কমিটির পুনর্গঠনের জন্য বলা হয়েছিল দু মাস আগে। তারেক জিয়া তখন নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, স্থায়ী কমিটিতে ৫ জন সদস্য নিয়োগ দেয়া হবে। তিনি ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত ঐ বৈঠকে ঘোষণা করেছিলেন যে, এক মাসের মধ্যে স্থায়ী কমিটির শূণ্যপদ পূরণ করা হবে। কিন্তু ২ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও স্থায়ী কমিটির ঐ শূণ্যপদগুলো পূরণ করা হয়নি। বিএনপিতে কাউন্সিল অনুষ্ঠানের কথা ছিলো, সে কাউন্সিল নিয়েও তারেক জিয়া কোন রকম সিদ্ধান্ত দেননি। ফলে দলের নেতাকর্মীরা এখন গা ছেড়ে দিয়েছেন। 

বিএনপির একজন নেতা বলছেন যে, বিএনপিতে এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার এখন কারও নেই। যার কারণে সিদ্ধান্ত যদি না দিতে পারা যায়, তাহলে দলের হাল ধরাও কঠিন। আর তাই বিএনপি নেতারা হালও ধরছেন না সিদ্ধান্তও দিচ্ছেন না। তারা এক ধরনের অঘোষিত ধর্মঘটে আছেন।  


বিএনপি   ধর্মঘট   রাজনীতির খবর   তারেক জিয়া  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

কেন পিছু হঠল আওয়ামী লীগ

প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ০২ মে, ২০২৪


Thumbnail

মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে না- এই অবস্থান থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পিছু হঠেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থাৎ নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তাদের আপাতত কিছু হচ্ছে না। অথচ ক’দিন আগেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বারবার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন এবং যারা এই দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তাদের ব্যাপারে নমনীয় মনে হয়েছে। 

প্রশ্ন উঠল, আওয়ামী লীগ কেন তারা অবস্থান থেকে সরে এলো বা কেন আওয়ামী লীগ আত্মীয় স্বজনদের প্রার্থী করার বিষয়টি নিয়ে পিছু হঠল।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র এ ব্যাপারে একেক রকম মতামত দিয়েছে। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি কখনোই আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না- এ ধরনের মনোভাব পোষণ করেননি বা সরাসরি এ ধরনের কথা বলেননি। তার বক্তব্য হয়তো আওয়ামী লীগের অনেকেই বুঝতে পারেননি এবং বোঝার চেষ্টা করেননি। শেখ হাসিনা কী বলতে চান তা আজ সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট করেছেন। 

তিনি বলেছেন, যারা মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্যদের কথা। পরিবারের সদস্য বলতে তিনি সন্তান, স্ত্রী এবং পরিবারের মূল ব্যক্তিকে বুঝিয়েছেন। অন্য আত্মীয়দেরকে বোঝাননি। এখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের হয়তো বুঝতে ভুল হয়েছে। 

দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগ সভাপতি তাদেরকে নির্বাচন করা যাবে না এমনটা বলেননি, বরং তিনি বলেছেন যে, তারা যেন তৃণমূলের অন্যান্য নেতাকর্মীদেরকেও সুযোগ দেয়। সবকিছু যেন তারা দখল করে না নেয়। 

তৃতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যারা বিভিন্ন পদ পদবীতে আছেন বা নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসাবে ইতোমধ্যে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা নির্বাচন করবে না কেন? অর্থাৎ যারা বিভিন্ন দায়িত্বে আছেন উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে, পৌরসভার মেয়র হিসেবে বা আওয়ামী লীগের কোনো কমিটিতে অর্থাৎ আগে থেকে রাজনীতি করছেন তারা নির্বাচন করলে কোনো বাধা নেই। অর্থাৎ ড. রাজ্জাক বা শাজাহান খানের তার ছেলে বা ভাই নির্বাচন করলে সেটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না। 

আওয়ামী লীগ সভাপতি সুস্পষ্ট ভাবে কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল না, মন্ত্রী-এমপি হওয়ার সুবাদে ছেলে বা স্ত্রীকে রাজনীতিতে টেনে আনায় আনা হয়েছে এবং এলাকায় দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য এরকম ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। এরকম ব্যক্তির সংখ্যা খুবই কম। আওয়ামী লীগ সভাপতি আজ সংবাদ সম্মেলনেও সাংবাদিকদের কাছে জানতে চাইছেন এই সংখ্যা কত জন। ওই সাংবাদিক বলেছেন, জনা পঞ্চাশেক হবে। তিনি বলেছেন, এই সংখ্যা খুব কম নয়। 

তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার কারণে এলাকায় এক ধরনের উত্তেজনা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়েছে। একদিকে মন্ত্রী-এমপিদের প্রার্থী এবং অন্যদিকে মন্ত্রী-এমপিদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে তৃণমূলের ঐক্য। সব কিছু মিলিয়ে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আর প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন মানেই হলো ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধি। আর সেই ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্যই প্রধানমন্ত্রী হয়তো তার কৌশলের ব্যাখ্যা দিলেন। আসলে আওয়ামী লীগের পিছু হঠা নয়, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান লক্ষ্য একটাই। নির্বাচন যেন অর্থপূর্ণ হয়, ভোটার উপস্থিতি যেন বাড়ে। আর সে কারণেই আপাতত নির্দেশ অমান্যকারীদেরকে স্বাগত জানাচ্ছে আওয়ামী লীগ। যেমন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে স্বতন্ত্রদের স্বাগত জানিয়েছিল।

আওয়ামী লীগ   উপজেলা নির্বাচন   কার্যনির্বাহী কমিটি   ওবায়দুল কাদের   রাজনীতির খবর  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন